সারা দেশে নৌকার পক্ষে অভূতপূর্ব গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে সারা দেশে নৌকার পক্ষে অভূতপূর্ব গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের কাছে নির্বাচন হলো উৎসব, গণতন্ত্রের উৎসব। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বরং তীব্র শীত উপেক্ষা করে জনগণ নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়ে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছে। নৌকার পক্ষে সারা দেশে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।শুক্রবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে কমনওয়েলথ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ২৮টি রাজনৈতিক দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এবং ২৯৯ আসনে মোট প্রার্থী আছেন এক হাজার ৯৭০ জন। এর মধ্যে ৪৩৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।আওয়ামী লীগ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদেশি পর্যবেক্ষক দেখে উৎসাহবোধ করছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ইতোমধ্যে অনেক বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক এসেছেন। এটা দেখে আমরা উৎসাহিত। তারা একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করবেন। আমরা আশা করব অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তার সঠিক চিত্র তারা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরবেন। নির্বাচনে মানুষ নির্ভয়ে ভোট দেবেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ৭ জানুয়ারি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া হবে। সবাই ভোট কেন্দ্রে আসবে। তারা নির্ভয়ে ভোট দেবে। ভোট দিতে কেউ বাধা দিলে তাদের প্রতিহত করা হবে।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, নির্বাচনে যে বা যারাই বাধা দেবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিষেধাজ্ঞা দেবে বলেছিল। কিন্তু বিএনপি প্রকাশ্যে নির্বাচনে বাধা দিচ্ছে, হরতাল দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে কেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির বিরুদ্ধে ভিসানীতি প্রয়োগ করছে না। সেটা আমাদের মনে প্রশ্ন জাগায়! নির্বাচনের দিন বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধ নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, হরতাল এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি মরচে ধরা হাতিয়ার। হরতাল ও অবরোধ এখন বিএনপির কর্মসূচিতে আছে, বাস্তবে নেই।বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৩তম অর্থনীতির দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭৯৩ মার্কিন ডলার। শেখ হাসিনার ওয়াদা অনুযায়ী আজ দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। পাশাপাশি, দারিদ্র্যের হার কমে হয়েছে মাত্র ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, অতি দারিদ্র্য কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২ বছর ৮ মাস হয়েছে।ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালায়। আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মী ও ১৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচন কমিশন গঠনে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যার অধীনে সাংবিধানিক পদের অধিকারীদের সমন্বয়ে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইলেকশন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই কমিশন সর্বোচ্চ স্বাধীনভাবে কাজ করছে।সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের পাশাপাশি কিছু বিদেশি সাংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন। ওবায়দুল কাদের দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। সংবাদ সম্মেলনে জাপানের এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন-বাংলাদেশ ও জাপানের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। জাপান বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গেও বাংলাদেশের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। এই দুই দেশের (চীন ও রাশিয়া) সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা রাখছে? এ সম্পর্ক রাখার সুবিধা কোথায়?
জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা হলো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। আমাদের সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব আছে। বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আমাদের উন্নয়নের জন্য। অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সম্পর্ক আছে কিছু দেশের সঙ্গে, যেমন ভারত, জাপান, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স। মেট্রোরেলের অর্থ জোগাচ্ছে জাপান। আমার পার্থক্য করা উচিত হবে না। বন্ধু বন্ধুই। সবাই আমাদের বন্ধু।এই নির্বাচন দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনটা হতে দেন। গ্রহণযোগ্যতা পাবে কি না, সেটা বিদেশিরাই বলবেন। আমরা তো বলছি, টার্ন আউট, অংশগ্রহণ সন্তোষজনক হবে। এ দেশে একটা ভালো নির্বাচন হবে। প্রধান বিরোধী দল যেখানে নেই, এটা আমরা রিগ্রেট করি। বিএনপি থাকলে নির্বাচন আরও প্রতিযোগিতাপূর্ণ হতো, সেটা আমরা স্বীকার করি। তারপরও এই নির্বাচন প্রতিযোগিতাপূর্ণ হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে ওয়ান সাইডেড ইলেকশন হচ্ছে না, এখানে হচ্ছে ওয়ান সাইডেড বিরোধিতা।বিএনপি অভিযোগ করছে, সরকার ডামি নির্বাচন করছে। ডামি প্রার্থী দিয়েছে। এখন ডামি ভোটার উপস্থিতি দেখিয়ে নির্বাচন বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নিজেই একটা ডামি দল। বাংলাদেশে ডামি দল হচ্ছে বিএনপি।
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, মানুষের ধারণা আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের ধারণা কী, তারা কয়টি আসন পাচ্ছে? মানুষের আরেকটি ধারণা, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই বেশি জয়ী হবে। বিরোধী দল কে হবে, সে বিষয়ে আপনাদের মূল্যায়ন কী? জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা ইনশাআল্লাহ নির্বাচনে বিজয়ী হব। কত আসন, সেটা আমি এখনই বলতে চাই না। আর নির্বাচনের ফলই বলে দেবে বিরোধী দল কে হবে। আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে কত শতাংশ ভোট আশা করছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, একটা কথাই বলব, ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, অর্থবিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবি কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান উপস্থিত ছিলেন।