এনআইডি ‘লক’ শেখ পরিবারের ১০ জনের
মু.এ বি সিদ্দীক ভুঁইয়া : শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের ১০ জনের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) লক করেছে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। বাকিরা হলেন-সজীব আহমেদ ওয়াজেদ, সায়মা ওয়াজেদ, রেহানা সিদ্দিক, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক, শাহিন সিদ্দিক, বুশরা সিদ্দিক, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও তারিক আহমেদ সিদ্দিক। এর ফলে তাদের এনআইডি যাচাই করে সেবা নেওয়ার পথ রুদ্ধ হালো। এনআইডি ব্যবহার করে তারা সম্পত্তি বিক্রিও করতে পারবেন না। এমনকি ওই ১০ জনের এনআইডির তথ্য সংশোধনও করতে পারবেন না। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।এসব জাতীয় পরিচয়পত্র লক করা সংক্রান্ত একটি নথিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালকের (এএসএম হুমায়ুন কবীর) মৌখিক নির্দেশে এই ১০ জনের এনআইডি লক করা হলো। তাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখের সই রয়েছে। যদিও বিষয়টি এতদিন প্রকাশ পায়নি। প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।এনআইডির কর্মকর্তারা জানান, নির্দিষ্ট কারণেই তাদের এনআইডি লক করা হয়েছে। তবে ওই কারণ জানাতে অস্বীকৃতি জানান। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় সরকারি সফরে রয়েছেন। এ কারণে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্যদের এনআইডি লক করার বিষয়টি ‘স্পর্শকাতর’ উল্লেখ করে ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে তারা এসব এনআইডি লক থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, শুধু এই ১০ জন নন, অনেকেরই এনআইডি লক রয়েছে।জানতে চাইলে এনআইডি উইংয়ের সিস্টেম ম্যানেজার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন এনআইডি লকের সুবিধা ও অসুবিধার তথ্য তুলে ধরেন।তিনি জানান, এনআইডি লক করা হলে ভোটারের তথ্য যেমন যাচাই করা সম্ভব নয়,তেমনই কোনোভাবেই এনআইডি তথ্য এডিট করাও সম্ভব হবে না।তিনি বলেন, এনআইডি লক হলে কার্ডটি আর ব্যবহার করা যায় না। এছাড়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভোটার হলে বা এনআইডি নিয়ে তদন্তকাজ চললে, তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এনআইডি লক করা হয়। অধিকাংশ সময় ভিভিআইপি অনেকের অনুরোধেও এনআইডি লক করা হয়, যাতে কেউ এনআইডির অপব্যবহার করতে না পারে। তাদের অনুরোধে আবার আনলক করা হয়। এনআইডি লক থাকা অবস্থায় নাগরিকের ভোট দিতে বা প্রার্থী হতে বাধা নেই বলে উল্লেখ করেন এ সিস্টেম ম্যানেজার।ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। সবশেষ ১১ মার্চ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও দলের নামে ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ হয়। শেখ হাসিনা ছাড়াও তার বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, ববির বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক, তার ভাই তারিক আহমেদ সিদ্দিক, তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী শাহীন সিদ্দিক ও মেয়ে বুশরা সিদ্দিকের ব্যাংক হিসাবও এই তালিকায় রয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ, সূচনা ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এবং আবু সিদ্দিক মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ব্যাংক হিসাবেও বড় অঙ্কের অর্থ রয়েছে।
আমি বাংলাদেশি নই-এমন বক্তব্য দেওয়া টিউলিপের এনআইডি লক : বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি এবং যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের জাতীয় পরিচয়পত্রও লক করেছে ইসি। যদিও বিভিন্ন সময়ে তিনি নিজেকে বাংলাদেশি নাগরিক নই, তিনি একজন ব্রিটিশ এমপি দাবি করে আসছেন।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক নামে টিউলিপের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার অর্থ হচ্ছে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগও করেননি। তিনি নির্বাচন কমিশনের তালিকাভুক্ত ভোটারও। তার ভোটার নম্বর ২৬১৩…….৯। তিনি ঢাকার ভোটার। নিজের নাগরিকত্ব নিয়ে অসত্য তথ্য দিয়েছেন টিউলিপ।
অন্য একটি সূত্র বলছে, তার নামে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, এমনকি কর শনাক্তকরণ নম্বরও (টিআইএন) রয়েছে। জমা দিয়েছেন আয়কর রিটার্ন। তার প্রথম পাসপোর্ট ২০০১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ইস্যু করা হয়। প্রথম পাসপোর্টে জন্মস্থান ও পাসপোর্ট প্রদানের স্থানে লন্ডন, ইউকে (যুক্তরাজ্য) উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ লন্ডনে থাকা অবস্থায় পাসপোর্ট দেওয়া হয়। যেখানে উচ্চতা-পাঁচ ফুট, পেশা-শিক্ষার্থী, নাম-রিজওয়ানা সিদ্দিক, বাবা-ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক এবং মাতার নাম : রেহানা সিদ্দিক উল্লেখ আছে। ওই পাসপোর্টের মেয়াদ ২০০৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি আবারও পাসপোর্ট ইস্যু হয় তার নামে। ওই পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি।