যারা দেশ বিক্রির কথা বলে, তারা একাত্তরে পাকিস্তানের দালালি করেছে - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যারা দেশ বিক্রির কথা বলে, তারা একাত্তরে পাকিস্তানের দালালি করেছে


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা দেশ বিক্রির কথা বলে, তারা একাত্তরে পাকিস্তানের দালালি করেছে। তারা নিজেরাই দেশ বিক্রি করতে চায়। আমি জাতির পিতা শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি দেশও বেচি না, দেশের স্বার্থও বেচি না। দেশের স্বার্থরক্ষা করেই চলি। ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেউ মনে করল এদিকে ঝুঁকলাম নাকি ওইদিকে ঝুঁকলাম। এই ঝোঁকাঝুঁকির ব্যাপার আমার নেই। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’-জাতির পিতার এই পররাষ্ট্রনীতি মেনেই এগিয়ে যাচ্ছি। অনেকেই জিজ্ঞাসা করে, এমনকি বিদেশেও অনেকেই বলে, আপনি কীভাবে ব্যালেন্স করেন? আমি বলি, ব্যালেন্স কোনো কথা নয়। তাদের দুই দেশের (ভারত ও চীন) মধ্যে কী সম্পর্ক, সেটা তাদের ব্যাপার। আমি সেখানে নাক গলাই না। আমি সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।মঙ্গলবার গণভবনে ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্যে ভারত সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। পরে প্রশ্নোত্তরপর্বে ভারত সফর ছাড়াও সমসাময়িক রাজনীতি ও আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, তিস্তা প্রকল্প, ব্যাংকিং খাত, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলাসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দুই পাশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ উপবিষ্ট ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন।

চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের কল্যাণে ও উন্নয়নে কার সঙ্গে কতটুকু বন্ধুত্ব দরকার, সেটা করে যাচ্ছি। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভারত আমাদের চরম দুঃসময়ের বন্ধু। আবার চীন যেভাবে নিজেদের উন্নত করেছে, সেখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। সেগুলো সামনে রেখে সম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তা নিয়ে অনেক প্রস্তাব আসে। যেখান থেকে যে প্রস্তাবই আসুক না কেন, সেটা কতটুকু দেশের জন্য প্রযোজ্য; যে টাকাটা ঋণ নেব, তা শোধ দেওয়ার সক্ষমতা আছে কি না; যে প্রকল্প নেব, তা সম্পন্ন হওয়ার পর রিটার্ন কী আসবে, সেখান থেকে দেশের মানুষের কল্যাণে কতটুকু কাজে লাগবে-এসব বিবেচনা করে প্রতিটি কাজ করি। ৫৪টি নদীর পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সমস্যা রয়ে গেছে। আবার চীনেরও পানি তুলে নেওয়ার ঘটনা আছে। হিমালয় রেঞ্জের নদীগুলো নিয়ে নানা ধরনের দ্বন্দ্ব আছে, সমস্যা আছে। আবার সমাধানও আছে।

ভারত যদি তিস্তা প্রজেক্ট করে দেয়, সব সমস্যার সমাধান : তিনি বলেন, তিস্তা প্রকল্পটি যদি আমরা করি, চীন প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতও প্রস্তাব দিয়েছে। অবশ্যই আমি বিবেচনা করব কোন প্রস্তাবটায় দেশের মানুষের কল্যাণ আসবে, সেটাই করব। সবকিছু বিবেচনা করে করতে হবে। সেক্ষেত্রে ভারত যখন বলছে তারা করতে চায় এবং টেকনিক্যাল গ্রুপ পাঠাবে, অবশ্যই তারা আসবে। যৌথভাবে সেটা দেখব। চীনও সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। ভারতও করবে। যেটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য, লাভজনক, আমরা সেটাই করব। আবার ভারত যদি আমাদের প্রজেক্ট করে দেয়, সব সমস্যার সমাধানই হয়ে গেল। সেটা আমাদের জন্য সহজ হয়ে গেল না? ভারতের সঙ্গে যদি তিস্তা প্রজেক্টটা করি, তাহলে পানি নিয়ে প্রতিদিন প্যাঁ-প্যাঁ করতে হবে না। আমরা সেই সুবিধাটা পাব। এখানে কোনো সমস্যা দেখি না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন শপথ অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিলেন, গেলাম। এরপর রাষ্ট্রীয় সফরের আমন্ত্রণ জানালেন, আমি রাষ্ট্রীয় সফরও করে এলাম। চীন আমাকে দাওয়াত দিয়েছে, আমি চীনে যাব। আমি যাব না কেন? বাংলাদেশ সার্বভৌম দেশ। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়েই চলব। কার কী ঝগড়া, সেটা তাদের সঙ্গে থাক। আমার না। দেশের মানুষের কতটুকু উন্নতি করতে পারি, সেটাই আমার।

মমতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি : তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও গঙ্গা চুক্তি নবায়ন প্রশ্নে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছেন দেশটির পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মমতা ব্যানার্জি চিঠি লিখেছেন ওনার দেশের প্রধানমন্ত্রীকে।
এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এখানে আমার তো কিছু বলার নেই। এ ব্যাপারে আমার কোনো নাক গলানোর দরকারও নেই। আমার সঙ্গে সবার সম্পর্ক ভালো। একটা কথা বলতে পারি, ভারতের দলমত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক আছে। মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মমতা ব্যানার্জির ক্ষোভ ওনার সঙ্গে আলোচনা করে এটা করা হয়নি।

উনি তো ছিলেন না দিল্লিতে। আমি নিজেই ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু উনি ছিলেন না। উনি থাকলে নিশ্চয় ওনাকে নিয়েই আলোচনা করতাম। অন্তত আমি করতাম। আগে যে ফোন নম্বর ছিল (মমতার), একটা মোবাইল নম্বর ছিল। নির্বাচনে যখন বিজয়ী হয়েছিলেন, তখনো চেষ্টা করেছিলাম, তখন শুনেছিলাম এখন আর মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না।

গঙ্গা পানিচুক্তি নবায়নে আলোচনা হবে : প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কথা কাউকে বাদ দিয়ে হবে না। টেনকিন্যাল গ্রুপ আসবে। আলোচনা করবে। কথা বলবে। তারপর সমঝোতা হবে। আর মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে আমি একমত, নদীগুলোর ড্রেজিং করা উচিত। আমরাও সেটা করছি। ফলে বন্যার পানি এলেও ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয় না এখন। মমতা ব্যানার্জির চিঠির বিষয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, তিস্তার বিষয়ে আমরা প্রজেক্ট নিচ্ছি। নদীটিতে ড্রেজিং করা। পাড় বাঁধানো, পানি সংরক্ষণ, এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে। ওই সময়ের মধ্যে ওই চুক্তি যদি নবায়ন নাও হয়, তাহলেও চুক্তি কিন্তু অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, তিস্তা প্রকল্প করার জন্য ভারত সহযোগিতা করবে। যৌথ কমিটি হবে। এটা পানি ভাগাভাগির বিষয় নয়। গোটা তিস্তা নদীকে পুনরুজ্জীবিত করে উত্তরাঞ্চলে সেচের ব্যবস্থা করা। যাতে অধিক ফসল হয়। নেভিগেশনের ব্যবস্থা করব। এটাই সিদ্ধান্ত। গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের জন্য আলোচনা হবে। তাদের টেকনিক্যাল গ্রুপ আসবে, দেখবে এবং এটা হবে।

