আমরা সংশোধন ও ক্ষমার রাজনীতিতে বিশ্বাসী - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমরা সংশোধন ও ক্ষমার রাজনীতিতে বিশ্বাসী


মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম:বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সাড়ে ১৫ বছরে রাজনৈতিকভাবে জামায়াতে ইসলামীর ওপর যে নির্যাতন করেছে, এর জন্য তাদের ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের একটি রেস্টুরেন্টে সিনিয়র সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। মহানগর উত্তর জামায়াতে ইসলামী এ সভার আয়োজন করে। জামায়াতের আমির বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছর সরকারের জুলুম-নির্যাতনের কারণেই আমরা আপনাদের সঙ্গে খোলা মনে কথা বলতে পারিনি। গণমানুষের কল্যাণে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারিনি। অথচ শুধু মানুষ নয় বরং আল্লাহর সব সৃষ্টিকে সম্মান করা আমাদের দায়িত্ব। মানুষ সৃষ্টির সেরা। মানুষের কল্যাণের জন্যই সবকিছু সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই মন্দের বিপরীতে মন্দের চর্চার কোনো সুযোগ নেই।কারও প্রতি কোনো প্রতিশোধ নেওয়া হবে না আশ্বস্ত করে শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। রাজনৈতিকভাবে আমাদের ওপর যারা জুলুম-নির্যাতন করেছে আমরা তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমরা সংশোধন ও ক্ষমার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তবে কোনো ভিকটিম বা ভিকটিমের পরিবার যদি আইনে আশ্রয় নেয়, তাহলে আমরা তাদেরকেও সহযোগিতা করবো। দল হিসাবে আমরা কোনো প্রতিশোধ নেব না। আমরা আদর্শ ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাসী। আর আদর্শ ডেমোক্রেসির মূলমন্ত্রই হচ্ছে যার যার মতো স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার এবং পরমতের প্রতি সহনশীলতা।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, অতীতে সাংবাদিকদের মুখে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাদের কলমকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। স্বাধীনভাবে লিখতে পারেনি। কিন্তু এখন সবাই জাগ্রত হয়েছে। আগামী দিনে আপনাদের সহযোগিতায় আমরা কাজ করবো ইনশাআল্লাহ।জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, আসুন, পচা পেছনটাকে (অতীত) পেছনে ফেলে দিই। এটা নিয়ে আর চর্চা না করি। এখন জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধভাবে কীভাবে এগোব, সেই রোডম্যাপ (রূপরেখা) তৈরি করি।আর কোনো বিভাজন চলবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, জাতির সব স্তম্ভের হাতগুলোকে জাতীয় স্বার্থে এক জায়গায় আসতেই হবে। একটা জাতি যখন ঐক্যবদ্ধ থাকে, গোটা বিশ্ব তাদের সম্মান করতে বাধ্য হয়। আর জাতিটা যখন বিভক্ত হয়ে পড়ে, তখন তাদের মাথার ওপর স্থায়ী মাতব্বরি করে এবং এতে ওই জাতির শুধু ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে। আজ আমাদের বড় প্রয়োজন ঐক্যের।শফিকুর রহমান বলেন, আমরা অতীতে যদি বিভক্ত হয়েই পড়ি দল-ধর্মের ভিত্তিতে…আমি বলব, এগুলো আমরা ভুলে যাই। আমরা বলতে চাচ্ছি, আমাদের এই প্রিয় দেশে যারাই জন্মগ্রহণ করবে, তিনি যে ধর্মেরই হোন, যে দলই সমর্থন করুন বা নির্দলীয় হোন, তিনি এ দেশের একজন গর্বিত মর্যাদাবান নাগরিক এবং রাষ্ট্র সব নাগরিককে যে অধিকার দিয়েছে, তা তাঁকে করুণা হিসেবে নয়, তার অধিকার হিসেবে তাঁকে দিতে হবে। এই অধিকার প্রাপ্তির জন্য যোদ্ধা হচ্ছেন রাজনীতিবিদেরা, যোদ্ধা হচ্ছেন কলমযোদ্ধারা (সাংবাদিক)।

ছাত্র-জনতার এক রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জাতি জেগে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, এখন এই জাগ্রত জাতিকে মনজিলে পৌঁছানোর জন্য আমাদের রাত–দিন কাজ করতে হবে।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা এই মতবিনিময় অনুষ্ঠান করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান ও গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ফখরুদ্দিন মানিক, প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ।

Top