স্থানীয় সরকারের ভোটে ইসলামী আন্দোলন হয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনসঙ্গী - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্থানীয় সরকারের ভোটে ইসলামী আন্দোলন হয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনসঙ্গী


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া:স্থানীয় সরকারের ভোটে ইসলামী আন্দোলন হয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনসঙ্গী।আগামী ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য ৬২ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) উপনির্বাচনে দলের অনেক নেতা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ গেল সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল। বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দলের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনও বলেছিল, আওয়ামী লীগ ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তাদের অধীনে নির্বাচনেও যাবে না। অন্যরা এ নীতিতে অটল থাকলেও ভোল পাল্টিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। আগামী ইউপি নির্বাচনেও দলটির অনেকে অংশ নেবেন বলে নিশ্চিত করেছেন ইসলামী আন্দোলনের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা।ইসলামী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও নিয়ন্ত্রক পীর পরিবারের বাড়ি বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নে। পাশের ইউনিয়ন চরকাউয়া। দুই ইউনিয়নকে বিভক্ত করেছে কীর্তনখোলা ও কালাবদর নদীর সংযোগ চ্যানেল, যেটি সাহেবেরহাট খাল নামে পরিচিত। উপনির্বাচনে চরকাউয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন বরিশাল মহানগর ইসলামী আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক মুফতি নাসির উদ্দিন নাইস। মহানগর সহসভাপতি সৈয়দ নাসির আহমেদ কাওছার এবং ইউনিয়ন সভাপতি আহমেদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন নাইস। সৈয়দ নাসির দলের আমির চরমোনাই পীর সৈয়দ রেজাউল করীমের চাচা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলটির প্রার্থী থাকা ইউনিয়নগুলোতে নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে মাঠে নেমেছেন।

সূত্র বলছে, সংসদ নির্বাচন বর্জনের তিন মাস পরেই উপজেলা নির্বাচনে রাজনৈতিক বিতর্ক এড়াতে দলটি প্রকাশ্যে অংশ নেয়নি। যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের বহিষ্কারও করা হয়নি। দলের নীতিনির্ধারকের স্তর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খালিদ সাইফুল্লাহ লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উপজেলায় এটাই ইসলামী আন্দোলনের প্রথম সাফল্য। তিন বছর আগে বিএনপি-জামায়াতের বর্জনের সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন ১৭টি ইউনিয়নে জয়ী হয়েছিল।দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, গত ২৭ জুন রাজধানীতে সারাদেশের সাংগঠনিক নেতাদের সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সভা হয়। ওই সভায় ইউপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। তৃণমূল নেতারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে মত দেন। তাদের যুক্তি, এ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চাঙ্গা হয়। নির্বাচন বর্জন করলে কর্মী-সমর্থকরা ভিন্ন দলের অংশগ্রহণকারী প্রার্থীর পক্ষে জড়িয়ে যান। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না হওয়ায় দলকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে না।সূত্র জানায়, ওই সভাতেই নিশ্চিত করা হয়, ২৭ জুলাই বিভিন্ন ইউনিয়নের উপনির্বাচনে প্রার্থী হলে দল থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া
হবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল সদরের চরকাউয়ায় নাসির উদ্দিন নাইস, বাকেরগঞ্জের চরাদীতে জেলা শ্রমিক আন্দোলনের সাবেক সভাপতি ইউনুস আহমেদ, বরগুনার বেতাগীর হোসনাবাদ ইউনিয়নে বরিশাল জেলা ইসলামী আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হাফিজুর রহমান, লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চরকাদিরাবাদ ইউনিয়নে মুফতি নুরুল্লাহ খালিদ, একই উপজেলার চরলরেঞ্জ ইউনিয়নের যুব আন্দোলনের কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি আব্দুস জাহের আরেফিসহ আরও বিভিন্ন ইউনিয়নে দলটির নেতারা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন।

এ ব্যাপারে ইসলামী আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) উপাধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম বলেন, সংসদ নির্বাচনের ফলের ওপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি প্রভাব ফেলে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রভাব শুধু ওই এলাকাভিত্তিক। এ বিশ্বাস থেকেই নেতাকর্মীরা ইউপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে। প্রার্থীরা যার যার দায়িত্বে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। দল তাদের দায়দায়িত্ব নেবে না। সিরাজুল বলেন, সারাদেশের ইউপি নির্বাচন আরও দুই বছর পর। এ সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচন দল পর্যবেক্ষণ করছে। দুই বছরের নির্বাচনী পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে দল সিদ্ধান্ত নেবে দলীয়ভাবে নির্বাচনে যাবে কিনা?

দলটির মহাসচিব অধ্যক্ষ মো. ইউনুস আহমেদ বলেন,জুনের শেষ সপ্তাহে সাংগঠনিক সভায় তৃণমূল নেতারা ইউপি নির্বাচনে অংশ নিতে ইতিবাচক মত দিয়েছেন।এ নির্বাচনের মাধ্যমে দলের দাওয়াতি কাজ ভালো হয়।তৃণমূল নেতাদের মতামত বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান সময়ের নির্বাচন দলীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

Top