আহতদের চিকিৎসা এবং নিহতদের লাশ হস্তান্তর ও দাফনে পদে পদে বাধা
মু . এ বি সিদ্দীক ভুঁইয়া :জুলাই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা এবং নিহতদের লাশ হস্তান্তর ও দাফনে পদে পদে বাধা দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনএসআই, পুলিশের বিশেষ শাখা ডিবি, তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং তাদের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ।বাধা সৃষ্টি করার মধ্যে রয়েছে-আহতদের হাসপাতালে যেতে পথে ও গেটে বাধা প্রদান; ডাক্তারদের হুমকি দিয়ে গুলিবিদ্ধদের চিকিৎসা বন্ধে বাধ্য করা; গুলি নয়, অন্য কারণে মৃত্যু লিখতে বাধ্য করা; ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর; পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর ও দাফনে বাধা এবং চিকিৎসার নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা। এমনকি অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে আহতদের ওপর আরও নির্যাতন চালায় ছাত্রলীগ। এ সময় তারা হাসপাতালের সিসিটিভির ফুটেজ কেড়ে নেয়।এর উদ্দেশ্য ছিল-যাতে সহিংসতার প্রমাণ লুকানো যায়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হাসপাতালে ব্যাপক নজরদারি চালায়। আহতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তাদের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের (ওএইচসিএইচআর ) ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এ ঘটনা রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিকল্পিত ও সুসংগঠিত মানবাধিকার লঙ্ঘন। এছাড়াও এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন।বুধবার প্রতিষ্ঠানটির জেনেভা কার্যালয় থেকে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এসব ঘটনার বেশ কয়েকটি কেস স্টাডি তুলে ধরে জাতিসংঘ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।
হাসপাতালে নজরদারি ও চাপ : পুলিশের বিশেষ শাখা ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি), প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) এবং অন্য সংস্থাগুলো হাসপাতালে ব্যাপক নজরদারি চালায়। আহতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তাদের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করে। এমনকি তারা হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ ও চিকিৎসার নথিপত্রও বাজেয়াপ্ত করে।এর উদ্দেশ্য ছিল সহিংসতার প্রমাণ লুকানো। হাসপাতালগুলোয় চাপ ও ব্যাপক হুমকি দেয় গোয়েন্দা সংস্থা। ডাক্তারদের হুমকি দিয়ে গুলিবিদ্ধ আহতদের চিকিৎসা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করা হয়। চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মীদের হুমকি দেয়-হত্যার প্রকৃত কারণ লিখলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হবে। একটি হাসপাতালে আহতদের ভর্তি করতে নিষেধ করে পুলিশ।অপর হাসপাতালে একজন সংসদ-সদস্য আহতদের চিকিৎসা বন্ধ করতে বাধ্য করেন। দুজন চিকিৎসককে গ্রেফতার করা হয়। ভয়ে অন্য চিকিৎসকরা গা ঢাকা দেন। ২০ জুলাই থেকে এক হাসপাতালে নতুন কোনো আহত বিক্ষোভকারীকে ভর্তি করতে দেওয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ভূমিকা : হাসপাতালের প্রবেশপথে অবস্থান নিয়ে আহতদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত করেছে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা অ্যাম্বুলেন্স ও ব্যক্তিগত যানবাহন থামিয়ে আহতদের ওপর নির্যাতন চালায়। এমন পরিবেশে অনেক আহত বিক্ষোভকারী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাননি। কিছু হাসপাতাল পুলিশের হুমকিতে আহতদের চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়। তবে অনেক চিকিৎসক বিপদের ঝুঁকি নিয়েও বিনামূল্যে আহতদের চিকিৎসা করেছেন।