আলোচনায় মোটেই সন্তুষ্ট নয় বিএনপি - Alokitobarta
আজ : বৃহস্পতিবার, ২০শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আলোচনায় মোটেই সন্তুষ্ট নয় বিএনপি


নুর নবী জনী : জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় মোটেই সন্তুষ্ট নয় বিএনপি। প্রধান উপদেষ্টা কোনো সুনির্দিষ্ট ডেডলাইন তাদের দেননি। তিনি ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে প্রধান উপদেষ্টাকে বিএনপি তাদের অবস্থান জানিয়ে বলেছে, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। সেটা তখন নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন হবে। তাই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া দরকার। বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর এসব কথা সাংবাদিকদের জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দলীয় ফোরামে ও সমমনা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, এ মুহূর্তে সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি কর্মসূচিতে যাওয়ার চিন্তা নেই বিএনপির। তারপরও দলীয় ফোরাম ও সমমনাদের মতামত বিবেচনায় নিয়ে যা করার তাই করবে বিএনপি।বৈঠকে সংস্কার প্রসঙ্গে দলটি বলেছে, সরকারের পক্ষ থেকে চলমান যে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে বিএনপি সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করছে। যে বিষয়গুলোতে সব দল ঐকমত্য হবে, সেগুলোর চার্টার (সনদ) করতে তারা রাজি। পতিত ফ্যাসিবাদী দল ও সেই সরকারের সঙ্গে যারাই যুক্ত ছিল তাদের দ্রুত বিচারেরও দাবি জানিয়েছে বিএনপি। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশের পরিস্থিতি কী হতে পারে তা তুলে ধরে বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকরা ড. ইউনূসকে এও বলেন, তিনি অত্যন্ত সম্মানিত ও খ্যাতিমান ব্যক্তি। তার সম্মান অটুট থাকুক তা বিএনপি চায়। সেজন্য তারা তাকে সহযোগিতা করছেন। নির্বাচন দেরি হলে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হবে, নানা অস্থিরতা বাড়বে। ফলে দ্রুত নির্বাচন হয়ে যাওয়াটাই ভালো।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রমজান, তারপর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা এবং পরে বর্ষাকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় বিএনপি। এসব কারণে ডিসেম্বরের পর নির্বাচন হওয়া কঠিন বলে উল্লেখ করা হয়। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে তিনি নির্বাচনের তারিখ ঠিক করবেন। নির্বাচন কোনোভাবেই জুন পার করবে না।
বৈঠকে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দ্রুত করণীয় কিছু বিষয়ে মতামত ও পরামর্শ দিয়ে দলটির মহাসচিব স্বাক্ষরিত চার পৃষ্ঠার একটি চিঠি প্রধান উপদেষ্টাকে দিয়েছে বিএনপি। এতে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠায় সমর্থন, দায়িত্ব পালনে পূর্ণ সহযোগিতা এবং সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে দলটি। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সরকারের কিছু ব্যক্তি এবং আপনাকে (প্রধান উপদেষ্টা) সমর্থনকারী বলে দাবিদার কিছু ব্যক্তি ও সংগঠনের প্রকাশ্য বক্তব্য ও অবস্থান জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশা করছে দলটি। প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার মাধ্যমে জনমনের বিভ্রান্তি অবসানের আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি এনআইডি প্রকল্প নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখা ও নির্বাচনি এলাকা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে আইনি জটিলতা দ্রুত নিরসনেরও প্রস্তাব করছে বিএনপি। একই সঙ্গে পতিত ফ্যাসিবাদী দল ও সেই দলীয় সরকারের সঙ্গে যারাই যুক্ত ছিল দ্রুত তাদের বিচার করে রাজনীতির ময়দানকে জঞ্জালমুক্ত করা; জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ ও সুচিকিৎসায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি আনতে অধিকতর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য চিঠিতে আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে ১/১১-এর অবৈধ সরকার এবং পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে দায়েরকৃত সব মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

বেলা ৩টা থেকে প্রায় ২ ঘণ্টা বৈঠক করে বিএনপির প্রতিনিধিদল। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল দলটির সাত সদস্যের এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে আমাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো তাকে জানিয়েছি। যার মধ্যে প্রধান ছিল নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ। আমরা বলেছি, বর্তমানে রাজনৈতিক যে পরিস্থিতি আছে এবং দেশের যে অবস্থা, তাতে আমরা বিশ্বাস করি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে চলমান যে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করছি। গত কয়েক দিন আগে সংস্কারে আমাদের মতামত দিয়েছি এবং বৃহস্পতিবার (আজ) বিএনপির সঙ্গে (ঐকমত্য কমিশনের) বৈঠক আছে। তিনি বলেন, আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি, যে বিষয়গুলোতে সব দল ঐকমত্য হবে, আমরা সেগুলোর চার্টার (সনদ) করতে রাজি। সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে আমরা নির্বাচনের দিকে চলে যেতে পারি। বাকি যে সংস্কার, সেগুলো যে রাজনৈতিক দল নির্বাচিত হয়ে আসবে, তারা বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নেবে।পরে বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে বিএনপির প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে প্রধান উপদেষ্টা কিছুই বলেননি। তিনি ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করবেন না, তা তিনি বলেননি। বিএনপি এতে সন্তুষ্ট হয়নি। বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে। বিএনপি বলেছে, ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচন হওয়া দরকার।

বিএনপির প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন-দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সালাহউদ্দিন আহমদ ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।দ্রুত করণীয় কিছু বিষয়ে মতামত ও পরামর্শ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি : ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেওয়া চিঠিতে বিএনপি আরও বলেছে, বিগত ফ্যাসিবাদী পতিত সরকারের মতো ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’ যেমন জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের অপকৌশল ছিল, এখনো কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ‘আগে সংস্কার পরে গণতন্ত্র’ তেমনি ভ্রান্ত কূটতর্ক করছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও কার্যকর করার মাধ্যমেই সবার জন্য উন্নয়ন সম্ভব এবং এ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থা, আইন, নীতি, বিধানের সংস্কার অপরিহার্য। এর সবকটি পরস্পরের পরিপূরক, কোনোটাই কোনোটার বিকল্প নয়; পরস্পর সাংঘর্ষিকও নয়।এ দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির ইতিহাসে প্রায় সব যুগান্তকারী সংস্কার কিংবা ইতিবাচক পরিবর্তন বিএনপির হাত ধরেই এসেছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, আজ যারা সংস্কারের কথা বেশি বেশি বলে এবং বিএনপিকে সংস্কারের বিপক্ষের শক্তি বলে চিহ্নিতের অপচেষ্টা করছে তাদের ভিশন-২০৩০ এবং রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কিন্তু দল কিংবা গোষ্ঠীস্বার্থে এবং রাজনীতি কিংবা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে হেয় ও অপ্রাসঙ্গিক করার অপচেষ্টায় অযথা সময়ক্ষেপণ করে জনগণকে ভোটাধিকার তথা রাষ্ট্রের মালিকানা প্রতিষ্ঠার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার কৌশলকে বিএনপি সমর্থন করে না।

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক আজ : এদিকে সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজ বিএনপির বৈঠক। সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদ এলডি হলের এ বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেবে।

Top