দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার আহ্বান - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার আহ্বান


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমরা নিজের ফসল নিজেরা উৎপাদন করব। কারও কাছে হাত পেতে চলব না। আমাদের খুব তিক্ত অভিজ্ঞতা ১৯৭৪ সালে। নগদ টাকা দিয়ে কেনা খাদ্য আসতে দেয়নি। কৃত্রিমভাবে একটা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা হয়েছিল। যার উদ্দেশ্য ছিল জাতির পিতাকে যেভাবে হোক মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা। আর সেটাও যখন সফল হয়নি তখনই ১৫ আগস্ট ঘটাল। এখনও কিছু লোকের কিন্তু সেই চেষ্টাটাই আছে। শনিবার গণভবনে আষাঢ় মাসের প্রথম দিন বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৩ মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় দেশবাসীকে অধিক পরিমাণে গাছ লাগিয়ে ‘সবুজ বাংলাদেশ’ গড়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গাছ আমাদের প্রাণ, গাছ আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন দেয়। দুর্যোগ প্রতিরোধে গাছ আমাদের প্রথম সুরক্ষা দেয়। তাই সবুজ বাংলাদেশ গড়তে সারা দেশে সাধ্যমতো গাছ লাগাতে হবে। আমরা যতবেশি গাছ লাগাতে পারব, গাছ আমাদের ফল দেবে, কাঠ দেবে। এগুলো বিক্রি করে অর্থও পাওয়া যাবে।

বৃক্ষ নিধন করাই বিএনপির চরিত্র : বিএনপির নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছোটবেলায় দেখেছেন এয়ারপোর্ট থেকে বাংলা একাডেমি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আইল্যান্ডে কৃষ্ণচুড়া গাছ ছিল। সেই গাছে যখন ফুল ফুটত তখন অপরূপ রূপে এই শহরটা জেগে উঠত। জিয়াউর রহমান এক এক করে সব গাছ কেটে ফেলেন। তিনি বলেন, বিএনপি শুধু ক্ষমতায় থাকাকালেই নয়, বিরোধী দলে থাকাকালেও আন্দোলনের নামে গাছ কেটেছে। বিএনপি-জামায়াত ২০১৩ সালে শুধু আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়নি আন্দোলনের নামে হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলেছিল। বৃক্ষ নিধন করাই বিএনপির চরিত্র। সবাইকে অন্তত একটি করে ফলদ, বনজ ও ভেষজ গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবে দেশটাকে যদি সব সময় সবুজ করে রাখতে পারি তাহলে বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকবে না। সেজন্য সবাইকে আমাদের এভাবেই চিন্তা করে কাজ করতে হবে।

বিএনপি নির্বাচন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিল : বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা জিয়ার অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করতে নির্বাচন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে তা নয়, এ দেশের গণতান্ত্রিক ধারাটাও নষ্ট করেছিল। তিনি বলেন, আজকে তারা ভোটের অধিকারের কথা বলে। আমার খুব হাসি পায়, যখন দেখি বিএনপি ভোটের কথা উচ্চারণ করে, নির্বাচনের কথা বলে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের ভোট চুরি করে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণ এ বিষয়ে খুব সচেতন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন তার প্রমাণ। জনগণের আন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়াকে ৩০ মার্চ পদত্যাগ করে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়। অর্থাৎ ভোট চুরির অপরাধেই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।

পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন আ.লীগই প্রথম শুরু করে : সরকার প্রধান বলেন, দুর্যোগ প্রতিরোধে গাছ আমাদের প্রথম সুরক্ষা দেয়। উপকূলে সবুজ বেষ্টনি তৈরি, ম্যানগ্রোভ তৈরি করা, জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলকে বাঁচাতে হলে আমাদের ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। পরিবেশ রক্ষার জন্য আন্দোলন দেশে আওয়ামী লীগই প্রথম শুরু করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষক ও কৃষি বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। সেক্ষেত্রে কৃষক লীগের দায়িত্ব অনেক বেশি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ফসলি জমি যেন নষ্ট না হয় : এ বিষয়ে বিশেষ লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামে আমাদের বহু জায়গা আছে। নদীর পার, যেসব এলাকায় ভাঙন হতে পারে সেসব জায়গায় বড় শিকড় সমৃদ্ধ মাটি কামড়ে ধরে রাখার মতো গাছ, উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে গাছ লাগাতে হবে। এছাড়া বাড়ির চারপাশ এবং ছাদে ছাদবাগান করতে হবে। তিনি বলেন, মালটি স্টোরেড বিল্ডিং আর ডেভেলপমেন্টের নামে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে শুরু করে গুলশাল-বনানী এলাকায় অতীতে যেসব বড় বড় গাছ ছিল সেগুলো সবই উজাড় হয়েছে। ফলে আগে যে সবুজ ছিল সেটা আর থাকেনি। এখন অবশ্য ছাদবাগান হচ্ছে সবই এর দিকে ঝুঁকছে। সেটাও করতে পারেন সবাই। এতে বাড়িটাও ঠান্ডা থাকবে, নিজের গাছের তরি-তরকারিও মিলবে। নিজের গাছের তরি-তরকারি খাওয়ার স্বাদটাই আলাদা।

যত্রতত্র কুরবানি করে জায়গা নষ্ট যেন না হয় : প্রধানমন্ত্রী এ সময় সবাইকে আগাম ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে যত্রতত্র কুরবানি করে জায়গা যেন নষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নিজেদের আবাসস্থল এবং এর চারপাশে নিজেদেরই নজরদারি রাখতে হবে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ‘বিএডিসি’ প্রায় বন্ধই করে দিয়েছিল। কোনোমতে একটা অংশ বেঁচে ছিল। কারণ বীজ উৎপাদন বেসরকারি খাতে হবে এবং বিদেশ থেকে আমদানি করবে। ওদের কিছু লোক ব্যবসায় জড়িত ছিল। কিন্তু আমরা আমাদের বীজ উৎপাদনের জন্য বীজ গবেষণাগার গড়ে তোলায় দেশেই ভালো বীজ উৎপাদন হচ্ছে। এখন দেশে যে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল হয় এবং সব ধরনের শাক-সবজি ও ফলমূল ১২ মাসই পাওয়া যাচ্ছে, সেটা আমাদেরই গবেষণার ফসল।

তিন ফসলি জমি নষ্ট করে কোনো শিল্পায়ন করা যাবে না এমন নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মূল নির্ভরতা হচ্ছে কৃষির ওপর। কাজেই এই কৃষি অর্থনীতিটাকেই আমরা আরও উন্নত করে শিল্পায়নে যাব। যেজন্য আমরা সারা দেশে ১শ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। কেননা যততত্র শিল্পকারখানা গড়ে তুলে আমাদের তিন ফসলি জমি কোনোমতেই নষ্ট করা যাবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে যে যে ওয়াদা দিয়েছিল তার সবই পূরণ করেছে।

১৯৮৪ সাল থেকে কৃষক লীগ আষাঢ়ের প্রথম দিনটি থেকে সারা দেশে বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি পালন করে আসছে। একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ অভিযানে অবদানের জন্য কৃষক লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকে পুরস্কৃত করেন এবং নেতাকর্মীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কৃষক লীগ সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ বিশ্বনাথ সরকার বিটু। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীমা শাহরিয়ার অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। কর্মসূচি উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে তিনটি গাছের চারা রোপণ করেন।

Top