ষড়যন্ত্রের সমুচিত জবাব দেব নির্বাচনের মাধ্যমে
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের জবাব দেওয়া হবে-এমন মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, নির্বাচন বানচাল করার অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে অনেকে জড়িত। আমাদের দেশের নির্বাচন হবে না, এখানে তারা তৃতীয় পক্ষ আনবে।তৃতীয় পক্ষ কী করতে পারে? দেশের কোনো উন্নতি করতে পারে না। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এসব ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।শনিবার নিজ নির্বাচনি এলাকা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ মাঠে আয়োজিত নির্বাচনি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লন্ডনে বসে হুকুম দেবে, আর এ দেশের মানুষের ক্ষতি করবে, হত্যা করবে-এসব আর চলবে না। আল্লাহ যদি দিন দেয়, আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পারলে ওই লন্ডনে বসে হুকুম দেবে আর দেশের মানুষের ক্ষতি করবে, মানুষ মারবে সেটা হতে পারে না। দরকার হলে ওটাকে (তারেক রহমান) ওখান থেকে ধরে এনে শাস্তি দেওয়া হবে। অগ্নিসন্ত্রাসীদেরও কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
টুঙ্গিপাড়া ছাড়াও এদিন নিজ নির্বাচনি এলাকার আরেক উপজেলা কোটালীপাড়া এবং মাদারীপুরের কালকিনিতে আয়োজিত আরও দুটি নির্বাচনি জনসভায় বক্তৃতা করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এসব জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। সেখানে লাখো মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে আবারও তাকেসহ নৌকার প্রার্থীদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করার জন্য সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনটি নির্বাচনি জনসভায়ই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বোন শেখ রেহানাও মঞ্চে ছিলেন।
নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হোক : শুক্রবার বরিশালের জনসভা শেষে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধের পাশে নিজ বাড়িতে রাত্রিযাপন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। শনিবার সকাল সোয়া ১১টায় সরকারি প্রটোকল ছাড়া ও পতাকাবিহীন গাড়িতে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় আসেন। এ সময় ছোট বোন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানাও তার সঙ্গে ছিলেন। নিজের জন্য নৌকায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি আমাদের নির্বাচন। নৌকা মার্কায় আমরা ভোট করব। আপনারা সকাল সকাল এসে ভোট দিয়ে বিশ্বকে দেখাবেন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আমরা করতে পারি। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আমরা করতে পারি। আমি চাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হোক।
আমি ৩০০ আসন দেখি, আর আমাকে দেখেন আপনারা : আওয়ামী লীগ সভাপতি টুঙ্গিপাড়াবাসীর সমর্থনকে নিজের শক্তি হিসাবে উল্লেখ করে তার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ৩০০ আসন দেখি। আর আমাকে দেখেন আপনারা। কাজেই এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমার মতো সৌভাগ্যবান প্রার্থী বাংলাদেশে আর নেই। তার কারণ আপনারা।আপনারাই আমার দায়িত্ব নেন। আপনারা দায়মুক্ত করে রেখেছেন বলেই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করতে পারছি। আর আমি একজন প্রার্থী হিসাবে নৌকা মার্কায় ভোট চাই, ভোট দেবেন তো? তার প্রশ্নের উত্তরে জনসমুদ্র থেকে দুহাত তুলে এবং কণ্ঠে নৌকা স্লোগানে চারদিক প্রকম্পিত করে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে তারা অঙ্গীকার করেন। প্রত্যুত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি আপনারা ভোট দেবেন।টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল বাশার খায়েরের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক বাবুল শেখের সঞ্চালনায় বিশাল এ জনসভায় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন, অভিনেত্রী তারিন জাহান, মীর সাব্বির, শেখ ফারহান নাসের তন্ময়, শেখ খালিদ অরিন্দম তান, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, পৌর মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুলসহ জেলা ও উপজেলার নেতারা বক্তব্য দেন। এ সময় শেখ হেলাল এমপি, শেখ জুয়েল এমপি, শেখ ফজলে নাঈমসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি জনসভাকে কেন্দ্র করে শীতের প্রকোপ উপেক্ষা করে ভোর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ মিছিল নিয়ে আসতে থাকে নির্বাচনি জনসভাস্থলে। সেখানে ঢাকঢোল পিটিয়ে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নাচ-গানে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। শত শত মিছিলের তোড়ে প্রধানমন্ত্রী আসার আগে বিশাল মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে আশপাশের দীর্ঘ রাস্তা রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বিভিন্ন ভবনের ছাদ এমনকি উঁচু উঁচু গাছে চড়েও হাজার হাজার মানুষকে তাদের ভোটে নির্বাচিত এমপি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে দেখা যায়। রঙিন পোশাক পরে, হাতে লাল-সবুজ পতাকায় বর্ণিল সেজেছিল শেখ মুজিব কলেজ মাঠ ও আশপাশের এলাকা। নিজের পিতৃভূমিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা আগমনে গোটা গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়ায় ছিল উৎসবের আমেজ।
নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র যারা করে ওদের ধরিয়ে দিন : টুঙ্গিপাড়ার জনসভায় নিজের জন্য ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী যান তার আরেক নির্বাচনি উপজেলা কোটালীপাড়ায়। টুঙ্গিপাড়া থেকে কোটালীপাড়ায় যাওয়ার দীর্ঘপথের দুধারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের সঙ্গে পুরো পথ হাত নেড়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। কোটালীপাড়া শেখ লুৎফর রহমান কলেজ মাঠের নির্বাচনি জনসভাটিও রীতিমতো জনসমুদ্রে রূপ নেয়।নিজের নির্বাচনি এলাকার এ জনসভায়ও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আজকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষ হত্যা শুরু করেছে। রেলের বগিতে আগুন দিয়ে মা ও শিশুকে পুড়িয়ে মারে। রাস্তাঘাটে যেখানে সেখানে আগুন দেয়, বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে। এই দুর্বৃত্তপরায়ণতা আমাদের বন্ধ করতে হবে। যে যেখানে আছেন ওই আগুন যারা দেয় বা মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র যারা করে, ওদের ধরিয়ে দিন, উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করে দিন।
বাংলাদেশের উন্নতি-সমৃদ্ধই আমাদের লক্ষ্য : প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নতি-সমৃদ্ধই আমাদের লক্ষ্য। সেজন্যই আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। আর এই সুযোগটা আপনারাই দিয়েছেন। কারণ নৌকা মার্কায় আমাকে ভোট দিয়ে বারবার নির্বাচিত করেছেন। আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থেকে শুরু করে যেসব সুযোগ-সুবিধা আমরা দিয়েছি, সেগুলো অব্যাহত রেখেই আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি এবং কাজ করে যাব।সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দেশে দারিদ্র্যের হার অর্ধেকের বেশি কমিয়ে এনেছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আরও কমানো। হতদরিদ্র এ দেশে আর কেউ থাকবে না। যেটুকু আছে এখন ৫.৬ শতাংশ, ইনশাআল্লাহ আগামীবার নির্বাচিত হয়ে আসতে পারলে এবং জনগণের সেবা করার সুযোগ পেলে হতদরিদ্র বলে আর কেউ থাকবে না। একেবারে নিম্ন সম্প্রদায় থেকে শুরু করে প্রত্যেকেরই থাকা-খাওয়া, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা আমরা করে দেব।
বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ : আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এ বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। মুসলমান, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ-সব ধর্মের মানুষ তার সমান অধিকার নিয়ে যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে, সেটাই আমরা নিশ্চিত করেছি এবং সেটাই নিশ্চিত থাকবে। তিনি বলেন, জনগণের অধিকার নির্বাচনের অধিকার। ভোটের অধিকার।আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব,’ এই স্লোগান দিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। আজকে ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি। এ দেশকে নিয়ে জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে সবাইকে সজাগ থাকার আমি আহ্বান জানাচ্ছি।
দেশি-বিদেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই পদ্মা সেতু নির্মাণ : প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অপবাদ দিতে চেয়েছিল। আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম যে দুর্নীতি কোথায় হয়েছে সেটা প্রমাণ কর। বিশ্বব্যাংক সেই দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। কারণ কোনো দুর্নীতি এখানে হয়নি। কানাডার ফেডারেল আদালতেও এটা প্রমাণিত হয়েছে।আমরা নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, পারে নাই। জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণেও এ কথার উল্লেখ ছিল-‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’ এবং পারেনি। পদ্মা সেতু হওয়ায় পুরো দক্ষিণবঙ্গের চেহারাই পালটে গেছে। আমরা ১৫ বছরে দেশের ব্যাপক উন্নতি করেছি, বাংলাদেশ আজ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।
কোটালীপাড়াবাসীর কাছে কোনো দিন ভোট চাইতে হয়নি : শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র যারা করছে তাদেরও একদিন উপযুক্ত শাস্তি পেতে হবে। তারাও শাস্তি পাবে একদিন। আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কেউ যদি নাক গলাতে আসে আমরা সেটা মেনে নেব না। মুক্তিযুদ্ধের সময় পারে নাই, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় আমরা অর্জন করেছি।আজকে অর্থনীতির বিজয় ইনশাআল্লাহ সেটাও আমরা একদিন অর্জন করে তাদের দেখাব যে আমরা পারি। অন্তত দারিদ্র্যের হার ওই সব বড়লোকের দেশ থেকে আরও কমিয়ে আমরা আরও উচ্চমর্যাদায় ইনশাআল্লাহ নিয়ে যাব। কোটালীপাড়াবাসীর কাছে তার কোনো দিন ভোট চাইতে হয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রার্থী হিসাবে আপনাদের কাছে এসেছি। আপনারা আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। আমি সেটাই আপনাদের কাছে আবেদন করছি। তিনি বলেন, বাবা-মা, ভাই সব হারিয়েছি।আজকে আপনাদের মাঝে হারানো বাবার স্নেহ, হারানো মায়ের স্নেহ, হারানো ভাইয়ের স্নেহ। সেটাই আমার চলার পথের পাথেয়। আপনাদের ভালোবাসা ও সহযোগিতায় এটাই আমার চলার পথের একমাত্র শক্তি।
