জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন ২৮০ জন
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল শুনানি করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন ২৮০ জন। তাদের মধ্যে অন্তত ১২৬ জনই স্বতন্ত্র। বাকিরা নিবন্ধিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী।আপিলে আওয়ামী লীগের ২ জন ও জাতীয় পার্টির অন্তত ১৮ জনকে বৈধ প্রার্থী ঘোষণা করেছে ইসি। এছাড়া ‘কিংস পার্টি’ হিসাবে পরিচিত তৃণমূল বিএনপির ১৬ ও বিএনএমের ৭ প্রার্থীর প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার পর্যন্ত ৬ দিন নির্বাচন কমিশনে আপিল শুনানিতে অংশ নিয়ে এসব প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। এর আগে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাদের প্রার্থিতা বাতিল করেছিলেন। ইসিতে আপিল শুনানিতে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি বাতিলের ঘটনাও ঘটেছে। সংক্ষুব্ধ প্রার্থীদের আপিলের প্রেক্ষিতে ওই ৬ দিনে ৬ জন বৈধ প্রার্থির প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। তার মধ্যে তিনজন আওয়ামী লীগের ও বাকি তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। গত ৬ দিনে দেওয়া ইসির তথ্য পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।আরও জানা গেছে, গত ৬ দিনে ৫৬০টি আপিল শুনানি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এতে ২৮৫টি আপিল মঞ্জুর হয়েছে। আর আপিল নামঞ্জুর হয়েছে ২৭৫টি। একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক আপিলও হয়েছে। এ কারণে প্রার্থীর সংখ্যার চেয়ে আপিলের সংখ্যা বেশি। শুনানির শেষ দিনে শুক্রবার ৮৪টি আপিল শুনানি করে নির্বাচন কমিশন। এদিন ২২টি আপিল মঞ্জুর ও ৬২টি নামঞ্জুর হয়। শুক্রবার শুনানিতে ২০ প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
দেশের ৩০০ আসনে দুই হাজার ৭১৬ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তাদের মনোনয়নপত্র ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাই করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এতে এক হাজার ৯৮৫ জনের প্রার্থিতা বৈধ এবং ৭৩১ জনের প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, বৈধ ও অবৈধ-দুই ধরনের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করা যায়নির্বাচন কমিশনে ৫৬০টি আপিল জমা হয়। আপিলে বাতিল হওয়া ছয় প্রার্থীকে বাদ দিয়ে এবং নতুন করে ফিরে আসা ২৮০ জন যুক্ত করলে এ নির্বাচনে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় দুই হাজার ২৬০ জনে। রোববার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় নির্ধারিত রয়েছে। ওই সময়ের পর এ নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।যদিও আপিল শুনানির পর নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বলেন, রিটার্নিং অফিসারের বাছাইয়ে মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ৩৫টি আপিল দায়ের হয়েছিল। আর প্রার্থিতা বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল হয়েছিল ৫২৫টি। এই মিলিয়ে ৫৬০টি আপিল দায়ের হয়েছিল।আপিল শুনানিতে মনোনয়নপত্র বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে ২৮০টি আপিল আবেদন কমিশন মঞ্জুর করেছেন। আর রিটার্নিং অফিসারের বাছাইয়ে যে ৩৫টি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল হয়েছিল তার ভেতরে পাঁচটি মঞ্জুর বা পাঁচজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে, দুটি আপিল আবেদন খারিজ করা হয়েছে, ২৮টি নামঞ্জুর করা হয়েছে। তবে দলভিত্তিক কতজন প্রার্থী প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন তা জানাতে পারেননি তিনি।
যদিও নির্বাচন কমিশনের রায়ে ছয়জন বৈধ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের তথ্য পাওয়া গেছে। তারা হলেন-আওয়ামী লীগের ফরিদপুর-৩ আসনের শামীম হক, যশোর-৪ আসনের এনামুল হক বাবুল ও ময়মনসিংহ-৯ আসনের আব্দুস সালাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরানিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, পাবনা-২ আসনের স্বতন্ত্র খন্দকার আজিজুল হক আরজু ও সুনামগঞ্জ-৪ আসনের বিএনএমের প্রার্থী দেওয়ান শামছুল আবেদীন। ইসি সূত্রে জানা গেছে, রিটার্নিং কর্মকর্তার যাচাই-বাছাইয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ৫ প্রার্র্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। তারা সবাই নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন। আপিলে দুজন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। অপরদিকে প্রতিপক্ষের আপিলে বৈধ ঘোষণা হওয়া তিনজনের প্রার্থিতা বাতিল হলো। সবমিলিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও ছয়জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না।
