নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ভোটদানের পরিবেশটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি কোনো প্রকার গন্ডগোল চাই না। আপনাদের সহনশীলতা দেখাতে হবে। নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ভোটদানের পরিবেশটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই নির্বাচনটা দেশের জন্য একান্তভাবে জরুরি, কারণ এই বাংলাদেশ নিয়ে অনেক রকম খেলা অনেকে খেলতে চায়। তিনি আরও বলেন, যারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না, জয়বাংলা স্লোগান যারা নিষিদ্ধ করে, ৭ মার্চের ভাষণ যারা নিষিদ্ধ করে দেয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যারা ধ্বংস করে, তারা দেশটাকে ধ্বংস করবে। এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে যাতে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমি চাই, সত্যিকারভাবে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, যে নির্বাচনে জনগণ তার পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।বুধবার বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন থেকে দেশের পাঁচটি জেলা ও একটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনি জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের নানা চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সারা দেশ আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে আমরা একটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আসতে পেরেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, বিএনপি-জামায়াতের চরিত্রটা হচ্ছে দুর্নীতি করা আর মানুষ খুন করা। তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করে। এর থেকে জঘন্য কাজ আর কিছু হতে পারে না।
২০১৩-১৪ সালের মতো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেও বিএনপি-জামায়াত আবার ভয়াল রূপ নিয়ে হাজির হয়েছে-এমন মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস, ট্রেনে আগুন দেওয়ায় মা-শিশু পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। এই দৃশ্য সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। শুধু তাই নয়, রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলেছে, তারা বগি ফেলে দিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট ঘটিয়ে মানুষ মারার ফাঁদ পাতে। যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়। চিফ জাস্টিসের বাড়িতে হামলা করেছে, জাজেস কোয়ার্টারে হামলা করেছে। সাংবাদিকদের পিটিয়েছে। পুলিশকে কীভাবে পিটিয়ে মেরেছে আপনারা দেখেছেন। এ ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ড তারা করেছে।
দেশের মানুষকে এই দুর্বৃত্তপরায়ণতার জবাব দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে, আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে এর জবাব দেবেন। উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখবেন, সেটাই আমরা চাই। আজকে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের প্রার্থী আছে। সেই সঙ্গে আমরা আমাদের নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমাদেরই স্লোগান-‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দিব।’ কাজেই আপনাদের পছন্দমতো ভোট দেবেন। কিন্তু কোনো রকম গন্ডগোল আমি চাই না। কোনো রকম কোনো দুর্ঘটনা বা কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব যেন না থাকে। সহনশীলতা দেখাতে হবে। নির্বাচনে যার যার ভোট শান্তিমতো দেবে এবং সেই পরিবেশটা আমাদের রক্ষা করতে হবে।আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ যার যার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে, যার যার ইচ্ছেমতো ভোট দেবে। এখানে কেউ কাউকে বাধা দিতে পারেন না। কোনোরকম সংঘাত আমি চাই না। আমি চাই, এই নির্বাচনে সত্যিকারভাবে একটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তার পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে। যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে। আর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রা সুগম হবে। তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ ৭ জানুয়ারির নির্বাচন আমরা সফল হব। জনতার জয় হবে।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষ্যে ২০ ডিসেম্বর সিলেট থেকে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচার শুরু করেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই দিন হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহ পরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারতের পর দলের নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য দেন। পরে কয়েকটি জেলায় সরাসরি জনসভায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিভিন্ন জেলায় নির্বাচনি জনসভায় অংশ নেন শেখ হাসিনা। এরই অংশ হিসাবে বুধবার রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা জেলা, রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী জেলা ও মহানগর, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল জেলা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, কুমিল্লা উত্তর-দক্ষিণ জেলা ও মহানগর এবং চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলায় নির্বাচনি জনসভায় যোগ দেন শেখ হাসিনা। এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাজশাহী : পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর সরকারি কলেজ মাঠে রাজশাহীর এ নির্বাচনি জনসভার আয়োজন করা হয়। এখানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খয়রুজ্জামান লিটন। রাজশাহী থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-৫ আসনের নৌকার প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ দারা। এ সময় রাজশাহীর অন্য ৫টি আসনে নৌকার প্রার্থীসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনি জনসভার আয়োজন করে।
টাঙ্গাইল : শহরের শহিদ স্মৃতি পৌরউদ্যানে আয়োজিত জনসভায় ভার্চুয়ালি যোগ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। টাঙ্গাইল প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের), টাঙ্গাইল-২ আসনের নৌকার প্রার্থী ছোট মনির, টাঙ্গাইল-৩ আসনের প্রার্থী ডা. কামরুল হাসান খান, টাঙ্গাইল-৪ আসনের প্রার্থী মোজাহারুল ইসলাম তালুকদার, টাঙ্গাইল-৫ আসনের প্রার্থী মামুন অর রশিদ, টাঙ্গাইল-৬ আসনের প্রার্থী আহসানুল ইসলাম টিটু, টাঙ্গাইল-৭ আসনের প্রার্থী খান আহমেদ শুভ, টাঙ্গাইল-৮ আসনের প্রার্থী অনুপম শাহজাহান জয় প্রমুখ। টাঙ্গাইলের নির্বাচনি জনসভা জনস্রোতে রূপ নেয়।