মুন্সীগঞ্জে গুলি করে নৌকার কর্মীকে এবং পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুন্সীগঞ্জে গুলি করে নৌকার কর্মীকে এবং পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা


মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম : মুন্সীগঞ্জে গুলি করে নৌকার কর্মীকে এবং পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার গভীর রাতে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মুন্সীকান্দি গ্রামে নৌকার ক্যাম্পে গুলি করে ডালিম সরকারকে হত্যা করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন।এ সময় আরেকজনকে পিটিয়ে আহত করা হয়। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ, তাদের বেকায়দায় ফেলতে নৌকার লোকজন নিজেরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। অন্যদিকে বুধবার বিকালে মঠবাড়িয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী জাহাঙ্গীর পঞ্চায়েতকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তবে পুলিশ বলছে, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে জাহাঙ্গীরকে হত্যা করা হয়েছে।এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনি সংঘাতে আরও ৫০ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে নোয়াখালীর কবিরহাটে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রচারে দুগ্রুপের সংঘর্ষে ২৪ জন, জামালপুরে ১৫ জন, চাঁদপুরের মতলবে ৫ জন, ফরিদপুরে ৩ জন ও চট্টগ্রামের পটিয়ায় ৩ জন আহত হয়েছেন। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

মুন্সীগঞ্জ : স্থানীয়রা জানান, নিহত ডালিম সরকার (৩০) মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মুন্সীকান্দি গ্রামের নুর হোসেন সরকারের ছেলে। বুধবার রাত ১২টায় গ্রামে নৌকার ক্যাম্পে হামলা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী মো. ফয়সাল বিপ্লবের (কাঁচি) ১০ থেকে ১২ জন সমর্থক। তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে।ওই সময় ক্যাম্পে থাকা ডালিমের বাম বুকে একটি গুলি লাগে। তাকে বাঁচাতে এলে নৌকার আরেক কর্মী সোহেলকেও মারধর করে হামলাকারীরা। রাতেই গুলিবিদ্ধ ডালিম এবং আহত সোহেলকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ডালিমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।হামলায় আহত সোহেল বলেন, আমরা নৌকার ক্যাম্পে ছিলাম। বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক মোল্লাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মো. রিপন পাটোয়ারীর ভাই শিপন পাটোয়ারী (ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি) ও সোহাগের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়।ডালিমের স্ত্রী শিউলি বেগম বলেন, উজিরের (কাঁচির কর্মী) নির্দেশে তার লোকেরা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমি উজির, তার ভাই নাজির ও নজুর বিচার চাই।

নৌকার প্রার্থী অ্যাভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বলেন, তফশিল ঘোষণার পর থেকেই এ আসনের বিদ্রোহী প্রার্থী বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এবার নৌকার সমর্থক ও আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মীকে গুলি করে হত্যা করলেন তারা। নিহত জাহাঙ্গীর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বলে জানান মৃণাল কান্তি দাস।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব বলেন, নৌকার প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাসের পরাজয় নিশ্চিত এটা স্পষ্ট। এ কারণে এ হত্যার আগেও নিজের ক্যাম্প নিজেই ভেঙেছেন। নিজেই ভেঙে আমাদের নামে মামলা দিয়েছেন। নিহত ডালিম হাসপাতালে বলেছেন, স্বপন তাকে গুলি করেছে। স্বপন মূলত মৃণালের লোক। মৃণাল তার পরাজয় নিশ্চিত জেনে পরিকল্পিত হত্যার রাজনীতি শুরু করেছেন।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) : নিহত জাহাঙ্গীর পঞ্চায়েত (৬০) মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরুখালী ইউনিয়নের নাগ্রাভাঙ্গা গ্রামের তোতাম্বর পঞ্চায়েতের ছেলে। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম শাহনেওয়াজের (কলার ছড়ি) সমর্থক। বুধবার সকালে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ-সদস্য ডা. মো. রুস্তুম আলী ফরাজির (ঈগল) সমর্থক বশির ফরাজি, তার ভাই ও ছেলেদের সঙ্গে জাহাঙ্গীর পঞ্চায়েত ও তার দলবলের ধাওয়া-পালটাধাওয়া হয়। এর জের ধরে বিকালে বশির ফরাজির বাড়ির সামনের রাস্তায় তার ছেলে সিরাজুলের সঙ্গে জাহাঙ্গীরের মারামারি হয়।

