দিশেহারা বিচ্ছিন্ন ও অবরুদ্ধ পাকবাহিনী - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দিশেহারা বিচ্ছিন্ন ও অবরুদ্ধ পাকবাহিনী


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া: মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই ঘটতে থাকে নানা ঘটনা। এ মাসে যতই দিন যেতে থাকে রণাঙ্গনের অবস্থা ততই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পাকিস্তানিদের পরাজয় সুনিশ্চিত করতে সর্বশক্তি দিয়ে এগিয়ে চলে বাংলার দামাল ছেলেরা। পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন ও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ঢাকার দিকে পালানোর কোনো পথও তাদের সামনে খোলা ছিল না। পুরোপুরি দিশেহারা হয়ে পড়ে তারা। বাংলার বীর সেনাদের অকুতোভয় সাহসে রণাঙ্গনের মাঠে অর্জিত হতে থাকে ছোট ছোট বিজয়।১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর ছিল বুধবার। এদিন মুক্ত হয়-মৌলভীবাজার, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন এলাকা। মুক্ত জনপদবাসী বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে। এসব এলাকায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেন মুক্তিযোদ্ধারা। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পূর্বাঞ্চল আখাউড়া মুক্ত করার পর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে অগ্রসর হয়। আখাউড়া থেকে রেললাইন ও উজানী শহর অতিক্রম করে কোনো ধরনের প্রতিরোধ ছাড়াই যৌথবাহিনী পৌঁছে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে। পরে ৮ ডিসেম্বর সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।এদিনে পাকবাহিনীর কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিল চাঁদপুর জেলা। তৎকালীন চাঁদপুর মহকুমা জেলায় সর্বশেষ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর লাকসাম ও মুদাফ্ফরগঞ্জ মুক্ত হওয়ার পর। যৌথবাহিনী হাজীগঞ্জ দিয়ে ৬ ডিসেম্বর চাঁদপুর আসতে থাকলে মুক্তিসেনারা হানাদার বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে পড়েন। এ সময় ভারতের মাউন্টেন ব্রিগেড ও ইস্টার্ন সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা যৌথ আক্রমণ চালায়। দিশা না পেয়ে পাকিস্তান ৩৯ অস্থায়ী ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসার মেজর জেনারেল রহিম খান চাঁদপুর থেকে পালিয়ে যান। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা তীব্র লড়াইয়ের পর ৮ ডিসেম্বর জেলার হাজীগঞ্জ এবং বিনা প্রতিরোধেই চাঁদপুর হানাদারমুক্ত হয়।

এদিনে কুমিল্লা পাকবাহিনীর রাহুর গ্রাস থেকে মুক্ত হয়।এই দিন শত্রুমুক্ত হয় বরিশাল অঞ্চল।বিজয়ের পতাকা ওড়ান অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা। অন্যদিকে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এদিন এক বেতার ভাষণে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে ভারত ও ভুটানের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর কাছে আবেদন জানান। মিত্রবাহিনীর মাধ্যমে তাদের পুরো বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেওয়া হয় ১৯৭১ সালের আজকের দিনে। মিত্রবাহিনীর কর্মকর্তারা তিনটি ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুরো পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। জেনারেল মানেকশ’র এই আহ্বান আকাশবাণী (বেতার) থেকে নানা ভাষায় বারবার প্রচার করা হয়।

Top