জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে বঙ্গোপসাগরে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে বঙ্গোপসাগরে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা


মু.এ বি সিদ্দীক ভুঁইয়া:জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে বঙ্গোপসাগরে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা আজ মধ্যরাত শুরু হচ্ছে। এ সময়ে সমুদ্রে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী ভারতের সঙ্গে একযোগে এই নিষেধাজ্ঞায় খুশি জেলেরা।সামুদ্রিক ৪৭৫ প্রজাতির মাছের অবাধ প্রজনন আর জাটকা সংরক্ষণে এতদিন বাংলাদেশের জলসীমায় মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা ছিল ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত। আর ভারতীয় জেলেদের জন্য দেশটি এই নিষেধাজ্ঞা ১৫ এপ্রিল থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত বলবৎ রাখে। ফলে যখন বাংলাদেশের জেলেরা অবরোধে অলস সময় কাটাতেন, তখন বাংলাদেশের জলসীমায় দাপিয়ে বেড়াতেন ভারতীয় জেলেরা। এ অবস্থায় ভারতীয় জেলেদের সঙ্গে সমন্বয় করে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা সময়সীমা নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন বাংলাদেশের জেলেরা। দীর্ঘদিন পর পূরণ হয়েছে সেই দাবি। নিষেধাজ্ঞা সময় নিয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

চলতি বছর থেকে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা ধার্য করেছে বাংলাদেশ সরকার। এতে করে যেমন একপেশে সুবিধা পাবেন না ভারতীয় জেলেরা, তেমনি প্রতিবেশী জেলা থেকে দুদিন কম অবরোধ থাকবে বাংলাদেশে।পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুরের জেলে মো.রাব্বানী বলেন,আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন ভারতীয়দের মাছ ধরা বন্ধ রাখা। এবছর এই সরকার সে দাবি পূরণ করেছে। এজন্য আমরা সরকারকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। শুধু তাই নয়, তাদের (ভারতের) দুদিন আগে আমাদের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যাবে। এটা আমাদের জেলেদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।আলিপুর বাজারের ইউসুব কোম্পানি নামের একজন মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, ‘ভারতীয় জেলেদের আগ্রাসনে উপকূলীয় এলাকার জেলেরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। এবার সেই কষ্টের অবসান ঘটলো। আজকের পর থেকে আমরা সমুদ্রে নামবো না। আমাদের জেলেরা অন্য পেশায় ঝুঁকবে বেঁচে থাকার জন্য। তবে সরকারের কাছে অনুরোধ করবো যাতে চুরি করে দেশের কিংবা ভারতের কেউ মাছ ধরতে না পারে, সে দিকে খেয়াল রাখতে।এদিকে সমুদ্রে মাছের সংকট দেখা দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞার আগেই খালি হাতে ফিরছেন অনেক জেলে। তবে এসময়ে পটুয়াখালীর উপকূলীয় নিষেধাজ্ঞা ঘোষিত এলাকায় জেলেদের দেওয়া হবে প্রণোদনা। ৬৫ দিনে দুইবারে ৮৬ কেজি করে চাল দেওয়া হবে তাদের। সরকারের এই সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বলছেন জেলেরা।

কুয়াকাটা এলাকার হোসেন পাড়ার জেলে আবুল কালাম আজাদ বলেন,মূলত আমরা জেলেরা জেলে পেশা ছাড়া অন্য কোনো কাজ পারি না। আমাদের একেকটি পরিবারে ৫-৬ জন সদস্য। মাত্র ৮৬ কেজি চাল আমাদের জন্য খুবই অল্প। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমাদের প্রণোদনা যেন আরেকটু বাড়ানো হয়।পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল হকের মতে, সরকারের এই নতুন সময়সীমা অবশ্যই যৌক্তিক। কারণ ভারতীয় জেলেরা এতদিন যে সুযোগটা নিতেন, সেটা আর সম্ভব না। এখন বাংলাদেশের জেলেরা ভারতীয় জেলেদের আগে সমুদ্রে মাছ ধরার সুযোগ পাবেন। এতে দেশের অর্থনীতি যেমন শক্তিশালী হবে, জেলে পেশা টিকে থাকবে।

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন ও গণসচেতনতায় পুরো উপকূলীয় এলাকা ও পটুয়াখালীর বড় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আলীপুর-মহিপুরে প্রচারণা চলছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের জেল-জরিমানাসহ শাস্তির আওতায় আনা হবে। এই নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সরকারের দেওয়া প্রণোদনা নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে পৌঁছে দেওয়া হবে।কলাপাড়া উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৮ হাজার ৩০৪ জন। তবে মোট জেলে ৩০ হাজারেরও বেশি। অনিবন্ধিত জেলেদের দাবি, সরকার যেন তাদেরকেও এই সুবিধার আওতায় নিয়ে আসে।

Top