এ সময় জাহাঙ্গীরকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় তিনি মারা যান। স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম শাহনেওয়াজের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. এমাদুল হক খান বলেন, জাহাঙ্গীর পঞ্চায়েত আমাদের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।ঈগল প্রতীকের সমর্থকরা পরিকল্পিতভাবে তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছে। তবে ডা. মো. রুস্তুম আলী ফরাজির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মো. আজিজুল হক সেলিম মাতুব্বর বলেন, ঘটনাটি একান্ত পারিবারিক জমিসংক্রান্ত। তারা নির্বাচনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার ভয়ে এটাকে নির্বাচনি ইস্যু করার চেষ্টা চালাচ্ছে।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাদুরা গ্রামের মৃত করম আলী ফরাজীর ছেলে বশিরের সঙ্গে জাহাঙ্গীরের দীর্ঘদিন ধরে জমিসংক্রান্ত বিরোধ চলছিল।পিরোজপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, এটা নির্বাচনি কোনো ঘটনা নয়। জমিসংক্রান্ত বিরোধ থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। জাহাঙ্গীরের স্ত্রী বুলু বেগম বুধবার রাতে মঠবাড়িয়া থানায় ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলাটি আমরা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। আসামি গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

নোয়াখালী ও কোম্পানীগঞ্জ : বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় কবিরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আলাবক্স তাহের টিটু ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবিরের নেতৃত্বে ভূঁইয়ারহাটে লিফলেট বিতরণ ও পথসভা করেন। একই সময় বাটইয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন শাহীনের নেতৃত্বে নৌকার প্রচারণায় এলে উভয়পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রথমে বাগবিতণ্ডা ও পরে সংঘর্ষ বেধে যায়।

এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আহত হন উভয়পক্ষের ২৪ জন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন-নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. জাফর উল্যা, কবিরহাট উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবু জাফর আবির, সাবেক মেয়র আলাবক্স তাহের টিটু, বৃহত্তর সদর উপজেলার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফয়েজ উল্যাহ, উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হোসেন, পৌরসভা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন।

জামালপুর : জামালপুর সদরের মহেশপুর কালীবাড়িতে বুধবার রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রেজনুর প্রচার কেন্দ্রে হামলা-ভাংচুর হয়েছে। এর প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে ৫ সাংবাদিকসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ২ সমর্থককে আটক করেছে পুলিশ।

ফরিদপুর : বোয়ালমারীতে বুধবার সন্ধ্যায় পৃথক ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর তিন সমর্থককে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। আহতরা হলেন-বোয়ালমারী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যেরগাতী গ্রামের আফসার মোল্যার ছেলে এরশাদ মোল্যা ও উপজেলার শেখর ইউনিয়নের শেখর গ্রামের হারুন মোল্যার ছেলে ইমরান মোল্যা ও দিঘীরপাড় গ্রামের পান্না কাজীর ছেলে তামিম কাজী।

মতলব (চাঁদপুর) : চাঁদপুর-২ আসনের মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্ল্যাপুর ইউনিয়নের পাঠান বাজারে বুধবার সন্ধ্যায় ঈগল প্রতীকের পাঁচ কর্মীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করেছে নৌকার সমর্থকরা। আহতরা হলেন-মুক্তিরকান্দি গ্রামের মো. শরিফ সরকার, একই গ্রামের জাকির হোসেন সরকার, আলমগীর সরকার, রাহিম সরকার ও উত্তর শ্যামনগর গ্রামের মো. হারুন রশিদ প্রধান। তাদের মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

পটিয়া (চট্টগ্রাম) : পটিয়া উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার বিকালে নৌকার সমর্থকদের ছুরিকাঘাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর (ঈগল) ৩ সমর্থক আহত হয়েছেন। তারা হলেন-পটিয়া সেন্ট্রাল হসপিটালের জেনারেল ম্যানেজার ঝুলন দত্ত, বিক্রম জিৎ মিত্র ও রনি দে।

Top