জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা’ এই আন্দোলন বাঙালির মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার জন্য সূচিত হলেও এর মূল চেতনাটি ছিল স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। তা ছিল বাংলার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির আন্দোলন। তাই বাঙালির কাছে একুশ মানে মাথা নত না করার দৃঢ়প্রত্যয়। মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে শুক্রবার ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আয়োজিত চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বায়ান্ন’র একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু বেদনার্ত অতীতকে স্মরণ করে অশ্রু বিসর্জনের দিন নয়, বরং এক অবিনাশী প্রেরণা, সব ধরনের অন্যায়, অবিচার ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বীজমন্ত্র। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি এনে দিতে আমাদের আত্মত্যাগ করতে হয়েছে অনেক। মাতৃভাষার জন্য জীবনদানের এমন ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। বিশ্বের সব মাতৃভাষার সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও গবেষণার ইতিবৃত্তকে লক্ষ্য করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট তার যাত্রা শুরু করে।
ব্যক্তি জীবনে মাতৃভাষার গুরুত্ব তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, মাতৃভাষা যে কোনো নৃগোষ্ঠীর ইতিহাস, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বাহক। মাতৃভাষার সঙ্গে সব মানুষের আত্মার সম্পর্ক। মাতৃভাষা দিবসে সব মাতৃভাষা সংরক্ষণের জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নিজ ভাষার নিবেদিতপ্রাণ প্রচার কর্মী হওয়া সত্ত্বেও জাতির কাছ থেকে পৃথিবীর ভান্ডারে কিছু দেওয়ার না থাকলে ভাষার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না।সরকারপ্রধান আরও বলেন, মাতৃভাষা সংরক্ষণে আবেগের কারণ তো আছেই, মস্ত বড় স্বার্থের কারণও আছে। এখন আমাদের জানা নেই কোনো অজ্ঞাত নামহীন মাতৃভাষা পৃথিবী সম্পূর্ণ বদলে দেবে। কোনো সম্ভাবনাকে অবজ্ঞা করলে মস্তবড় ভুল করব।শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, বাংলাদেশে ইউনেস্কো প্রধান কার্যালয়ের প্রতিনিধি সুসান ভিজ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান। মাতৃভাষার সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও গবেষণায় অবদান রাখার জন্য দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
২৪-এর আত্মত্যাগ নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে : এদিন সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধের হার্ড পয়েন্টে জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ-২ এর ৭ম জাতীয় কমডেকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের তাৎপর্য ও মূল্য অত্যন্ত চড়া। স্বৈরাচারী সরকারের দমনমূলক নীতির কারণে বহু তরুণ প্রাণ হারিয়েছে। আন্দোলনের উত্তাল সময়ে ঢাকার দেওয়ালে আঁকা গ্রাফিতি, রক্তাক্ত রাজপথের ছবি এবং আন্দোলনকারীদের মুখে মুখে বেড়ানো স্লোগান এখনো আমাদের মনে দাগ কাটে। ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ শুধু রাজনীতিতে নয়, আমাদের সংস্কৃতি ও সমাজে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে স্কাউটিং’-স্লোগানে জাতীয় কমডেকার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কমডেকারের উদ্বোধন করে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আরও বলেন, শতশত ছাত্র, যুবক ও কিশোরের রক্তের বিনিময়ে ২৪ এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ঘটে। কিন্তু আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যায় না। তিনি বলেন, এদেশে আর কোনো দিন যাতে কোনো স্বৈরাচারী সরকার ফিরে আসতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।৭ম জাতীয় কমডেকা সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ স্কাউটের ৭ম জাতীয় কমডেকার কমডেকা চিফ মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ স্কাউটের এডহক কমিটির সদস্য ডা. মো. আমিনুল ইসলাম, খ. ম. রকিবুল ইসলাম ও ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
৭ম জাতীয় কমডেকায় সারা দেশ থেকে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০০টি ইউনিটের ৩২০০ জন রোভার ও স্বেচ্ছাসেবক, ইউনিট লিডার এবং কর্মকর্তাসহ প্রায় পাঁচ হাজার স্কাউট সদস্য অংশগ্রহণ করেছে।