রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখান - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখান


মোহাম্মাদ আমিনুল ইসলাম:কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে আজ মঙ্গলবার সারা দেশে শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে রাষ্ট্রীয় শোককে প্রত্যাখ্যান করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর পরিবর্তে আজ তারা চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তুলে অনলাইনে প্রচার কর্মসূচি পালন করবে। গতকাল সোমবার সংগঠনটির মো. মাহিন সরকারের নামে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচিঘোষনা করা হয়।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমাদের আহবানে সাড়া দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, নোয়াখালী, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, যশোর, ঠাকুরগাঁওসহ সারাদেশব্যপী সোমবার কর্মসূচি বিক্ষোভ ও ছাত্রসমাবেশ সফল করার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। একই সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবিসমূহের সাথে সংহতি প্রকাশ করার জন্য শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবি, শ্রমজীবী ও গণমানুষের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।এতে আরো বলা হয়, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশজুড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবীকে কেন্দ্র করে নির্বিচারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শত শত শিক্ষার্থীর মৃত্যু ও হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়ে যখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে তখনও শিক্ষার্থীদের দাবী মেনে না নিয়ে একাত্তরের হানাদার বাহিনীর মতো মধ্য রাতে বাসা বাড়িতে রেইড ব্লকের মাধ্যমে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে রিমান্ডের নামে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতন চালানো হচ্ছে।বিজ্ঞপ্তিতে মাহিন সরকার বলেন, বর্তমান সরকারের কর্তাব্যক্তিরা সংকট নিরসনে শিক্ষার্থীদের দাবী মেনে না নিয়ে প্রতিদিনই নির্মমভাবে শিক্ষার্থীদের দমন নিপীড়ন ও মানুষের জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় প্রচার করছে এবং মিডিয়ার সামনে দেওয়া সরকারের কর্তাব্যক্তিদের মায়া কান্না প্রচার করছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের বিচার না করে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে প্রতিদিন যে নির্মম উপহাস করা হচ্ছে। তার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের দাবী আদায়ের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় শোককে প্রত্যাখান করে মঙ্গলবার লাল কাপড় মুখে ও চোখে বেঁধে ছবি তুলা এবং অনলাইনে ব্যাপক প্রচার কর্মসূচি করার জন্য অনুরোধ করছি।

সকলেই একক বা ঐক্যবদ্ধভাবে লাল কাপড় মুখে ও চোখে বেঁধে ছবি তুলা এবং অনলাইনে প্রচার কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদরাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি, একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে আপনারা মঙ্গলবারের কর্মসূচি সফলে সহযোগিতা করুন।বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের উদ্দেশ্যে বলা হয়, ছাত্রসমাজের বুকে গুলি চালিয়ে বাংলার ইতিহাসে কোনো আন্দোলন দমন করা যায়নি। অবিলম্বে ছাত্রসমাজের নয় দফা দাবি মেনে নিয়ে দেশকে স্থিতিশীল করুন। বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবি উল্লেখ করে বলা হয়, আমরা সারাদেশের শিক্ষক, পেশাজীবি, শ্রমজীবী ও সকল নাগরিককে আমাদের কর্মসূচি পালনে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও আমাদের দাবী আদায়ের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।শাবিতে শোক পালনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান : কোটা আন্দোলন ঘিরে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আজ সরকারের দেশব্যাপী শোক পালনের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। গতকাল সন্ধ্যা সাতটায় এক বিবৃতিতে আন্দোলনের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব এ ঘোষণা দেন।মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতিতে আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, ‘সরকারি মদদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকার-দলীয় সন্ত্রাসী দিয়ে শত শত ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ছাত্রসমাজের সঙ্গে প্রহসনের সমান। রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ছাত্র-জনতা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।

বিবৃতিতে আসাদুল্লাহ আল গালিব আরও বলেন,এখন প্রতিটি শহীদ আমাদের জন্য শক্তি; সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দাবি আদায়ের পথপ্রদর্শক। যতক্ষণ না পর্যন্ত ছাত্র-জনতার হত্যার দায় সরকার নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, ছাত্র-জনতার হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত হচ্ছে, আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।গতকাল বিকেলে সাড়ে চারটা পর্যন্ত সোয়া এক ঘণ্টাব্যাপী শাবিপ্রবি প্রধান ফটকে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন সিলেটের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের অস্ত্রের মুখে বিবৃতি আদায়ের প্রতিবাদ, গুম- গ্রেফতার ব্যক্তিদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ছাত্র-জনতার হত্যার বিচারের দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করেন।

Top