প্রস্তাবিত সাইবার আইন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার
মোহাম্মাদ মুরাদ হোসেন: প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালা, ২০২৪ মতপ্রকাশ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার উল্লেখ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি)নির্বাহী পরিচালক ড.ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, অংশীজনদের তীব্র আপত্তি থাকা সত্ত্বেও নিবর্তনমূলক ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’-এ মতপ্রকাশ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার হরণমূলক ধারাসমূহ অপরিবর্তিত রেখে সংশ্লিষ্ট আইনের বিধিমালা প্রণয়ন ফলপ্রসূ হবে না।তিনি বলেন, প্রথমে সাইবার নিরাপত্তা আইনে বিদ্যমান ত্রুটিগুলো সংশোধন করতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে বিধিমালাকে ঢেলে সাজাতে হবে।বিধিমালাটি প্রণয়নের আগে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে, এমন প্রতিফলন খসড়ায় দেখা যাচ্ছে না উল্লেখ করে বলা হয়, নির্বতনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধিমালা, ২০২০-এর ১৯টি বিধি ও একটি তফসিলের হুবহু অনুকরণে প্রণীত প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালাটির পরিসর অত্যন্ত সীমিত। একইসাথে বিধিমালাটিতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-পরিকাঠামো ও সাইবার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ঘটনার সংকীর্ণ ও অসম্পূর্ণ সংজ্ঞায়ন এবং মাথাভারী জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি, অস্পষ্ট সাংগঠনিক-কাঠামো এবং জবাবদিহিহীন ও অস্বচ্ছ কার্যপ্রক্রিয়া; সংশ্লিষ্ট লোকবলের যোগ্যতা উল্লেখ না থাকা; আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও তথ্য বিনিময়-সংক্রান্ত বিধান এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবকর্তৃক অনুসরণীয় মানদণ্ডের অনুপস্থিতির কারণে বিধিমালাটি যুগোপযোগী হয়নি। তাছাড়া, ডিজিটাল সাক্ষ্যের বিভিন্ন শাখা উপেক্ষাসহ ডিজিটাল সাক্ষ্য-বিষয়ক মূল আইনের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ বিধান, আলামত গ্রহণ ও প্রতিবেদন প্রেরণে আইনি শূন্যতা থাকায় আলোচ্য বিধিমালাটি খুব একটা কার্যকর হবে না বলেও মনে করছে সংস্থা দুইটি।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) টিআইবির ধানমণ্ডিস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থা দুইটির পক্ষে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালা, ২০২৪ এর পর্যালোচনা ও সুপারিশপত্রটি উপস্থাপন করেন- এটির প্রণয়নকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুপন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান; উপদেষ্টা, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের ও আর্টিকেল নাইনটিন-এর আঞ্চলিক পরিচালক (বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া) শেখ মনজুর-ই-আলম। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
প্রস্তাবিত বিধিমালাটির পরিসর অত্যন্ত সংকীর্ণ রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা, যথাযথ সংজ্ঞায়ন এবং অত্যাবশ্যকীয় যোগ্যতা, সামর্থ্য ও সক্ষমতা-সংক্রান্ত বিষয়ের উল্লেখ ব্যতিরেকে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি, ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ও ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব-সম্পর্কিত বিধানাবলী উল্লেখ করা হয়েছে। একইসাথে বহুল বিতর্কিত নিবর্তনমূলক ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-এর অনুষঙ্গ ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধিমালা, ২০২০’-এর অনুরূপ আলোচ্য বিধিমালায় সাইবার নিরাপত্তার সংজ্ঞা, সাইবার এজেন্সির সাংগঠনিক-কাঠামো, জনবল, কার্যপরিধি, মহাপরিচালক ও পরিচালকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং জাতীয় কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের দায়িত্ব ও কার্যাবলী নির্ধারণ করা হয়েছে। এতেই প্রতীয়মান হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির অভিজ্ঞতা প্রস্তাবিত বিধিমালায় উপেক্ষিত হয়েছে। অধিকন্তু, মূল আইন ও বিধিমালার কোথাও জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির কার্যক্রমে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত-প্রক্রিয়া সংক্রান্ত কোনো ধারা বা বিধির উল্লেখ নেই। এতে করে স্বাধীন তদারকি-কাঠামোর অনুপস্থিতিতে মানবাধিকারের নিরিখে ব্যক্তির গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ, সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাসহ ইচ্ছাধীন কার্যক্রম পরিচালনার ঝুঁকি রয়েছে।