দুদকে তলব বেনজীরকে - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুদকে তলব বেনজীরকে


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া:অবৈধ সম্পদের অভিযোগের বিষয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।মঙ্গলবার কমিশন সভায় এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর বিকালেই বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে বেনজির আহমেদের গুলশান-১ এর আইকন টাওয়ারে জিজ্ঞাসাবাদ সংক্রান্ত দুদকের নোটিশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ৬ জুন বেনজীর আহমেদ এবং ৯ জুন তার স্ত্রী জিসান মির্জা এবং দুই মেয়ে-ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দুদকের দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।এদিকে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সম্পদের ওপর ক্রোকি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) করা হয়েছে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও। এছাড়া বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে থাকা বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন থেকে শেয়ারবাজারে তারা আর কোনো লেনদেন করতে পারবেন না।

দুদক সূত্র জানায়, ৬ জুন সকাল ১০টায় সেগুনবাগিচায় সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বেনজীর আহমেদের নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অপর নোটিশে ৯ জুন সকাল ১০টায় তার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হাজির হতে বলা হয়েছে। বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী ছাড়াও তাদের তিন মেয়ের মধ্যে প্রথম ও মেঝো মেয়েকে দুদকের অনুসন্ধানের আওতায় আনা হয়েছে। তবে ছোট মেয়ের বয়স এখনো ১৮ বছর না হওয়ায় তাকে এই অনুসন্ধানের বাইরে রাখা হয়।

সূত্র আরও জানায়, বেনজীর আহমেদকে তার অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানকারী দলের তিন সদস্য ছাড়াও একজন মহাপরিচালক ও একজন পরিচালক জিজ্ঞাসাবাদ সেলে উপস্থিত থাকার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

দুদকের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক জয়নুল আবেদীন ও নেয়ামুল গাজীর সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি টিম বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের অবৈধ সম্পদের অভিযোগ অনুসন্ধানে নিয়োজিত রয়েছে। কমিশন মনে করে, টিমের সদস্যরা যা সত্য তা-ই অনুসন্ধানে বের করে আনবে এবং কমিশনের কাছে পরবর্তী সুপারিশ দেবে।দুদকের দায়িত্বশীল অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তান অনুসন্ধান চলাকালীন যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন, সেজন্য টিমের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে কমিশনে একটি আবেদন জানিয়ে রাখা হয়েছে। তা হলো-তারা (বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যবর্গ) অনুসন্ধানকালে তাদের বিদেশ গমনের ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান। কমিশন থেকে লিখিতভাবে অনুসন্ধান টিমকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিলে তারা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) মাধ্যমে ইমিগ্রেশন বিভাগকে তা জানিয়ে দেবে।

জানা গেছে, গত ২৩ ও ২৬ মে দুদকের আবেদন আমলে নিয়ে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা সব ধরনের সম্পদের দলিল, ঢাকায় গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট ও কোম্পানির শেয়ার জব্দের (ক্রোক) নির্দেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত। ওই আদেশের ফলে সোমবার পুঁজিবাজারের ইলেকট্রনিক্স শেয়ার সংরক্ষণাগার সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা সব বিও হিসাব (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) ফ্রিজ করে রাখতে নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় হিসাবসমূহে শেয়ার ও অর্থ লেনদেন করা যাবে না।আদালতের আদেশে দেখা গেছে, বেনজীর আহমেদের বিও হিসাব রয়েছে আইএফআইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড ও ড্রাগন সিকিউরিটিজ লিমিটেড নামের ব্রোকারেজ হাউজে। আর সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস লিমিটেড ও ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তার স্ত্রী জিশান মির্জা, ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তার বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ডাইনেস্টি সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তার ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বিও হিসাব আছে। বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ৫টি ব্রোকারেজ হাউজে বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা ৬টি বিও হিসাব পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হলো। আদালতের আদেশ মোতাবেক ওই হিসাবগুলোর ওপর অবরুদ্ধকরণ আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় অর্থ উত্তোলন করা যাবে না।

২৬ মে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা ১১৯টি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, সাভারের একটি জমি ছাড়াও মাদারীপুরের ১১৪টি দলিলের সম্পত্তি রয়েছে। ২৩ মে ৮৩টি দলিলে ক্রয়কৃত সম্পত্তি ক্রোক করা হয়। সেই সঙ্গে ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও তার সিকিউরিটিজের (শেয়ার) টাকা অবরুদ্ধ করা হয়।

প্রসঙ্গত, বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাব এবং র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল। তখন তিনি আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন।
দুদক বলছে, বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল জমি ও কোম্পানির শেয়ারের মালিকানা অর্জন করেছেন। সম্প্রতি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধানে কমিটি করে দুদক।

Top