দুর্নীতি দমনে সচিবদের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতি দমনে সচিবদের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারি দপ্তরের অনেকে মনে করেন দুর্নীতি দমন শুধু দুদকের (দুদক) কাজ। মনে রাখতে হবে এটা দুর্নীতি দমন কমিশনের একার কাজ নয়। বরং প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে দুর্নীতির দমনে-প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব এবং সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার সভায় ১৫-১৬ জন সচিব বক্তৃতা করেন। এর মধ্যে ১১ জন সচিব নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী নির্ধারিত সময়ের ৫ মিনিট আগেই সচিব সভায় যোগ দেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বিকাল ৪টায় সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আসন্ন মাহে রমজানের প্রস্তুতি নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। কেউ যাতে দ্রব্যমূল্যের কৃত্রিম সংকট বা অবৈধ মজুতের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে সচিবদের পদক্ষেপ নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। নিয়মিত বাজার তদারকি বা মনিটরিংয়ের নির্দেশ দিয়েছেন।কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের ওপর জোর দিয়েছেন। কৃষি উৎপাদনে সার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ যত্নবান হতে বলেছেন। এছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
কোনোভাবে যেন সেচ মৌসুম বাধাগ্রস্ত না হয় সেটির দিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন। সেচের ক্ষেত্রে সোলার এনার্জি ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার একটি লক্ষ্য। সে লক্ষ্য অর্জনে সচিবদের একনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে। যে কোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে হবে। ছিনতাই, কিশোর গ্যাং এবং চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি করে এসব সামাজিক অপরাধ বন্ধ করতে হবে।
সভায় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মুদ্রাস্ফীতি যাতে জিডিপির চেয়ে বেশি না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। অর্থাৎ জিডিপির হারের চেয়ে মুদ্রাস্ফীতির হার কম থাকতে হবে। করের পরিধি বাড়াতে হবে। দেশে অনেক মানুষ আছেন যাদের আয়কর দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে অথচ দিচ্ছেন না। তাদের করের আওতায় আনতে হবে। করনেট বৃদ্ধি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব করা যাবে না। প্রকল্পের ব্যয়ও বৃদ্ধি করা যাবে না।অর্থাৎ সরকারি অর্থ অপচয়রোধে সচেষ্ট হতে হবে। যে কোনো প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে প্রকল্পটি জনগণের কী কাজে আসবে তা পরিষ্কার করতে হবে। জনকল্যাণের বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকতে হবে। প্রকল্প গ্রহণের আগে জনকল্যাণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। বিনিয়োগকারীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন তা নিশ্চিত করতে হবে।
নতুন পাঠ্যক্রমের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেছেন কি না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যদি কোনো ভুল-ভ্রান্তি, কোনো তথ্যগত বা কোনো একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, তাহলে দ্রুত যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেই নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।এছাড়া গার্মেন্টে যে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় কৃষিজাত পণ্য, চামড়া এবং পাটজাত পণ্যে একই রকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে কাজ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, গার্মেন্টের ক্ষেত্রে একটা বড় অংশ আমদানি করতে হয়। একটা বড় অংশ চলে যায় আমদানি ক্ষেত্রে। এই তিন পণ্যে আমাদের স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল আছে। সুতরাং এখানে ভ্যালু অ্যাড অনেক বেশি হবে। রপ্তানি বাজারের ক্ষেত্রে নতুন বাজার খুঁজতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ নিতে বলেছেন। সময়মতো পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে বলেছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা আছেন প্রয়োজনে তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিশেষ উদ্যোগ নিতে বলেছেন। কোনো অবস্থাতেই নদীর ধারাবাহিকতা বা প্রবাহ বাধাগ্রস্ত না করা হয় সেদিকে নজর রাখতে বলেছেন। সেচের ক্ষেত্রে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার, ব্লু-ইকোনমির জন্য সামুদ্রিক যে ব্লক আছে সেখানে গ্যাস অনুসন্ধান করতে বলেছেন। পর্যটন শিল্পের জন্য যা যা করা প্রয়োজন সে নির্দেশনা দিয়েছেন। বইমেলা জেলার বাইরে নিয়ে যেতে বলেছেন।’জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সঠিকভাবে দায়িত্বপালন করায় সচিবদের ধন্যবাদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সরকার পরিচালনার দলিল হবে ইশতেহার।’ ইশতেহার বাস্তবায়নে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সমন্বয়ের কাজ করবে জানিয়ে সচিব বলেন, নির্বাচনি ইশতেহারে ১১টি অগ্রাধিকার কাজ ও ৩০০-এর অধিক অঙ্গীকার রয়েছে। এখন সেটাকে ম্যাপিং করা হবে। কোন মন্ত্রণালয়ের কী কাজ, সেটাকে চিহ্নিত করার পর সে অনুযায়ী কাজ ভাগ করা হবে।