টাকা বিদেশে রাখতে গিয়ে দেশ ছেড়েই ভাগতে হয় : দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু মানুষ তো লোভী হয়ে যায়। টাকা-পয়সার লোভ এত বেড়ে যায় যে, দেশ রেখে বিদেশে রাখতে গিয়ে শেষে দেশ ছেড়েই ভাগতে হয়। তা সেই অর্থ বানিয়ে লাভটা কী হলো? এতই অর্থ বানিয়ে ফেলল যে শেষে আর দেশেই থাকা যায় না। তাহলে অর্থ বানিয়ে লাভটা কী হলো? এটা তো মানুষ চিন্তা করে না। বোধহয় নেশার মতো পেয়ে যায়। সেখানে যেটুকু সমস্যা হচ্ছে, তা সমাধানের চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং সেক্টর কেউ ভালো চালাচ্ছে। কেউ খারাপ চালাচ্ছে। অনেকে ঠিকমতো চালাতে পারেন না। এটা চিরাচরিত নিয়ম-যদি কোনো ব্যাংক দুর্বল হয়ে যায়, তাহলে তাকে সহযোগিতা করা। একটা ব্যাংকের সঙ্গে আরেকটা ব্যাংককে মার্জ করে দেওয়া, যাতে চালু হয় ভালোভাবে। সেখানকার আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ কিন্তু সরকারের দায়িত্ব। সেটাই পালন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ড. ইউনূস প্রসঙ্গ : ড. ইউনূসকে নিয়ে টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক নিবন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, মামলা চলছে, এজন্য কমেন্ট করতে চাই না। মামলা চলছে কথা বললে সাবজুডিস হবে কি না। কিন্তু যখন প্রশ্ন এসেছে, দু-চারটা কথা না বললে মানুষ বোধহয় ভুল বুঝতে থাকবে। তবে একটা প্রশ্ন তাদের করতে পারেন, আমেরিকা হোক বা ইউরোপ হোক, যে কোনো দেশে কেউ যদি বছরের পর বছর ট্যাক্স ফাঁকি দেয়, তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা সেই সরকার নেয়? তার উত্তরটা কিন্তু এরা দেয়নি। দ্বিতীয়ত, শ্রমিকদের নিয়ে এত কথা হয়, সেই শ্রমিকদের কল্যাণ ফান্ডের টাকা! সেই শ্রমিকদের টাকা যদি কেউ না দেয়, মেরে খায়, তার বিরুদ্ধে এরা কী ব্যবস্থা নেবে? কী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে? ইউনূসের বিরুদ্ধে আমরা বা আমাদের গভর্নমেন্ট লাগেনি বলেও মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।

গ্রামীণফোন আমিই ইউনূসকে দিয়েছিলাম : প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, গ্রামীণফোন, সেটা আমিই তাকে (ইউনূসকে) দিয়েছিলাম, এটাও মনে রাখা উচিত। গ্রামীণ ব্যাংক তার আমলে প্রায় কলাপস হয়ে যাচ্ছিল। তখন আমার সরকার ও আমি নিজে প্রথমে ১০০ কোটি টাকা, পরে ২০০ কোটি টাকা এবং পরে আরও ১০০ কোটি টাকা, এই ৪০০ কোটি টাকা সরকারের পক্ষ থেকে তাকে দিয়ে ব্যাংকটাকে চালু রাখতে সহায়তা করি।
তখন তিনি প্রস্তাব দিলেন একটি ফোন পেলে গ্রামের মেয়েদের ফোন দেবেন। এর থেকে যে লাভটা হবে, তা গ্রামীণ ব্যাংকে জমা হবে। সেটা দিয়ে ব্যাংক চলবে। তাকে জিজ্ঞাসা করা উচিত, আজ পর্যন্ত ওই গ্রামীণফোনের একটি টাকাও গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে কি না? দেওয়া কিন্তু হয়নি। এ সময় গ্রামীণ ব্যাংকের আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য অনেক সময় বিদেশ থেকে অনুদান এসেছে, এর কয়টা টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে গেছে? প্রতিটি সময় সেটা নিয়ে নতুন একটি ব্যবসা খুলে ব্যবসা করেছেন।

সব থেকে বেশি সহযোগিতা আমিই করেছিলাম : ড. ইউনূসের উত্থানের পেছনের ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা ঠিক তাকে আমরা সবাই মিলে তুলেছি। আমরা তাই খুবই প্রমোট করেছি। এখন সব দোষ আমার! আমি তাকে সব থেকে বেশি দিলাম। এইটুকু কৃতজ্ঞতা তো থাকা দরকার। আজ তিনি যে উঠেছেন, সেখানে সব থেকে বেশি সহযোগিতা আমিই করেছিলাম। তিনি বলেন, তার মাইক্রো ক্রেডিট সামিট-মাইক্রো ক্রেডিট আন্তর্জাতিকভাবে খুব বেশি গ্রহণযোগ্য ছিল না। আমি কো-চেয়ার হিসাবে অংশগ্রহণ করি।
জাতিসংঘে প্রস্তাব আনি এবং আমি সবাইকে বোঝাই। কারণ আমিও ভাবতাম যে খুব ভালো, মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করে। কিন্তু ধীরে ধীরে পরবর্তী সময়ে আমরা দেখলাম এটা দারিদ্র্যমুক্ত নয়, এটা দারিদ্র্য লালনপালন করে। ওই মানুষগুলো দিনরাত কাজ করার পর যে উচ্চহারে সুদ দিতে হয়, বিভিন্নভাবে প্রায় ৪০-৪৫ ভাগ সুদ দিতে হতো। যশোরের যে এলাকায় হিলারি ক্লিনটনকে নিয়ে যেসব মানুষকে ক্ষুদ্রঋণ দিয়েছিল, সেই পরিবারগুলো এখন কোথায়? খোঁজ করেন।

