বিজয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় বীর বাঙালি - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিজয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় বীর বাঙালি


মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম : ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় বীর বাঙালি। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় পাকিস্তানি বাহিনীর অনেক ইউনিট। এদিন নানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী চারদিক থেকে ঘেরাও করে ফেলে ঢাকা শহর। অবরুদ্ধ ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। দেশের অধিকাংশ রণাঙ্গনে চলছিল মুক্তিকামী জনতার বিজয়োল্লাস। বস্তুত যুদ্ধে পাকিস্তান বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে। পরাজয় মেনে নেওয়া ও বিজয়ের ঘোষণা দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা বাকি থাকে মাত্র।১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ছিল বুধবার। এদিন জেনারেল নিয়াজির যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ভোর ৫টা থেকে ঢাকার ওপর বিমান হামলা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। পাশাপাশি জেনারেল নিয়াজিকে জানিয়ে দেওয়া হয়, পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ না করা পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতি হতে পারে না। ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টার মধ্যে শর্তহীন আত্মসমর্পণ না করা হলে আবার বিমান হামলা শুরু করা হবে। বিকালে যৌথ বাহিনী বিনা প্রতিরোধে সাভার প্রবেশ করে। সাভারের পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটে এসে রাজধানীর প্রবেশপথ মিরপুর ব্রিজের ওপর প্রতিবন্ধক গড়ে তোলে।

রাতে যৌথ বাহিনী সাভার থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। পথে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কাদেরিয়া বাহিনী ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়। রাত ২টায় মিরপুর ব্রিজের কাছে যৌথ বাহিনী পাক সৈন্যের মুখোমুখি হয়। যৌথ বাহিনী ব্রিজ দখলের জন্য প্রথমে কমান্ডো পদ্ধতিতে আক্রমণ শুরু করে। ব্রিজের ওপাশ থেকে পাক বাহিনী মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় যৌথ বাহিনীর আরেকটি দল এসে পশ্চিম পাড় দিয়ে আক্রমণ চালায়। সারা রাত তুমুল যুদ্ধ চলে। চট্টগ্রাম রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনী কুমিরার দক্ষিণে আরও কয়েকটি স্থান হানাদার মুক্ত করে। সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধারা চট্টগ্রাম শহরের প্রথম রক্ষাব্যুহ ভাটিয়ারীতে আক্রমণ চালায়। সারা রাত মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলে। ভাটিয়ারি থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে।

যৌথ বাহিনী বিভিন্ন দিক থেকে রংপুরের দিকে অগ্রসর হয়। রাতে তারা চারদিক থেকে রংপুর শহর ঘিরে ফেলে। যৌথ বাহিনীর পরের দিন রংপুর সেনানিবাসে আক্রমণ করার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হওয়ায় তার আর প্রয়োজন হয়নি। ফরিদপুর অঞ্চলে যৌথ বাহিনী কামারখালীর পাক ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়। পাক বাহিনী সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে অবস্থান ছেড়ে ফরিদপুরের দিকে পালাতে থাকে। যৌথ বাহিনী তাদের পিছু ধাওয়া করে। পথে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়ে স্বেচ্ছায় শত্রু সৈন্য যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণকারী অফিসারদের মধ্যে একজন মেজর জেনারেল ছিলেন।

Top