বিএনপির ৭০ নেতাকর্মীর কারাদণ্ড - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপির ৭০ নেতাকর্মীর কারাদণ্ড


মো.মুরাদ হোসেন : বিভিন্ন মামলায় বিএনপির ৭০ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং মেজর (অব.) মো. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম।বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর পাঁচটি থানার মামলায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এসব আদেশ দেন।

বিএনপির আলতাফ-হাফিজের ২১ মাসের কারাদণ্ড
পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং মেজর (অব.) মো. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রমসহ তিনজনের ২১ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি সাবেক বিএনপি নেতা ও বিএনএমের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) মো. হানিফ।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন মেজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী পৃথক দুই ধারায় এ কারাদণ্ডাদেশ দেন। দণ্ডবিধি ১৪৩ ধারায় তাদের তিনমাস ও দণ্ডবিধির ৪৩৫ ধারায় দেড় বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে তাদের আরও এক মাসের কারাভোগ করতে হবে। বয়স বিবেচনায় অভিযুক্তদের এ কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করেন বিচারক।

মামলার অন্য আসামি এমএ আউয়াল খান, মো. রাসেল, মঈনুল ইসলাম, মো. বাবুল হোসেন ওরফে বাবু ও মো. আলমগীর হোসেন ওরফে রাজুকে পৃথক দুই ধারায় সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।দণ্ডবিধির ১৪৩ ধারায় ছয়মাস ও দণ্ডবিধির ৪৩৫ ধারায় তাদের তিন বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।এ মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশিটভুক্ত অপর ১১ আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- ঢাকা সিটিকরপোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এমএ কাউয়ুম, মো. দুলাল, তোফায়েল আহম্মেদ ওরফে লিটন, মো. জাহাঙ্গীর শিকদার ওরফে বাবু, আরিফুল ইসলাম, মো. বিল্লাল হোসেন, মো. সামসুল হক মিয়াজী, মো. বিপ্লব, মো. খুরশিদ আলম মমতাজ, মো. মোশারফ হোসেন ও মো. মাহাবুব।মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, আসামিরা ২০১১ সালের ৪ জুন গুলশান থানার মহাখালী ওয়ারলেস গেট পানির ট্যাংকির সামনে রাস্তায় সমাবেশ করেন। সেখান থেকে তারা পুলিশের কাজে বাধা দেন এবং আক্রমণ করেন। রাস্তায় চলাচলরত গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেন। ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল মামলাটি তদন্তের পর গুলশান থানার এসআই কামরুল হাসান তালুকদার আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০২২ সালের ২৫ এপ্রিল এ মামালায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলার বিচার চালাকালীন আদালত ১২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।

গত ৫ নভেম্বর সকালে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ওই দিনই প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় রমনা মডেল থানায় করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এরপর আদালতে হাজির করে তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে পুলিশ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদীর আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। তবে মেজর হাফিজসহ অন্য আসামিদের পলাতক দেখানো হয়েছে।

শাহবাগ থানার মামলায় ১৩ নেতাকর্মীর কারাদণ্ড
সাত বছর আগে রাজধানীর শাহবাগ থানায় করা মামলায় বিএনপির ১৩ নেতাকর্মীর দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২২ জনের বেকসুর খালাস দেন আদালত।কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- দোলোয়ার হোসেন শান্ত, মো. সেলিম মোল্লা, মো. স্বপন বেপারী, নাজমুল হাসান, মো. লুৎফর রহমান, মো. আরাফাত, মো. কামাল হোসেন, মো. আব্দুর রহিম, আবুল খায়ের, মো. মহি উদ্দিন, মো. সোলায়মান আলী, জাহিদুল ইসলাম ও মো. মোখলেছ মিয়া।২০১৭ সালের জুনে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়।

উত্তরখান থানার মামলায় ৩২ জনের কারাদণ্ড
নাশতার অভিযোগে ২০১৮ সালে রাজধানীর উত্তরখান থানায় করা এক মামলায় বিএনপির ৩২ নেতাকর্মীকে দণ্ডবিধির পৃথক দুই ধারায় ২০ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মো. আহসান হাবীব মোল্লা, মো. রায়হান, মো. সেলিম মোল্লা, মো. আনোয়ার হোসেন বকুল, মো. নোয়াব আলী খান, মো. ফায়েজুল ইসলাম সবুজ, সৈয়দ সুজন আহমেদ, মো. আব্দুর রহিম, মো. তোফাজ্জল হোসেন ওরফে মিঠু, জাহাঙ্গীর আলম বেপারী, মো. কিরণ সরকার, সরকার রফিকুল ইসলাম মুকুল।

মো. রাসেল মোল্লা, মো. খোকন পারভেজ হিরণ, মো. ইয়াকুব আলী, মো. আরিফ উদ্দিন এনামুল, মো. আব্দুর রশীদ ভূইয়া, মো. আসাদুল হক শুভ, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. গোলাম মোস্তফা, মো. জাকির হোসেন, মো. রস্তম আলী, শরীফুল আলম সবুজ, মো. নুরুজ্জামান হাওলাদার ওরফে সোহেল, মো. সাব্বির সরকার, মো. হাবিবুর রহমান দুদু মিয়া, মো. কামাল হোসেন, মো. মমতাজ উদ্দিন, লুৎফর রহমান খোকন, মো. হারুন অর রশিদ হারুন, মো. জাকির হোসেন ও হাফিজুল ইসলাম ওরফে সবুজ।মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বিএনপির নেতাকর্মীরা নাশকতার উদ্দেশ্যে এবং কর্তব্যরত পুলিশের কাজে বাধা দিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশকে আহত করেন। পরে উত্তরখান থানার এসআই মো মনিরুজ্জামান আকন্দ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। বিচার চলাকালীন এ মামলায় ৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।

শেরেবাংলা নগর ও পল্টন থানার মামলায় ১৭ জনের কারাদণ্ড
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর ও পল্টন থানায় এক দশক আগে করা দুই পৃথক মামলায় বিএনপির ১৭ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান।এর মধ্যে শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় বিএনপির ১২ নেতাকর্মীকে দুই ধারায় ১৮ মাস ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়াও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৪ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর হরতালে গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। মামলার বিচার চলাকালে আদালতে সাক্ষ্য দেন ৫ জন।এক দশক আগে পল্টন থানায় করা আরেক মামলায় বিএনপির ৫ নেতাকর্মীকে দুই ধারায় ছয় মাসের সাজা দিয়েছেন একই আদালতের বিচারক। এছাড়াও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশিটভুক্ত অপর ৩ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পল্টন থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়। এরপর তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১৭ মে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পরে ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চার্জ গঠনের মাধ্যমে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করেন আদালত। মামলার বিচার চলাকালে ৬ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।

Top