আমি কখনো তদবির করতে যাইনি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে লিখেছে নোবেল প্রাইজের জন্য আমার সঙ্গে নাকি দ্বন্দ্ব। আমার সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব নেই। জীবনেও নোবেল প্রাইজের জন্য আমার কোনো আকাক্সক্ষাও নেই। কারণ আমার লবিস্ট রাখার মতো টাকাও নেই, পয়সাও নেই। আর আমি কখনো ওটা চাইনি। পার্বত্য শান্তিচুক্তি হওয়ার পর দেশে-বিদেশে অনেক নোবেল লোরিয়েটরা আমার জন্য লিখেছে। কই আমি তো কখনো তদবির করতে যাইনি। কারও কাছে বলতেও যাইনি। কী পেলাম না পেলাম, সেটা আমার মাথার মধ্যেও নেই। যিনি অর্থনীতি নিয়ে কাজ করলেন, ব্যাংকের একজন এমডি। তিনি যখন নোবেল প্রাইজ পান, তার সঙ্গে আমি কনটেস্ট করতে যাব কেন?

আমি শেখ মুজিবের মেয়ে, এ জায়গাটায় কেউ আসতে পারবে না : বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, শেখ হাসিনা কারও সঙ্গে জেলাসি করে না। শেখ হাসিনা জাতির পিতার মেয়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। অন্তত এই জায়গাটায় কেউ আসতে পারবে না। সেটাই আমার গর্ব। প্রধানমন্ত্রী এটা তো সাময়িক ব্যাপার। আমি শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি দেশও বেচি না, দেশের স্বার্থও বেচি না। দেশের স্বার্থরক্ষা করেই চলি। এর জন্য একবার আগে ক্ষমতায় আসতেও পারিনি। কিন্তু আমার কিচ্ছু আসে যায় না। আমি এর-ওর কাছে ধরনা দিয়ে বেড়াই না। সব থেকে বেশি যে করেছে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে বেড়াচ্ছেন। ওনার (ইউনূস) সঙ্গে আমার জেলাসির কী আছে! সে আসুক না। মাঠে আসুক। চলুক আমার সঙ্গে। আমেরিকায় ডিবেট হয় না? আসুক কথা বলব। এ সময় ওয়ান-ইলেভেনের পর ড. ইউনূসের রাজনৈতিক দল চালুর চেষ্টা ও তাতে ব্যর্থ হওয়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

বিক্রির ওজনটা কীভাবে করা হয়েছে : ভারতকে রেলপথ ট্রানজিটের সুবিধা দেওয়ার সমালোচনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, রেল যোগাযোগ চালুর সমালোচনা হচ্ছে কেন? জবাবে প্রশ্নকর্তা বলেন, বলা হচ্ছে ভারতের কাছে বাংলাদেশের বিক্রির ষড়যন্ত্র চলছে। যারা অপপ্রচার চালায় তাদের মুখরোচক গল্প। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার একটা প্রশ্ন আছে। বিক্রির ওজনটা কীভাবে করা হয়েছে? কোনো কিছু বিক্রি হলে তো ওজন মেপে হয় না? এখন তো ইলেকট্রনিক মেশিন আছে। আগে দাঁড়িপাল্লায় মাপা হতো। তো কিসে মেপে বিক্রি হচ্ছে? আর বিক্রিটা হয় কীভাবে? বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। যারা সমালোচনা করে, তাদের জানা উচিত একটিমাত্র মিত্রশক্তি, যারা আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজেদের রক্ত ঢেলে এ দেশ স্বাধীন করে দিয়েছে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে প্রশিক্ষণ পেয়েছে।