শেষ দিনে আ.লীগের একজনের প্রার্থিতা বাতিল, ফেরত পেলেন না দুজন : নির্বাচন কমিশনের আপিল শুনানির শেষ দিনে শুক্রবার আওয়ামী লীগের একজন বৈধ প্রার্থী তার প্রার্থিতা হারিয়েছেন।অপর দুই প্রার্র্থী আপিল করেও প্রার্থিতা ফিরে পাননি। ফরিদপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী একে আজাদ একই আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে ইসিতে শুনানি করেন।শামীম হক দ্বৈত নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও তার প্রার্থিতা রিটার্নিং কমর্কতা বৈধ করেছেন এ দাবি করে আপিল দায়ের করেন একে আজাদ। শুনানিতে শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করে ইসি। এদিকে শামীম হকও একে আজাদের বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ এনে আবেদন করলে ইসি তা নাকচ করে দেয়।অপরদিকে বরিশাল-৫ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহিদ ফারুক তার আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহার বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকসংক্রান্ত অভিযোগ এনে প্রার্থিতা বাতিল চান। আগের দিনের এই পেন্ডিং আপিল শুনানি করে শুক্রবার জাহিদ ফারুকের আপিলের পক্ষে রায় দেয় কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। এতে সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল হয়।অপরদিকে বরিশাল-৫ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. শাম্মী আহমেদ নিজের প্রার্থিতা ফেরত এবং প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান এমপি পংকজ নাথের প্রার্থিতা বাতিলের দাবিতে পৃথক দুটি আপিল করেন। শুক্রবার তার দুটি আবেদনই নামঞ্জুর করা হয়। ইসির এ সিদ্ধান্তের ফলে শাম্মি আহমেদের প্রার্থিতা বাতিল বহাল রইল।পাশাপাশি পংকজ নাথকে বৈধ ঘোষণা করে রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশও বহাল রাখে ইসি কক্সবাজার-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমদ তার প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার আপিলের শুনানি হয়। ওই শুনানিতে তার আপিল নামঞ্জুর করে ইসি। ফলে তিনিও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারছেন না।
অপরদিকে সাবেক বিএনপি নেতা ঝালকাঠী-১ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত শাহজাহান ওমরের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুজ্জামান মনির আপিলের ওপর শুক্রবার শুনানি হয়। শুনানিতে ওই আপিল নামঞ্জুর করা হয়। ওই রায়ের ফলে শাহজাহান ওমরের প্রার্থিতা বহাল রইল।শেষ দিনে যারা প্রার্থিতা ফিরে পেলেন : আপিল শুনানির শেষ দিনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কুষ্টিয়া-২ আসনের মো শরিফুজ্জামান, নেত্রকোনা-১ আসনের আফতাব উদ্দিন, ময়মনসিংহ-৮ আসনের কানিজ ফাতেমা, ঝালকাঠী-১ আসনের মোহাম্মদ ইসমাঈল, ঢাকা-১৮ আসনের ফাহিমিদা হক সুকন্যা ও কুমিল্লা-১১ আসনের মো. নিজাম উদ্দীন প্রার্থিতা ফেরত পেয়েছেন।
জাতীয় পার্টি ফরিদপুর-৪ আসনের মো. আনোয়ার হোসেন ও খুলনা-৫ আসনে মো. শহিদ আলম মঞ্জুর; খেলাফত আন্দোলনের কুমিল্লা-২ আসনের মাওলানা সুলতান মহিউদ্দিন ও কুমিল্লা-৮ আসনের ফারাহ মো. আ. আজিজ; বাংলাদেশ কংগ্রেসের রংপুর-৬ আসনের মো. মাহবুব আলম; তৃণমূল বিএনপির যশোর-৩ আসনের মো. কামরুজ্জামান, নাটোর-৩ আসনের মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন ও ফেনী-৩ আসনের আজিম উদ্দিন আহমেদ; বিএনএফের কুমিল্লা-৯ আসনের জসিম উদ্দিন ও যশোর-২ আসনের মো. শাসছুল হক প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।এছাড়া সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মৌলভীবাজার-৩ আসনের মো. ফাহাদ আলম ও ফেনী-৩ আসনের এবিএম জোবায়ের ইবনে সুফিয়ান; জাসদের কুমিল্লা-৯ আসনের মনিরুল আনোয়ার এবং এনপিপির নওগাঁ-৬ আসনের ইন্তেখাব আলম তাদের প্রার্থিতা ফেরত পেয়েছেন।