রাখে আল্লাহ মারে কে, মারে আল্লাহ রাখে কে : প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কোটালীপাড়ায় জনসভা করতে এসেছিলাম, শেখ রেহানাও সঙ্গে ছিল। ৭৬ কেজি ওজনের বোমা এখানে পুঁতে রাখা হয়েছিল। কথায় আছে, রাখে আল্লাহ মারে কে, মারে আল্লাহ রাখে কে। আমি হচ্ছি রাখে আল্লাহ মারে কে। একজন চায়ের দোকানদারের হাতে ধরা পড়ল সেই বোমা। এত নিরাপত্তা, এত পুলিশ থাকা সত্ত্বেও একজন চায়ের দোকানদার খুঁজে পেয়েছিল বলেই আমরা সেদিন বেঁচে গিয়েছিলাম। তারপরও আমি এসেছিলাম এখানে। রেহানা ও তার ছেলেমেয়েরা সঙ্গে ছিল। বক্তৃতা দিয়ে চলে গিয়েছি। যে বোমাটা হেলিপ্যাডের নিচে পোঁতা ছিল সেটা একদিন পরে পাওয়া যায়। আল্লাহই সেদিন আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। আজও সে কথা মনে পড়ে। সেই চায়ের দোকানদারের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সে যদি সেদিন বোমাটি খুঁজে না পেত তাহলে এ এলাকাটা কি হয়ে যেত। বারবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। কখনো গুলি, কখনো বোমা, কখনো গ্রেনেড হামলা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানবঢাল রচনা করে নিজের জীবন উৎসর্গ করে বারবার আমাকে রক্ষা করেছে।কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি এলাকার উন্নয়ন প্রতিনিধি শহীদ উল্লা খন্দকার, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শেখ হেলাল উদ্দীন এমপি, শেখ সারহান নাসের তম্ময় এমপি, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান, সাধারণ সম্পাদক জিএম সাহাব উদ্দিন আজম, কোটালীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, কোটালীপাড়ার পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান হাজরা প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। জনসভা সঞ্চালনা করেন কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ।
কালকিনির জনসভা : কোটালীপাড়ার জনসভা শেষ করে সড়কপথে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে মাদারীপুরের কালকিনিতে আসেন শেখ হাসিনা। বিকালে সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে জনসভায় যোগ দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।এদিকে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে একনজর দেখতে নেতাকর্মীরা শনিবার সকাল থেকে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচে-গেয়ে জনসভায় আসেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির আগমনে সড়ক থেকে জনসভার মাঠ, সবখানেই ছিল বর্ণিল সাজ। দুপুরের মধ্যেই লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে জনসভা। শেখ হাসিনার আগমনে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে বেশি উচ্ছ্বসিত ছিলেন নারী কর্মী ও নেত্রীরা। সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে সংসদেও নারীদের কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানান আগতরা। আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনার প্রত্যয় নেতাকর্মীদের। স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন, এ জনসভার মাধ্যমে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বাড়বে ভোটার উপস্থিতি।
তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের অগ্রগতি : জনসভায় যোগ দিয়ে মাদারীপুর জেলার তিনটি আসনের প্রার্থী শাজাহান খান, নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন ও ড. আবদুস সোবহান গোলাপকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।শেখ হাসিনা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি, সেখানে বিনিয়োগ হবে দেশি-বিদেশি। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বাস করে, তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের অগ্রগতি। এই তারুণ্যই আমরা উপযুক্তভাবে তৈরি করতে চাই স্মার্ট তরুণ সমাজ হিসাবে। দক্ষ জনশক্তি হিসাবে গড়তে চাই। সরকারপ্রধান বলেন, যুবসমাজের জন্য কাজের ব্যবস্থা করেছি।কম্পিউটার ও ডিজিটাল ডিভাইস এগুলোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলদেশ গড়ব, দিন বদলের সনদ দিয়েছিলাম, বাংলাদেশ ১৫ বছরে বদলে গেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেকে শুরু করে অবকাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সবদিকেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়ন করেছে। এই হলো বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আমাদের লক্ষ্য হলো ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলব।
নৌকা মার্কায় আছে বলেই এত উন্নয়ন হয়েছে : শেখ হাসিনা আরও বলেন, টানা ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশের ধারাবাহিক একটা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নৌকা মার্কায় আছে বলেই এই উন্নয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে ও জেলা পর্যায়ে এমনকি তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা, মানুষের যা যা প্রয়োজন। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।জনসভায় সভাপতিত্ব করেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ।প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন মাদারীপুর প্রতিনিধি গোলাম মাওলা আকন্দ, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি এসএম হুমায়ূন কবীর এবং কোটালীপাড়া প্রতিনিধি এইচএম মেহেদী হাসানাত