যারা বলে, তাদের মাথাই ভারতের কাছে বিক্রি করা : তিনি বলেন, পৃথিবীর যেখানে মিত্রশক্তি হিসাবে সাহায্য করেছে, তারা কিন্তু সেই দেশ থেকে ফেরত যায়নি। এখনো জাপানে আমেরিকান সৈন্য, জার্মানিতে রাশান সৈন্য-এরকম বিভিন্ন দেশ দেখলে দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে। এখানে ভারত ব্যতিক্রম। তারা মিত্রশক্তি হিসাবে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে এসেছে। যখনই জাতির পিতা চেয়েছেন তারা ফেরত যান, তাদের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছেন। ফেরত নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, এরপর যারা বলে বিক্রি হয়ে যাবে। তাতে বিক্রিটা হয় কীভাবে? যারা এটা বলে তাদের মাথাই ভারতের কাছে বিক্রি করা। সামরিক শাসক জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া ওপর দিয়ে ভারতবিরোধী কথা বলেছিল, আর ভেতর দিয়ে তাদের পা ধরে বসে ছিল। এগুলো আমাদের নিজের দেখা ও জানা। তাই দেশ বিক্রির কোনো অর্থ হয় না।

সার্বভৌম রক্ষা ও স্বকীয়তা বজায় রেখেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক : প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ। যত ছোট হোক, এটা আমাদের সার্বভৌম দেশ। সেই সার্বভৌম রক্ষা ও স্বকীয়তা বজায় রেখে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে কাজ করছি। এই যে আমরা সব যোগাযোগ ব্যবস্থা খুলে দিলাম, তাতে সবচেয়ে বেশি লাভবান আমাদের দেশের মানুষ। তারা চিকিৎসা, পড়াশোনার জন্যই যায় বা অন্যান্য কাজে যায়, হাটবাজার করতে যায়, আজমির শরিফে যায়, আবার বিভিন্ন জায়গায় যায়। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র তো আরও উন্মুক্ত হবে। কাজেই বিক্রি আমরা করি না। যারা বিক্রির কথা বলে, তারা বেচার জন্য অথবা ‘ব্যবহার করুন আমাকে’-এ কথা নিয়ে বসে থাকে। এটা হলো বাস্তবতা। শেখ হাসিনা এ দেশকে বিক্রি করে না। কারণ, আমরা এ দেশ স্বাধীন করেছি। যারা বিক্রির কথা বলে, তারা একাত্তর সালে পাকিস্তানের দালালি করেছিল।

ট্রানজিট দিলে ক্ষতিটা কী : শেখ হাসিনা বলেন, রেল যেগুলো বন্ধ ছিল, তা আমরা ধীরে ধীরে খুলে দিয়েছি। যাতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হচ্ছে। ওই অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হচ্ছে, তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হচ্ছে। যেসব জিনিস আমাদের দেশে নেই, তা আনার সুযোগ হচ্ছে। অর্থনীতিতে এটা সুবিধা হচ্ছে। আমরা কি চারদিকে দরজা বন্ধ করে বসে থাকব? সেটা হয় না। তিনি বলেন, ইউরোপের দিকে তাকান, সেখানে কোনো বর্ডারই নেই, কিছুই নেই। তাহলে একটা দেশ আরেকটা দেশের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে? এক সময় সেখানে নোম্যান্স ল্যান্ড ছিল। এখন কিন্তু সেসব কিচ্ছু নেই। এখন সেসব উঠে গেছে। কাউকে বাদ দিয়ে নয়, সব দেশ স্বাধীন দেশ। কোনো দেশ কারও কাছে বিক্রি করেনি। দক্ষিণ এশিয়ায় কেন বাধা দিয়ে রাখব? দেশের মানুষের কথা চিন্তা করতে হবে, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন সব থেকে বেশি প্রয়োজন।

গান্ধী পরিবারের পারিবারিক বন্ধন, সবকিছুর ঊর্ধ্বে : ভারত সফরে দেশটির কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ সৌজন্যমূলক নাকি আপনাদের মধ্যে অন্য কোনো অর্থপূর্ণ আলাপ-আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চান এক সাংবাদিক। এর জবাবে হেসে হেসে তিনি বলেন, ‘আমি তো বলেছি, আমার সঙ্গে ভারতের প্রতিটি দল, সবার সঙ্গে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক সব রাজনীতি, সবকিছুর ঊর্ধ্বে। এটা নিয়ে এত চিন্তার কিছু নেই। সোনিয়া গান্ধী ও তার ছেলেমেয়ে এবং প্রণব মুখার্জি ও তার ছেলেমেয়ের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক থাকার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ইন্দিরা গান্ধীর পরিবারের সঙ্গে আমাদের পরিবারের একটা পারিবারিক বন্ধন আছে। সেটা সব রাজনীতি, সবকিছুর ঊর্ধ্বে।

Top