ফ্যাসিস্টের দোসররা আন্দোলনে ঢুকে পড়ছে - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফ্যাসিস্টের দোসররা আন্দোলনে ঢুকে পড়ছে


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : এবার কর ও কাস্টমস ক্যাডার কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে পড়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসররা। চক্রটি ন্যায়সঙ্গত ও যৌক্তিক আন্দোলন কর্মসূচিকে পুঁজি করে সরকারের রাজস্ব আয় ক্ষতিগ্রস্ত করার চক্রান্ত করছে। দাবি আদায় প্রশ্নে তারা সঠিক অবস্থান না নিয়ে সরকারের রাজস্ব আদায়ের পথে বাধা তৈরি করতে উসকানিও দিচ্ছে।এ চক্রের হোতা সাবেক কর কমিশনার একেএম বোরহান উদ্দিন আওয়ামী আমলে প্রকাশ্যে দলবাজি করেছেন। গোপালগঞ্জের বোরহানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এতদিন আড়ালে থাকলেও এখন তিনি গর্ত থেকে বের হয়ে ফণা তোলার চেষ্টা করছেন। তার নেতৃত্বে আওয়ামী দোসরদের একটি গ্রুপ সম্প্রতি মাঠে নেমেছে। এ গ্রুপের সদস্যরা আওয়ামী জামানায় প্রথম সারির দলবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা হিসাবে চিহ্নিত। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অবসরে গেলেও কর্মরতরা সুযোগের অপেক্ষায় ঘাপটি মেরে আছেন। একাধিক সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।এদিকে এনবিআর ভেঙে সৃষ্টি হতে যাওয়া দুই বিভাগের দুটি সিনিয়র সচিবের পদ ন্যায্যতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কর ও কাস্টমস ক্যাডারের প্রাপ্য। এজন্য লাইনপোস্টের শীর্ষ পদ হিসাবে পদ দুটি সংরক্ষণ করার দাবিতে কর ও কাস্টমস ক্যাডার কর্মকর্তাদের দুটি অ্যাসোসিয়েশন অনড় রয়েছে। ইতোমধ্যে বিসিএস কাস্টমস ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন জরুরি সাধারণ সভা করেছে। শনিবার বিকালে এনবিআর ভবনে বিসিএস কর ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের জরুরি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। চলমান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, এনবিআর ভবনে বুধবার সন্ধ্যার জরুরি বৈঠকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কয়েকজন দোসর ঢুকে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা ছাড়াও আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অপচেষ্টা করেন। ক্ষুব্ধ সাধারণ কর্মকর্তারা সেটি তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিহত করেন। তাই আমরা এ ব্যাপারে সজাগ ও সচেতন আছি। তাদের কেউ আমাদের কোনো কর্মসূচিতে আর আসতে পারবে না। বরং তাদের দেখামাত্র পুলিশে খবর দেওয়া হবে। ৫ আগস্টের পর থেকে তারা কখনো আনসার লীগ, কখনো রিকশা অথবা সিএনজি লীগসহ নানা বেশ ধারণ করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অপচেষ্টা করেছে। তাই আমরা এখানে ছদ্মবেশে কোনো লীগকে ঢুকতে দেব না।

কর্মকর্তারা বলেন, যৌক্তিক দাবি আদায় এবং অফিশিয়াল দায়িত্ব সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। আমাদের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে আগের চেয়ে বেশি সচেষ্ট। তবে আমাদের ন্যায্য দাবি পূরণে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলও যথাযথভাবে রেসপন্স করবে বলে আশাবাদী হতে চাই। আমরা কারও সচিব পদ নিয়ে টানাটানি করছি না। ফলে দুই বিভাগ সৃষ্টি হওয়ার পর দুটি সিনিয়র সচিবের পদে যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে কর ও কাস্টমস ক্যাডার থেকে নিয়োগ দিতে হবে। এটি সম্পূর্ণ বিশেষায়িত ক্যাডার। এ দপ্তরের কাজ বুঝতে হলে এ বিষয়ে চাকরি জীবনের শুরু থেকে বাস্তব যোগ্যতা অর্জন করে অধিকতর দক্ষ হতে হয়। এ কারণে এর আগে প্রশাসন ক্যাডার থেকে যাদের এনবিআর চেয়ারম্যান করা হয়েছে তাদের সাধারণ কাজ বুঝতেই সময় লেগেছে ৬ মাস থেকে এক বছর। ফলে কার্যত তারা পলিসি প্রণয়ন বা রাজস্ব আদায়-কোনো বিষয়ে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে পারেননি। যেটুকু করেছেন তা মূলত কর ও কাস্টমস ক্যাডার কর্মকর্তাদের সহায়তা নিয়ে। এসব কারণে তারা কোনো ক্যাডার বা গোষ্ঠীর স্বার্থে এ আন্দোলন করছেন না, যা কিছু করছেন জনস্বার্থে ও দেশপ্রেম থেকে। তারা মনে করেন, এ ন্যায্য দাবি বর্তমান সরকারের সময়ে আদায় না হলে ভবিষ্যতে আর কখনো হবে না। ফলে আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং হয়ে উপদেষ্টা পরিষদে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য যে অধ্যাদেশ উপস্থাপন করা হবে-সেখানে তাদের দাবির প্রতিফলন থাকতে হবে। তা না হলে আন্দোলন কঠোর থেকে কঠোরের দিকে যাবে।এদিকে অপর একটি সূত্র জানায়, ফ্যাসিস্ট গ্রুপকে সিনিয়র কর্মকর্তাদের কেউ কেউ ডেকে নিয়ে আসেন। এ কারণে দুই ক্যাডারের জুনিয়র ও মিড লেভেলের কর্মকর্তারা খুবই সংক্ষুব্ধ।তারা বলেন, যৌক্তিক দাবি আদায়ের মধ্যে সিনিয়র কর্মকর্তাদের কোনো রকম দলাদলি ও ব্যক্তি স্বার্থ তারা দেখতে চান না। ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ে পেশাদারির সঙ্গে সবাইকে সম্মিলিতভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তারা।

Top