দেশকে এগিয়ে নিতে স্বাধীন বিচার বিভাগ পারে
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীন বিচার বিভাগ, শক্তিশালী সংসদ ও প্রশাসন একটি দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে পারে। জনগণের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর আমরা বিচার বিভাগকে প্রশাসন থেকে আলাদা করে সম্পূর্ণ স্বাধীন করেছি।শনিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন সাউথ এশিয়ান কনস্টিটিউশনাল কোর্টস ইন দ্যা টুয়েন্টি-ফার্স্ট সেঞ্চুরি : লেসন্স ফ্রম বাংলাদেশ অ্যান্ড ইন্ডিয়া’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ভারতের প্রধান বিচারপতি ড. ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড় বক্তৃতা করেন।
উচ্চ আদালতের রায়ে সামরিক শাসন ও সংবিধান লংঘন করে ক্ষমতা দখলকে অবৈধ হিসাবে রায় দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর উচ্চ আদালতের এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণতন্ত্রকে সুসংহত করি। এর মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন গঠনে আমরা আইন পাশ করেছি। আগে নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। এ কমিশনকে আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি। পৃথক বাজেট বরাদ্দও দিয়েছি। এমনকি আগে বিচার বিভাগও আর্থিকভাবে সরকারের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু আমরা সরকারে আসার পর বিচার বিভাগকেও সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আমরা যেমন নিশ্চিত করেছি তেমনি নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচন কমিশনকেও স্বাধীন করে দিয়েছি। যাতে তারা আমাদের দেশের মানুষের অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, সুপ্রিমকোর্টকে আমি ধন্যবাদ জানাই। কেননা তারা যে আদেশটা দিয়েছিল সেটাই আমাদের বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে প্রায় ২১ বছর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেশের ক্ষমতা সামরিক শাককদের হাতে কুক্ষিগত ছিল। তিনি বলেন, মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে একটা মামলা ছিল। মার্শাল ল’ অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে অন্য কাউকে ওই মালিকানা দেওয়া হয়েছিল। সেই মামলার রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিমকোর্ট এ মার্শাল ল’কে অবৈধ ঘোষণা করেন। শুধু তাই নয়-সংবিধান লংঘন করে ক্ষমতা দখল যে সম্পূর্ণভাবে অসাংবিধানিক ও অসাংবিধানিক এবং অনির্বাচিত কেউ সরকারে থাকতে পারে না-সেটাই বলা হয়। এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ করে দেয়। আর এর মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ করে দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, সামরিক শাসকরা ক্ষমতায় এসে প্রথমেই রাজনীতিবিদদের গালি-গালাজ করেছেন। এরপর নিজেরাই রাজনীতিবিদ হয়ে গেছেন, উর্দি ছেড়ে রাজীনীতিবিদ সেজে এবং দল গঠন করে নির্বাচনি প্রহসনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। এরপর সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনে সেই অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার প্রয়াস পেয়েছে। সংবিধানের ৫ম ও ৭ম সংশোধনী এভাবে হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই-আমাদের উচ্চ আদালতকে। কৃতজ্ঞতা জানাই-সেই সব বিচারকদের যারা সংবিধান লংঘন করে ক্ষমতা দখলকারী ও মার্শাল ল’ জারিকে অবৈধ রায় দিয়েছিলেন। গণতান্ত্রিক ধারা বা পরিবেশ ছাড়া কোনো দেশের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নতি সম্ভব নয়-উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভারতবাসী সেদিক থেকে সত্যিই সৌভাগ্যবান যে-তাদের দেশে ধারাবাহিক গণতন্ত্র বজায় আছে। সরকার পরিবর্তন হয়েছে-কিন্তু গণতন্ত্র কখনো প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে আমাদের জীবনে এসেছে অমানিশার অন্ধকার। পাকিস্তান আমলে যে স্বৈরশাসন বলবৎ ছিল, ১৯৭৫ এর পর তা টানা ২১ বছর চলেছে। তিনি বলেন, এ সম্মেলনের মধ্যদিয়ে অদূরভবিষ্যতে ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার উদ্দেশ্যে উন্নত বিচার প্রশাসন বিনির্মাণে দুই দেশের মধ্যে রোডম্যাপ তৈরি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
‘বঙ্গবন্ধু অ্যাপ’ উদ্বোধন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাপ’ উদ্বোধন করেছেন। এতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী এবং বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। দরবার টেকনোলজিস লিমিটেডের তৈরি অ্যাপটি উদ্বোধনের পর শেখ হাসিনা বলেন : এতে জাতির পিতার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জানার সুযোগ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের মহান স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে।