বিশ্বব্যাপী অশান্তি সৃষ্টি করবে ভারতে মুসলিম হত্যাযজ্ঞ
মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম: ভারতের উত্তরাখ-ের নৈনিতালের হলদোয়ানিতে মাদরাসা ও মসজিদ উচ্ছেদের লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে আগুন ৪ জন মুসলিমকে শাহাদাত ও ৫ শতাধিক আহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই।এক বিবৃতিতে ইসলামী আন্দোলনের আমীর বলেন, ভারত পুরো ভারতবর্ষকে ইসলাম ও মুসলিম শূন্য করার যে মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর আগে ভারতের মাদরাসাগুলোতে ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার নামে সুকৌশলে মুসলমানদেরকে হিন্দু বানানোর গভীর চক্রান্তের অংশ হিসেবে মুসলমানদের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাদরাসায় হিন্দুগ্রন্থ পড়ানোর প্রস্তাব মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের নামান্তর। ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। প্রত্যেক নাগরিক নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মুসলমানদের উপরে অন্য ধর্মের গ্রন্থ চাপিয়ে দেওয়া এটা অন্যায়। তিনি ভারতের সরকারকে মানবতার কল্যাণে এই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানান।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, মসজিদ মাদরাসা সরকারি জমিতে মিথ্যা অজুহাত দিয়ে মসজিদ ও মাদরাসায় আগুন দিয়ে তা পুড়িয়ে ভূস্মিতভূত করা এবং মানুষ হত্যা ও আহত করে ভারত বিশ্বব্যাপী অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। এরফলে সম্প্রীতি বিনষ্ট করে অশান্তির দাবানল জ্বালানো হলো। এভাবে ভারত মসজিদ মাদরাসা ও মুসলমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সফল হবে না। ভারতের উগ্রতা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। মুসলমানরা বয়কট করলে ভারতের আখের রক্ষা হবে না। কাজেই সময় থাকতে ভারত মুসলিমবিদ্বেষ থেকে বেরিয়ে না আসলে চরম খেসারত দিতে হবে।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন :
ভারতের উত্তরাখ-ে মুসলমানদের নির্মিত মসজিদ-মাদ্রাসা উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রে মুসলমানদের উপর হামলা চালিয়ে হতাহতের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরীয়ত ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী। আজ এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ভারতের মুসলমানগণ ষড়যন্ত্রের শিকার। সে দেশের কতিপয় উগ্রহিন্দু বাবরি মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে এবং কোর্টের রায়ের নামে মাদ্রাসা মসজিদে হামলা ও উচ্ছেদ করে তদস্থলে মন্দির নির্মাণের ঘৃণিত ঘটনা ঘটাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার উত্তরাখ-ের নৈনিতাল এলাকার এই ঘটনাও সেই ষড়যন্ত্রের অংশবিশেষ।
তিনি আরো বলেন, ভারত সরকারের জানা থাকা উচিত এই ভারতবর্ষ দীর্ঘদিন মুসলমানরা শাসন করেছেন। বহু মুসলিম নিদর্শন, লক্ষ লক্ষ মসজিদ মাদরাসা ও কোটি কোটি মুসলমান এখনো ভারতে রয়েছে। ভারতকে মুসলিম শূন্য করা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র বিশ্বের মুসলমান বরদাশত করবে না। তিনি উত্তরাখ-সহ ভরতের সকল মসজিদ-মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ করার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
কর্মসূচি :ভারতের উত্তরাখন্ড মসজিদ-মাদ্রাসার উপর হামলা হতাহতের প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার বাদ জোহর ঢাকার কামরাঙ্গীরচর মাদরাসা থেকে খেলাফত আন্দোলনের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পাটি : এদিকে, ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদের সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মোদি সরকারের ছত্রছায়ায় একের পর এক মসজিদ মাদরাসা ধ্বংস উচ্ছেদ অগ্নিসংযোগ করে ক্ষমার অযোগ্য মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে।মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর বর্বরোচিত জুলুমের মাধ্যমে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে দাঙ্গা উস্কে দিচ্ছে ভারত সরকার।এর জেরে ভারত খন্ড বিখন্ড হবে এবং উপমহাদেশে হিন্দুত্ববাদের কবর রচিত হবে ইনশাআল্লাহ।আজ শনিবার বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে মহানগরের বাছাইকৃত দায়িত্বশীলদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী এসব কথা বলেন।রাজধানীর খতিবে আজম (রহ.) মিলনায়তনে মহানগর আমীর প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু তাহের খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত প্রশিক্ষণ কোর্সে আরও উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় প্রচার ও পাকাশনা সচিব মাওলানা আবদুল্লাহ আল মাসউদ খান, দফতর সচিব মুফতী দ্বীনে আলম হারুনী, মুফতী ওয়াহিদুজ্জামান, মাওলানা আশরাফ আলী, আলহাজ হাফেজ, হাফিজুর রহমান, মাওলানা মুফতী আজিজুর রহমান, মাওলানা সালাহউদ্দিন মাওলানা নুরুল ইসলামচাটগামী,হাবিবুজ্জান মিলন, ইসলমী ছাত্র সমাজের সভাপতি এহতেশামুল হক সাখী ও মহাসচিব বি এম আমীর জেহাদী।মহানগর আমীর প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু তাহের খান বলেন, মসজিদ মাদরাসা ধ্বংস করার স্পর্ধা বরদাশত করা হবে না। বাণিজ্যিক ভাবে ভারত কে বয়কট করতে হবে। সম্মিলিত ভাবে ভারতীয় পণ্য বর্জন করে অর্থনৈতিক ভাবে জবাব দিতে হবে।আব্দুল্লাহ আল মাসউদ খান বলেন, বাংলাদেশ সরকার বিরানব্বই ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ভারতীয় সরকারের এই হটকারিতার কঠোর নিন্দা ও প্রতিবাদ করতে হবে। মুসলিম রাষ্ট্র সমূহের সম্মিলিত পদক্ষেপ নেয়ারও তিনি জোর দাবি জানান।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ : জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ ভারতে মাদ্রাসা-মসিজদ উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন,এ ভাবে ধর্মীয় স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়ার পরিণাম ভাল হবে না। নেতৃবৃন্দ ভারতের উত্তরাখ-ের নৈনিতালের হলদোয়ানীতে সরকারি জমিতে থাকা মাদ্রাসা ও মসজিদ উচ্ছেদের এ ঘটনাকে মুসলিম নিধনের নতুন ফাঁদ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, একের পর এক এ রকম ফাঁদ তৈরি করে এবং মাদ্রাসা-মসজিদ উচ্ছেদ করে ইসলামের অগ্রযাত্রা কোন ভাবেই থামানো যাবে না। আজ পল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ে দলের এক বিশেষ সভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ এ সব কথা বলেছেন।সহ-সভাপতি মাওলনা আব্দুর রব ইউসুফীর সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় বক্তব্য রাখেন, সহ-সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক,মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস কাসেমী,যুগ্মমহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া,মাওলানা তাফাজ্জল হক আজীজ,মাওলানা লোকমান মাজহারী,মাওলানা শুয়াইব আহমদ,সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী,সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী নাসীরুদ্দীন খান,মাওলানা তৈয়বুর রহমান চৌধুরী,অর্থ সম্পাদক মুফতী জাকির হোসাইন কাসেমী,প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন,মাওলানা আবুল বাশার,মুফতী মুহিউদ্দীন মাসূম, মুফতী জাবের কাসেমী,মাওলানা আব্দুল গাফফার ছয়ঘরী,মুফতী মাহবুবুল আলম,মাওলানা হেদায়েতুল ইসলাম,মাওলানা সিদ্দীকুল ইসলাম তোফায়েল ও মাওলানা এবাদুর রহমান।সভায় মিয়ানমারের বর্তমান সমস্যাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সীমান্তে সৃষ্ট পরিস্থিতিতেও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।