প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে প্রস্তুত হচ্ছে
মোহাম্মাদ মুরাদ হোসেন: তাদের প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে প্রস্তুত হচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর আছে। তারা আবারও বিভিন্নভাবে হামলা চালানোর অপচেষ্টা করতে পারে।বিএনপি-জামায়াত,উগ্রবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী এবং দেশি-বিদেশি কুচক্রী মহল এখনো সক্রিয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন,দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান,যেখানে অস্ত্রধারী ক্যাডারদের খোঁজ পাবেন,তাদের তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে সহযোগিতা করবেন।এদের হাত থেকে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে হবে।শুক্রবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল-শিবির, জঙ্গিগোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা আর যাতে সহিংসতা ছড়াতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে নেতাকর্মীদের কারফিউ মেনে চলার অনুরোধ করেন তিনি। এ সময় ‘এরা দেশের ধ্বংস চায়’ এই শিরোনামে আওয়ামী লীগ সারা দেশে লিফলেট বিতরণ করবে বলে জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক। ওবায়দুল কাদের বলেন, সামাজিক মাধ্যমকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে দেশ-বিদেশ থেকে গুজব প্রচার করা হচ্ছে। এসব গুজবের জবাব দিতে দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় নিরীহ মানুষ হত্যার দায় বিএনপি-জামায়াতের বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। গত কয়েক দিনের সহিংসতায় কতজন মারা গেছেন, সে সংখ্যা আছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পত্র-পত্রিকায় দুইশর মতো বা তার চেয়ে একটু বেশি। আমরা এটার খোঁজখবর নিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, জাহাঙ্গীরের (গাজীপুরের সাবেক মেয়র) সঙ্গে জুয়েল নামের একটি ছেলে সব সময় থাকত, তাকে উত্তরায় মেরে লাশ লটকিয়ে রাখা হয়। কী বর্বর! নৃশংসতা। পুলিশকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, অনেক নিরীহ মানুষ মারা গেছেন। জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্যপট দেখতে ছিল, বাচ্চা যখন তাকাল, সেই বাচ্চা গুলি খেয়ে মারা গেল। এ ধরনের ঘটনা আরও অনেক ঘটেছে। রাস্তায় বেরিয়েছে নিষ্পাপ, নির্বোধ শিশু, কিছুক্ষণ পর দেখা গেল সেও লাশ হয়ে পড়েছিল! এ রকম ঘটনা অনেক আছে। এগুলো জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। সাংবাদিকরাও নিচ্ছেন। সব সত্য বেরিয়ে আসবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, জামায়াত-শিবিরের হাতে অস্ত্র ছিল। কিছু অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এখনো চলছে (উদ্ধার অভিযান)। উদ্ধার হবেই। তাদের নির্দেশদাতা ও হোতারা কিন্তু গ্রেফতার হয়েছে। রিমান্ডে আছে। অনেক সত্য বেরিয়ে আসবে। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা তো রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করছি। প্রশাসনিকভাবে মোকাবিলা করছি। আমরা আপনাদেরও সহযোগিতা চাই। এ অপশক্তি সবারই শত্রু। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলব।
ওবায়দুল কাদের বলেন, একাত্তর, পঁচাত্তর, ৩ নভেম্বর, ২১ আগস্টের খুনি এবং ২০১৩, ১৪, ১৫ সাল ও সর্বশেষ ২০২৪ সালে একই বিশ্বাসঘাতক, একই খুনি, তারা হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রদল, শিবির, উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠীর সুইসাইড স্কোয়াড অনুপ্রবেশ করে সারা দেশে পাকিস্তানি কায়দায় তাণ্ডব চালিয়েছে। আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীদের হত্যা করে সরকারের ওপর দায় চাপিয়েছে।
কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী দেশবিরোধী ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে না মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, পুলিশ ও সাধারণ মানুষ কোনো হত্যায় অংশ নিতে পারে না। আমরা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু সমর্থন করি না। প্রতিটি হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে, প্রধানমন্ত্রী এ কথা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানসিকতাকে ধারণ করে বলে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের তাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা কোনোভাবেই সফল হবে না। আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে আছি। অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানাব, কেউ যাতে আপনার সন্তানকে ভুল পথে ধাবিত করতে না পারে, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। অশুভ শক্তির কাছে স্বাধীন বাংলাদেশ পরাজিত হতে পারে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তে যখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্য-নাশকতার তথ্য। নির্দেশদাতা ও অর্থদাতাদের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। মির্জা ফখরুলের থলের বিড়াল বের হতে শুরু করছে, তখন তিনি আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি করছেন। তারা সব সময় জনগণের ওপর আস্থা না রেখে বিদেশি প্রভুদের ওপর ভর করে রাজনীতি করেন। এ ক্ষেত্রেও তারা তাদের সন্ত্রাসী চরিত্র উন্মোচিত হওয়া থেকে দায়মুক্তির জন্য বিদেশি হস্তক্ষেপের দাবি করছে।
সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগ গত ৪ দিন মূল্যায়ন সভা করেছে বলে জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, গত ৪ দিনে আমরা যে বৈঠকগুলো করেছি, কোথাও কি হাতাহাতি, মারামারি হয়েছে? তর্ক-বিতর্ক গণতন্ত্রের প্রাণ। আওয়ামী লীগ অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা করে। এখানে বিতর্ক হতেই পারে। যে কোনো বিষয়ে তর্ক হতেই পারে। কিন্তু কেউ তো মারামারি করেনি। কোনো হাতাহাতি হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন-আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সদস্য আনোয়ার হোসেন, আনিসুর রহমান, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ প্রমুখ।