নিজের সম্পদের হিসাব দিলেন দুদক চেয়ারম্যান - Alokitobarta
আজ : বৃহস্পতিবার, ২০শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিজের সম্পদের হিসাব দিলেন দুদক চেয়ারম্যান


মোহাম্মাদ মুরাদ হোসেন:স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের হিসাব দিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।সম্পদের মধ্যে তার ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট,স্ত্রীর সঙ্গে একটি প্লট, ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রসহ নগদ কয়েক লাখ টাকা রয়েছে। রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সম্পদের হিসাব দেওয়ার পাশাপাশি সম্পদের উৎস তুলে ধরে তিনি। ১২ দিন আগে দুদকে যোগ দিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে নিজের সম্পদের হিসাব প্রকাশ করবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন আবদুল মোমেন।ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনে সম্পদের হিসাব দিয়েছেন জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা সবাই সম্পদ বিবরণী দাখিল করব। আমি সাংবাদিকদেরও বলে যাচ্ছি। মৌখিকভাবে বলছি, প্রয়োজনে লিখিতভাবে দিতে পারব।’

স্কুল পাশ করার পর থেকেই উপার্জন করছেন জানিয়ে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনাদের জানা দরকার। এ চাকরি থেকে চলে যাওয়ার পর আপনারা হিসাব করবেন সম্পদ কতটা বাড়ল বা কমল। তখন আপনারা ধরতে পারবেন, কী পরিমাণ বাড়তি কামাই করেছি, বা করিনি।’ নিজের সম্পদের তথ্য তুলে ধরে আবদুল মোমেন বলেন, ‘ঢাকার বসিলাতে আমার ১৫০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে। সেখানে আরও ৭০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। পূর্বাচল আমেরিকান সিটিতে স্ত্রীর সঙ্গে আমার ৫ কাঠার একটি খালি জায়গা (প্লট) আছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি বিসিএস প্রশাসন সমিতির সদস্য ছিলাম। সেই সমিতির ৮ জন সদস্য মিলে ১০ কাঠার একটি প্লট কিনেছি। ওই প্লটের মধ্যে আমার ভাগে ১ দশমিক ২৫ কাঠা পড়বে। ২০০৭ সালে টাকা-পয়সা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত দখলে নেই, এটা অনিশ্চিত। এছাড়া রাজউকের একটি প্লটের জন্য ৭৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলাম। এখন র্পযন্ত সেটার নিষ্পত্তি হয়নি। যে কোনো কারণে তৎকালীন সরকার আমাকে দেয়নি (রাজউক প্লট)। এটার ব্যাপারে আবার আবেদন করব। এসব স্থাবর সম্পত্তির বাইরে আমার আর স্থাবর সম্পত্তি নেই। যদি আপনারা কখনো খুঁজে বের করতে পারেন তাহলে সেগুলো বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে।’এছাড়া অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে ২৫ সেলফ ভর্তি দেশি-বিদেশি বইপত্র এবং বাসায় ৫ লাখ টাকা মূল্যের আববাসপত্র আছে বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান।

দুটি সঞ্চয়পত্র রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘৩০ লাখ টাকার ৫ বছর মেয়াদি একটি সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর ২০ লাখ টাকার আরেকটি সঞ্চয়পত্র আছে। আমার জিপিএফের (সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিল) টাকা এখনো তুলিনি, সেখানে ১৭ লাখ টাকা আছে। সরকারি চাকরি যারা করেন, তাদের এই ফান্ড থাকে।’

টাকার উৎস : উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ রয়েছে জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান আবদুল মোমেন বলেন, ‘এখন যে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতাল-এর একটি বড় অংশ আমাদের বাগান বাড়ি ছিল। আমরা অনেক ভাই-বোন, সবাই মিলে সেটা বিক্রি করে যে টাকা পেয়েছি, তা দিয়ে একটা ফিক্সড ডিপোজিট করেছি। এছাড়া শিক্ষকতা বক্তৃতা এবং লেখালিখি করে সম্মানির কিছু অর্থ পেয়েছি। ঢাকার বেঁড়িবাধের বাইরে সাড়ে ৫ শতক একটি জমি কিনেছিলাম, সেটা বিক্রি করে কিছু টাকা পেয়েছি। আর হাতে নগদ এবং ব্যাংক মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার মতো রয়েছে।’

২০০৯ সালে সরকারি চাকরি থেকে ওএসডি হওয়ার পর চাকরি চলে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন যেহেতু চাকরি ফিরে পেয়েছি। সুতরাং পেনশন ও অন্যান্য বেনিফিট সবই পাব, হঠাৎ করে দেখা যাবে আমার টাকার অংশ বেড়ে গেছে।বর্তমানের সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতির সমান বেতন-ভাতা পান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মূল বেতন ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে ৫০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, বিশেষ ভাতা এবং অন্যান্য ভাতা মিলে পাই। এর বাইরে অন্য কোনো খাতে উপার্জনের সুযোগ দেখি না।

দুর্নীতিবাজদের ছাড় নয় : বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ-সদস্য এবং অন্যান্য প্রভাবশালীর সরাসরি হস্তক্ষেপে দুর্নীতি হয়েছে-এমন অভিযোগের বিষয়ে দুদক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুদক কীভাবে কাজ করবে এ বিষয়ে আইনগত একটি ছক আছে। সেই আইনের যতটুকু কাভার করবে আমরা সবটুকুই করব।

রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা থাকেন, তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অতীতে এটাই দেখে এসেছে। আপনারাই (সাংবাদিক) বলেছেন যেহেতু রাজনৈতিক সরকার নেই, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যে সরকার জনপ্রত্যাশাকে লালন করার জন্য, বাস্তবায়ন করার জন্য জনগণই এ সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে।’

৫ আগস্টের বিপ্লব না হলে নতুন কমিশন নিয়োগ পেত না উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে, একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এবং বায়তুল মোকাররমের ইমাম পালিয়ে যাবেন। এটা একটি উদ্ভূত ঘটনা। পৃথিবীতে অনেক আন্দোলন হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে গেছেন। কিন্তু পোপ পালিয়ে গেছেন, এমন ঘটনা ঘটেনি।অনুসন্ধান ও তদন্তের ওপর একটি মামলার ন্যায়বিচার নির্ভর করে উল্লেখ দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী সভায় বলেন, ‘আমরা নির্মহ ও নির্ভুলভাবে অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজ করতে বদ্ধপরিকর। জাতির কাছে আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে জানাতে চাই, কারও ভয়ভীতি, বা অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে এ কাজটি করব না।আরেক কমিশনার (অনুসন্ধান) হাফিজ আহসান ফরিদ বলেন, ‘সারা দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, অঙ্গ-প্রতঙ্গে দুর্নীতি। দুর্নীতির ব্যাপকতা এবং মাত্রার গভীরতা কী, এখনো আমরা বুঝতেই পারিনি। ইনশাআল্লাহ আমরা জানতে পারব। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে চাই।মতবিনিময় সভায় দুদক বিটে কর্মরত সাংদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশনের একাধিক সদস্য বক্তব্য দেন। সংগঠনটির সভাপতি জেমসন মাহবুব ও সাধারণ সম্পাদক শাফি উদ্দিন সভা সঞ্চালনা করেন।

Top