প্রকট হচ্ছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল
মু.এবি সিদ্দীক ভুঁইয়া :উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে প্রকট হচ্ছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা।নির্বাচন উন্মুক্ত রাখায় দলের নেতারাই হয়েছেন নিজেদের প্রধান প্রতিপক্ষ।এতে প্রকাশ্যরূপ নিচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল।নেতাকর্মীরা জড়িয়ে পড়ছেন সংঘাত-সহিংসতায়। শিকার হচ্ছেন হামলা-মামলার।কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সংঘাতে মদদ দিচ্ছেন অনেক সংসদ-সদস্য।মাইম্যান’ তৈরি করতে গিয়ে নির্বাচনে হস্তক্ষেপও করছেন কেউ কেউ। ফলে নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে সমন্বয়হীনতা, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, ক্ষমতার বলয় সৃষ্টি ও বিভেদের চিত্র এখন স্পষ্ট। এমন অবস্থায় আগামী দিনে দলীয় ঐক্য ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জে ক্ষমতাসীনদের। বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, অভ্যন্তরীণ সংঘাত-সহিংসতার বিষয়ে তারা খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। সৃষ্ট সংঘাত-সহিংসতার বিষয়গুলো সামাল দিতে সময় লাগবে। তবে সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, এমপি-মন্ত্রী এবং দলের প্রভাবশালীদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করতে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন। তবুও অনেকেই সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছেন।অনেক স্থানেই প্রার্থীরা সংসদ-সদস্যেদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করছেন। অনেক স্থানেই হামলা ও সহিংসতা হচ্ছে। দল অবশ্যই তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবে।একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ভোটের পরিবেশ ও ভোটার উপস্থিত ধরে রাখতে এমন সিদ্ধান্ত (দলীয় প্রতীক না রাখা) কার্যকর হয়েছে। নইলে যে ভোটার উপস্থিতি হয়েছে, সেটাও হতো না।তবে দলের সাংগঠনিক কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। সেগুলো অস্বীকার করার উপায় নেই। দলীয় মনোনয়ন না থাকায় এ প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্রে করে যে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে, এগুলো সামাল দিতে সময় লাগবে। এগুলো নিয়ে জেলা এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের কাজ করতে হবে।আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, উপজেলা পরিষদ একটা বড় নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা বেশি থাকে। ফলে কিছু কিছু স্থানে সংঘাতের ঘটনা ঘটে। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেসব স্থানেই সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটছে, সেগুলোর বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করা হবে।
প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয় ৮ মে। নির্বাচনের আগে-পড়ে সংঘাত-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নির্বাচনি এলাকার আধিপত্য বিস্তার এবং ভোট কেন্দ্র করে নানা ধরনের উসকানির কারণে এসব সংঘর্ষের ঘটনায় জড়াচ্ছেন তারা। পরিস্থিতি পর্যাবেক্ষণ করে দেখা যায়, প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও এসব ঘটনা ঘটছে। তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে মাগুরার শ্রীপুরে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে দুই পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকের সংঘর্ষে ২০ জন আহত হন। নোয়াখালীর সুবর্ণচরে পালটাপালটি হামলা ও ভাঙচুরের চারটি ঘটনায় আহত হন ২৭ জন। নাটোরে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর এক সমর্থককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারধর করেছেন অপর পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা।মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে এক প্রার্থীর নির্বাচনি ক্যাম্পে হামলা করে তার এক সমর্থককে কুপিয়ে জখম করা হয়। মানিকগঞ্জের শিবালয়ে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর ও এক সমর্থককে লক্ষ্য করে গুলির অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও সারা দেশে প্রায় অধিকাংশ স্থানেই এমন ছোট-বড় ঘটনা ঘটছে। নিজেদের মধ্যে বিরোধে জড়িয়ে পড়ছেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা। ফলে বাকি ধাপগুলোয় পরিবেশ আরও খারাপের দিকে যেতে পারে, আশঙ্কা করছেন অনেকেই।এমতাবস্থায় সংগঠনকে আগের মতো ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করা কঠিন হবে আওয়ামী লীগের জন্য। যদিও দলটির নেতাদের ভাষ্যমতে, প্রতিপক্ষ না থাকার কারণেই বিভাজন বাড়ছে। শক্ত প্রতিপক্ষ থাকলেই দলের এমন অবস্থা থাকবে না। ভবিষ্যতে সবাই দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেবে এবং দলকে ঐক্যবদ্ধ করবে বলেও আশা তাদের।নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয় আওয়ামী লীগ। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের বিরত রাখা সম্ভব হয়নি। নির্দেশনা উপেক্ষা করে অনেকেই থাকেন ভোটের মাঠে। প্রথম ধাপে জয়ও পেয়েছেন অনেকে। তাদের পক্ষে সরসারি কাজ করেছন এমপি-মন্ত্রীরা।
শুধু তাই নয়, নির্বাচন কেন্দ্র করে দলের তৃণমূলে সংঘাত-সহিংসতার পেছন থেকে মদদ দিচ্ছেন তারা। মাইম্যান তৈরি করতে ভোটে কারচুপি, কেন্দ্র দখল, ফলাফল নিজেদের পক্ষে ঘোষণাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তাদের কারণে তৃণমূলের সংঘাত বেড়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।