আগের সরকার ফ্যাসিস্ট ছিল,তাদের কোনো নীতি ছিল না - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আগের সরকার ফ্যাসিস্ট ছিল,তাদের কোনো নীতি ছিল না


মু.এ বি সিদ্দীক ভুঁইয়া:আইন, বিচার ও সংসদ-বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আগের সরকার ফ্যাসিস্ট ছিল। তাদের কোনো নীতি ছিল না। তারা চিফ জাস্টিসকে পর্যন্ত গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে, আমরা তেমন সরকার নই।উচ্চ আদালতের স্বাধীনতার ওপর আমরা অনেক বেশি শ্রদ্ধাশীল। মেজর সিনহা হত্যা মামলা এবং শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলা বিচার প্রাসঙ্গিক এক প্রশ্নের জবাবে গতকাল সোমবার তিনি এ কথা বলেন। গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি উপরোক্ত মন্তব্য করেন।সম্প্রতি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলন করে মেজর সিনহা মামলায় দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ তোলা হয়েছে। সেই সঙ্গে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য এক মাসের আল্টিমেটাম দেয়া। বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইন উপদেষ্টা বলেন, মেজর সিনহা হত্যা একটি পাশবিক হত্যাকা- ছিল। এ ঘটনায় আমরা সবাই বিচার চেয়েছি। এটিও বুঝতে হবে কোনো মামলা উচ্চ আদালতে বা হাইকোর্টে থাকে তখন এটি সম্পূর্ণভাবে হাইকোর্টের এখতিয়ারাধীন বিষয়। এটি কার্যতালিকায় কত নম্বরে আসবে, কবে বিচার হবে সেটি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে হাইকোর্ট ঠিক করে। এখানে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা রাখার অবকাশ নেই।

তিনি বলেন, কাউকে দোষী করার আগে ভালো করে জেনে করতে হয়। আপনাদের মতো আমিও আশা করি যাতে এর বিচার দ্রুত সম্পন্ন হয়। যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন তাদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়।আওয়ামী লীগের আমলে মতো বিচার বিভাগের ওপর একটি হস্তক্ষেপের কথা আপনারা বলেছেন, আপনাদের কি সেটি নেই সেটি বলতে চাইছেন কিনাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আসিফ নজরুল বলেন, উচ্চ আদালতের ওপর আমাদের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। এখন আগের সরকার কি করেছে, তারা ফ্যাসিস্ট সরকার ছিল তাদের কোনো নীতি ছিল না। তারা চিফ জাস্টিসকে পর্যন্ত গলা ধাক্কা দিয়ে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। আমরা সেই ধরনের সরকার না। উচ্চ আদালতের স্বাধীনতার ওপর আমরা অনেক বেশি শ্রদ্ধাশীল।আছিয়া হত্যা মামলা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, আছিয়া হত্যা মামলার বিচার কাজ গত বুধবার শুরু হয়েছে। চার্জশিট পেতে একটু দেরি হয়েছে। এ ছাড়া বিচার কাজ শুরু হতে পারে না। আগামী বুধবার হবে ষষ্ঠ কার্যদিবস এবং আগামী রোববার হবে সপ্তম কার্যদিবস। আমি সপ্তম কার্যদিবসের মধ্যে শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলাম। এটি নিম্ন আদালতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা হচ্ছে। আমার মনে হয় না খুব একটা ব্যত্যয় হবে। আমার মনে হয় আমরা খুব দ্রুত একটা রায় পাব।

এর আগে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস’ উদ্বোধন করেন ড. আসিফ নজরুল। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর আমার প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে বিচারকাজে বিড়ম্বনা কমানো, সময় বাঁচানো ও অর্থ ব্যয় কমানো। এ জন্য ইতোমধ্যেই আমরা বেশ কিছু সংস্কারকাজ করেছি। এটি হয়তো খুব বেশি বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু যারা আইন বিশেষজ্ঞ আছেন, তাদের বোঝার কথা।তিনি বলেন, দেওয়ানি কার্যবিধির যুগান্তকারী বেশ কিছু সংশোধন করা হয়েছে যা উপদেষ্টা পরিষদে নীতিগতভাবে অনুমোদন হয়েছে। আশা করছি, উপদেষ্টা পরিষদের আগামী সভায় এটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে।ফৌজদারি কার্যবিধিতেও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, যদি বিচার করার সময় অর্ধেকে নামিয়ে আনা যায় এবং ৪০ শতাংশ মামলা জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যায়, তাহলে বিচারপ্রার্থী মানুষের জন্য অনেক বড় একটা কাজ করা হবে।তিনি জানান, দেশে গড়ে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ মামলা দায়ের হয়। আর জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয় ৩৫ হাজার মামলা। সংস্থাটিতে বছরে দুই লাখ মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হলে আদালতে মামলার চাপ কমপক্ষে ৪০ শতাংশ হ্রাস পাবে।পারিবারিক মামলা, এনআই অ্যাক্টের (নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট) মামলা, আপসযোগ্য ফৌজদারি মামলাসহ ছোট ছোট মামলাগুলো বাধ্যতামূলকভাবে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থায় পাঠানো সম্ভব হলে আদালতগুলোতে বিপুল সংখ্যক মামলাজট কমবে।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমানে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলোতে মাত্র একজন করে সহকারী/সিনিয়র সহকারী জজ পদমর্যাদার বিচারক কাজ করছেন। কাজের গতি বাড়াতে এসব অফিসে একজন সিনিয়র সহকারী জজ ছাড়াও একজন যুগ্ম জেলা জজ এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নিয়োগ দেয়া হবে।

আগামী ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থাকে আমরা এমন একটা পর্যায়ে উন্নীত করতে চাই। যেখানে অন্তত এক লাখ মামলা নিষ্পত্তি হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে সেখানে দুই লাখ মামলা নিষ্পত্তি হবে। এটি করা সম্ভব হলে, বাংলাদেশে বিচারপ্রার্থী মানুষের জন্য অনেক বড় সুবিধা তৈরি করবে।আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেরা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সেরা প্যানেল আইনজীবীর হাতে সম্মানসূচক ক্রেস্ট তুলে দেন আইন উপদেষ্টা।অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আজাদ সুবহানী।এর আগে ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূতকে সঙ্গে নিয়ে লিগ্যাল এইড রোড শো ও লিগ্যাল এইড মেলার উদ্বোধন করেন ড. আসিফ নজরুল।

Top