পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে জটিলতা - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে জটিলতা


মহাব্বাতুল্লাহ:দেড় মাস দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ঠিকমতো কাজ করা যায়নি। এছাড়া প্রকল্প হতে বেঁচে যাওয়া অর্থে অতিরিক্ত কাজ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।শেষ সময়ে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে দেখা দিয়েছে জটিলতা। নভেম্বরে শেষ হচ্ছে বৈদেশিক ঋণের অ্যাভেলিভিলিটি পিরিয়ড (ঋণ প্রাপ্যতার সময়)। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পে সব কাজ করে বিল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।কেননা বেশ কিছু কাজ এগিয়ে গেলেও ভাঙ্গা জংশন, টিটিপাড়া আন্ডারপাস এবং টিটিপাড়া সিটিসি ভবন নির্মাণ কাজ অনেকটাই বাকি।গত এজন্য ঋণের এভেইলেভিলিটি পিরিয়ড বৃদ্ধির অনুরোধ করবে বাংলাদেশ। তবে এরই মধ্যে অতিরিক্ত কাজের প্রস্তাব অনুমোদনের অনুরোধ জানানো হয়েছে চীনের কাছে। কিন্তু এখনও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি চায়না এক্সিম ব্যাংক যাচাই-বাছাই করছে। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির (পিআইসি) বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। রাজধানীর রেলভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বৃহস্পতিবার বলেন, বৈদেশিক ঋণের অ্যাভেলিভিলিটি পিরিয়ড বাড়ানোটা জরুরি। সেটি না বাড়ানো গেলে চীনা ঋণের ওই অংশ ব্যবহার করা যাবে না। তবে বেঁচে যাওয়া অর্থ দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করার বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। এক্ষেত্রে খতিয়ে দেখতে হবে প্রকৃত প্রয়োজনীয় কাজ করা হবে কিনা। অনেক সময় বাড়তি টাকা আছে বলেই অহেতুক সৌন্দর্যবর্ধনসহ এরকম কাজ করার প্রবণতা থাকে।পিআইসি সভা সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটি সরকারি তহবিল এবং গণচীনের জি টু জি অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটির অনুমোদিত মোট ব্যয় ছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১০ হাজার ২৩৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং চীনা এক্সিম ব্যাংকের ঋণ থেকে ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল।কিন্তু প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে জানা যায়, শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৩ হাজার ৭৪৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এছাড়া প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৬ শতাংশ। কিন্তু শেষ সময়ে এসে দেখা দিয়েছে জটিলতা। অর্থাৎ ১৭ নভেম্বর শেষ হচ্ছে বৈদেশিক ঋণের অ্যাভেলিভিলিটি পিরিয়ড।

পিআইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক জানান, ঢাকা-মাওয়া, মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে প্রকল্পের অগ্রগতি যথাক্রমে ৯৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং ৯৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন পরিচালিত হচ্ছে। ভাঙ্গা-যশোর অংশের অগ্রগতি ৯৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। কিন্তু এখনো কিছু কাজ পিছিয়ে আছে। যেমন ভাঙ্গা জংশন স্টেশন ভবনের অগ্রগতি এখনো ৭০ শতাংশ। টিটিপাড়া আন্ডারপাস নির্মাণের অগ্রগতি প্রায় ৬০ শতাংশ এবং টিটিপাড়াতে সিটিসি ভবনের অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ।ভাঙ্গা জংশন স্টেশন ভবন ও টিটিপাড়া আন্ডারপাস নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ৩ কোটি ৬৭ লাখ মার্কিন ডলার। ইতোমধ্যেই মাঠপর্যায়ে শেষ হওয়া কাজের বিপরীতে বিল দেওয়ার জন্য সার্টিফাই করা হয়েছে ১ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার। অবশিষ্ট কাজের আনুমানিক ব্যয় ১ কোটি ৯৮ লাখ ২০ হাজার ডলার। প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, প্রকল্পের প্রভিশনাল সাম এবং প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট খাতে ব্যয় কিছুটা সাশ্রয় হয়েছে। এই অর্থ ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি খাতের আওতায় সমন্বয় করে অতিরিক্ত কাজের জন্য ব্যয় করতে চীনা এক্সিম ব্যাংকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সম্মতি পাওয়া যায়নি।

এ অবস্থায় ঋণের অ্যাভেলিভিলিটি পিরিয়ডের মধ্যে সব কাজ শেষ করে এবং সমুদয় বিল পরিশোধ করা একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ৫ সেপ্টেম্বর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), প্রকল্প দপ্তর এবং চীনা এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় চীনা এক্সিম ব্যাংক জানায় তারা ৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার বেঁচে যাওয়া অর্থে অতিরিক্ত কাজের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছে। এছাড়া আগেই ঋণ অ্যাভেলিভিলিটি পিরিয়ড ১ বছর বাড়ানোর জন্য চীনা এক্সিম ব্যাংককে অনুরোধ জানানো হয়।এ পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মাস সময় বাড়িয়েছিল সংস্থাটি। কিন্তু জুলাই ও আগস্ট মাসে প্রায় দেড় মাস কাজে অগ্রগতি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হয়নি। তাই আবারও সময় বাড়ানোর অনুরোধ করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। তবে সভায় ইআরডির প্রতিনিধি জানান, এই ঋণের অ্যাভেলিভিলিটি পিরিয়ড চীন বাড়াবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেননা প্রকল্পের কাজ যেহেতু ৯৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে, সেহেতু চীনা এক্সিম ব্যাংক নাও বাড়াতে পারে।

Top