অযাচিত তর্ক-বিতর্কে যেন স্বৈরাচার সুযোগ না পায়
নুর নবী জনী:একটি রাজনৈতিক দল হিসাবে, বিশেষ করে গণতন্ত্রের সপক্ষের শক্তি হিসাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সবাইকে অব্যাহতভাবে চেষ্টা করতে হবে যাতে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসে। যে কোনো মূল্যে মানুষের ভোটের অধিকার যাতে প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা যদি ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ যে খাদের কিনারে চলে গেছে সেখান থেকে উঠিয়ে আনতে সক্ষম হব।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, তর্ক-বিতর্ক করতে গিয়ে এমন কিছু যেন না হয়, যাতে স্বৈরাচার কিংবা দেশের ভালো যারা চায় না, তারা সুযোগ পেয়ে যায়। সংস্কার নিয়ে যদি আমরা অযাচিত আলোচনা করতে থাকি, তাহলে রাষ্ট্রের মূল সমস্যাগুলো আড়াল হয়ে যেতে পারে। সংস্কার নিয়ে অযাচিত আলোচনা না করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি। সোমবার দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে অনুষ্ঠিত খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। তারেক রহমান বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আজ আমরা দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক চর্চা করছি। দলকে গণতান্ত্রিকভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, কথা বলার অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের হাজারো নেতাকর্মী খুন হয়েছে, গুম হয়েছে। আমাদের লাখ লাখ মানুষ বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে। বিভিন্ন গায়েবি মামলা, মিথ্যা মামলায় হাজিরা দিতে হয়েছে। কিন্তু এখনো প্রতিনিয়ত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে কেন? বলতে পারেন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করলে কী হবে? দেশের ভেতরে যদি আমরা গণতান্ত্রিক চর্চা করি, ভোটের চর্চা করি তাহলে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের কথা বলবেন, দেশের সমস্যার কথা বলবেন।দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা আনতে হবে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, কৃষিব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বাজার সিন্ডিকেটের দিকে নজর দিতে হবে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই কাজগুলো যদি না করি তাহলে এই দেশকে রক্ষা করা যাবে না। দেশের সবকিছু ধ্বংস করে স্বৈরাচার পালিয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া একটা কথা বলেছিলেন, এই স্বৈরাচার সবকিছু ধ্বংস করে দেশ থেকে পালিয়ে যাবে। তার বহু বছর আগের বলা সেই কথা আজ পরতে পরতে সত্য হয়েছে। স্বৈরাচার লুটপাট করে পালিয়ে গেছে, দেশকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নারী উন্নয়ন, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য খাতে কী কী করবেন তা উল্লেখ করেন তারেক রহমান। অন্তর্বর্তী সরকারকে এসব বিষয়ে নজর দেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। গণতন্ত্র যত প্রাক্টিস হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া তত স্বচ্ছ হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এ কারণেই বিএনপি দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতা নির্বাচিত করছে। সম্মেলনে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান সম্মেলনের উদ্বোধক ও বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান। এ সময় নেতাকর্মীরাও হাত উঠিয়ে ধানের শীষে ভোটের প্রতিশ্রুতি দেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় সম্মেলন শুরু হয়। খণ্ড খণ্ড মিছিলসহকারে রংবেরঙের ক্যাপ, টি-শার্ট পরে, প্ল্যাকার্ড হাতে আসেন নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ ১৬ বছর পর এ সম্মেলনে উজ্জীবিত তারা। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান।সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। আরও বক্তৃতা করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, কৃষিবিদ শামীমুল ইসলাম, জয়ন্ত কুণ্ডু, সৈয়দা নার্গিস আলী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু প্রমুখ।
দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে মনা সভাপতি ও তুহিন সম্পাদক নির্বাচিত : বিকাল তিনটা থেকে শুরু হয় কাউন্সিল অধিবেশন। ৫০৫ জন কাউন্সিলর ভোট দেন। সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষণা করা হয়। খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা সভাপতি ও শফিকুল আলম তুহিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। কাউন্সিলে সভাপতি পদে শফিকুল আলম মনা ২৯৯ ভোট, তরিকুল ইসলাম জহির ১৮৯ ভোট ও সাহাজি কামাল টিপু ৩ ভোট পেয়েছেন। ৬টি ভোট বাতিল হয়েছে।সাধারণ সম্পাদক পদে শফিকুল আলম তুহিন ২৮৮ ভোট, নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর ২০৩ ভোট এবং কাজী মাহমুদ আলী ২ ভোট পেয়েছেন। ৬টি ভোট বাতিল হয়েছে।