দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা খুুব জরুরি ছিল - Alokitobarta
আজ : শনিবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা খুুব জরুরি ছিল


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা খুুব জরুরি ছিল বলে মনে করেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের এক যৌথসভায় তিনি বলেছেন, নির্বাচন যেন না হয় সে জন্য অনেক চক্রান্ত ছিল, কিন্তু তারা (চক্রান্তকারীরা) ব্যর্থ হয়েছে। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা খুব জরুরি ছিল। কারণ, ইশতেহার দিয়ে ওয়াদা পূরণ করবে আওয়ামী লীগ, আর দেশের উন্নয়নও আওয়ামী লীগের হাতে।সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা এ যৌথসভা অংশ নেন।বাংলাদেশকে এখন আর কেউ দুর্ভিক্ষের দেশ, ভিক্ষুকের দেশ মনে করে না। এখন সবাই মনে করে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল এমন উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ৭৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে এমন অবস্থায় ছিল, তখন বাংলাদেশ বললে মানুষ মনে করত একটা দুর্ভিক্ষের দেশ, দুর্যোগের দেশ; এদেশের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। জাতির পিতাকে হত্যার পর অনেক দেশ বলেছে, তোমরা তোমাদের নেতাকে হত্যা করেছ? তখন খুনি দেশ হিসেবে আমরা পরিচিত হই। সে সময় আন্তর্জাতিকভাবে কোথাও গেলে বলত বাংলাদেশ তো হাত-পাততে আসে। এখন অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিটা পরিবর্তন হয়েছে।

নির্বাচন ঘিরে বিএনপি অনেক চক্রান্ত করেছে বলে অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, সহিংসতার জন্য বিএনপিকে কোনো দলীয় উসকানি দেয়নি আওয়ামী লীগ, পুলিশও অনেক সহনশীল ও সংযত ছিল। তবু বিএনপি দেশের মধ্যে সহিংসতা করেছে। এখন তারা বিদেশি মুরুব্বিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। ভবিষ্যতে তারা এমন কর্মকাণ্ড আরো করতেই থাকবে।নির্বাচনে জয়-পরাজয় মেনে নিয়ে দলের সবাইকে উন্নয়নের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এবারের উম্মুক্ত নির্বাচনে অনেক দলীয় প্রার্থীই হেরেছেন, কেউ কেউ জিতেছেন। হার-জিত যা-ই হোক সেটা মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী ও বিজিতদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, যারা নির্বাচন করেছে, কেউ জয়ী হয়েছে, কেউ জয়ী হতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে একজন আরেকজনকে দোষারোপ করা বা কার কী অপরাধ এগুলো খুঁজে বের করা, এসব বন্ধ করতে হবে। আমাদের দল ছাড়া কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, আমরা জনগণের যে সমর্থন পেয়েছি সেটা কিন্তু কাজের স্বীকৃতি। দেশে মানুষের জন্য আমরা কাজ করেছি, দেশের মানুষ আমাদেরকে ভোট দিয়েছে, আমাদের জয়ী করেছে। সেখানে হয়তো কেউ জিততে পেরেছে, কেউ জিততে পারেনি। হার-জিত যাই হোক সেটা সবাইকে মেনে নিয়ে অন্তত নিজের দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। আমরা যদি একে অপরের দোষ ধরতে ব্যস্ত থাকি, এটা আমাদের বিরোধী দলকে আরো উৎফুল্লø করবে, তাদের কিছু সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হবে।

দুর্নীতি আর খুন বিএনপির চরিত্র এমন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ওদের কাজ হচ্ছে দুর্নীতি করা আর মানুষ খুন করা। এটাই তারা পারে। এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটাবে, ঘটাতে থাকবে। শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন যাতে না হয়— অনেক চক্রান্ত ছিল, অনেক ষড়যন্ত্র ছিল। সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই আমরা নির্বাচন করেছি। তিনি বলেন, যারা নির্বাচন করেছে, কেউ জয়ী হয়েছে, কেউ জয়ী হতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে একজন আরেকজনকে দোষারোপ করা বা কার কী অপরাধ এগুলো খুঁজে বের করা এসব বন্ধ করতে হবে। হার-জিত যাই হোক মেনে নিয়ে দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। একে অপরের দোষ ধরতে ব্যস্ত থাকলে সেটি বিরোধী দলকে আরও উৎফুল্ল করবে, তাদের কিছু সুুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হবে।বিএনপির প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যে দল নির্বাচন করে না, তারা তো গণতান্ত্রিক ধারায় নির্বাচন করায় অভ্যস্ত না। যেসব জরিপ আন্তর্জাতিকভাবে হয়েছিল তাতে স্পষ্ট ছিল বিএনপি তাদের জন্য নির্বাচন করলে কখনও সরকার গ্রহণ করার মতো সাফল্য অর্জন করবে না। সে রকম সিটও তারা পাবে না। আওয়ামী লীগের বেলায় সার্ভে ছিল, শুধু একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে। আওয়ামী লীগ পর্যাপ্ত সিট পাবে। একথা শোনার পর তারা নির্বাচনে আসবে না, এটা তো স্বাভাবিক। তাছাড়াও ওদের সৃষ্টি হয়েছিল অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল তাদের পকেট থেকে। জনগণের ভোট চুরি করা, নির্বাচনে কারচুপি করা, এসব কালচার বিএনপির আমলেই সৃষ্টি। তারা ওটাই ভালো বুঝতো।বিএনপি ২৮ অক্টোবর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গিয়ে কাঁদে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আগের চরিত্র দেখলাম গত ২৮ অক্টোবর। সেখানে পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশকে পিটিয়ে মেরেছে। ২০১৩ সালে এভাবে মেরেছিল। সেই একই চিত্র আমরা আবার দেখলাম। তারা বলে ওখানে উসকানি দেওয়া হয়েছিল। যে অঞ্চলে পুলিশকে মারলো সেখানে আওয়ামী লীগের কেউ ছিলই না। ওরাই পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করে, গাড়ি পোড়ায়। প্রধান বিচারপতির বাড়ি, জাজেস কোয়ার্টার, সাংবাদিক, কেউ ওদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। আমাদের মহিলারা মিছিল নিয়ে আসছিল, তাদের ওপর আক্রমণ করে। এই ঘটনা ঘটিয়ে তারা আবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গিয়ে কাঁদে। তাদের মুরুব্বিদের কথামতো আবার কান্নাকাটি। তারা বলে সেটা উসকানি, আসলে উসকানিটা দিলো কে? উসকানি দেওয়ার মতো তো কেউ ছিল না। পুলিশ তখন যথেষ্ট সহনশীলতা দেখিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন আমরা সরকার গঠন করেছি। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আমরা পেয়েছি। এই বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। যে উন্নয়নের কাজগুলো আমরা করছি, সেগুলো সম্পন্ন করতে হবে। দেশের উন্নয়নের ধারাকে আরও গতিশীল করতে হবে। আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বব্যাপী যেখানে অর্থনৈতিক মন্দা আমরা তার থেকে দূরে নই। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। তবে যে জিনিসগুলো আমদানি করতে হয়। যেমন গম, ভুট্টা এগুলো আমরা উৎপাদন করি। চাষ আমাদের বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এই পণ্যগুলো আমাদের আবহাওয়ার সাথে এতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তারপরও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন, কাউন্টার স্যাংশনের ফলে প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পণ্য পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও আমরা থেমে নেই। আমরা রিজার্ভের টাকা খরচ করে করে সেগুলো নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছি।তিনি বলেন, কৃষি শ্রমিকদের সংকটের কারণে আমরা কৃষিযান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছি। এতে খরচ কমবে। আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। রফতানি বহুমুখী করতে হবে। পাট, চামড়াসহ অন্যান্য পণ্য উৎপাদন করি। সেগুলো রফতানির জন্য বাজার খুঁজতে হবে। দক্ষ জনশক্তি করে তুলতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর বাজেট করার আগে ইশতেহার হাতে নিয়েই বাজেট প্রণয়ন করি। আমরা যে ওয়াদা দেই তা রক্ষা করি। এবারও যে ইশতেহার দিয়েছি। সেখানে কী কী অর্জন করেছি। ভবিষ্যতে আমরা কী করবো-সেগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।শেখ হাসিনা দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ইশতেহার ও দলের ঘোষণাপত্র ভালোভাবে পড়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এটা পড়লে আমরা যে আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করি তা ভালোভাবে উপলদ্ধি করা সম্ভব হবে। সেই মোতাবেক কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশের কল্যাণ আওয়ামী লীগের হাতে। আওয়ামী লীগ এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। এই আওয়ামী লীগ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। শতভাগ মানুষকে বিদ্যু দিয়েছে। সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা দোড়গোঁড়ায় পৌছে দিয়েছে। ভূমিহীনদের ঘর করে দিয়েছে।

Top