দুষ্কৃতকারী কয়েকজনের লাফালাফিতে এ দেশের নির্বাচন কখনও বানচাল করতে পারবে না - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুষ্কৃতকারী কয়েকজনের লাফালাফিতে এ দেশের নির্বাচন কখনও বানচাল করতে পারবে না


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ওরা (বিএনপি-জামায়াত) নির্বাচন চায় না, দেশে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। ওদের চক্রান্ত হলো নির্বাচন বানচাল করা। ওইসব দুষ্কৃতকারী কয়েকজনের লাফালাফিতে এ দেশের নির্বাচন কখনও বানচাল করতে পারবে না। মানুষের ভাগ্য নিয়ে তাদের আর ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। নির্বাচন বানচালের যে কোনো অপচেষ্টার বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যেখানেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটবে, সেখানেই বিএনপি-জামায়াতের দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করে ধরিয়ে দিতে হবে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে শুক্রবার বিকালে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।দেশের জনগণই আওয়ামী লীগের শক্তি এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কোনো মুরব্বি নেই। আমাদের আছে বাংলাদেশের জনগণ। সেই জনগণ নিয়েই আমাদের চলতে হবে। আমরা মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছি। জাতির পিতা ও জাতীয় চার নেতার আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নির্বাচন হলে সিট পাবে না, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারবে না-এটা জেনে বিএনপি নির্বাচনে আসবে কিনা, জানি না। যদি আসে তবে অতীতের মতো মনোনয়ন বাণিজ্য করতে আসবে। এরা নির্বাচন বানচালের জন্য আরও অনেক কিছু ঘটানোর চেষ্টা করবে। এদের আবার অনেকে মদদ দিচ্ছে। আসলে খুন-সন্ত্রাস ছাড়া এরা অন্য কিছু জানে না। দেশের এত উন্নয়ন ও অর্জন ধ্বংস করে দিতে চায়।

নির্বাচনে নানাভাবে গোলমাল করার চেষ্টা হবে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মানুষ যেন শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারে সেই পরিবেশ রাখতে হবে। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে সুষ্ঠু নির্বাচন করে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন, সবাইকে যার যার এলাকায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অগ্নিসন্ত্রাস যারা করে, যে হাতে আগুন দেয় ওই হাত পুড়িয়ে দিতে হবে। যেমন কুকুর তেমন মুগুর। তা না হলে তাদের শিক্ষা হবে না। কোনো এলাকায় অগ্নিসন্ত্রাস করলে জড়িতদের খুঁজে বের করে ধরিয়ে দিতে হবে। এরা যাতে মানুষের জানমালের ক্ষতি করতে পারে তার সুরক্ষা দিতে হবে। এটাই আওয়ামী লীগের দায়িত্ব।আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ওরা ২০০৮ এর নির্বাচনে ৩০০ সিটের পেয়েছিল মাত্র ৩০টি। এখন তো ওদের অপকর্মের জন্য মানুষ আরও বিমুখ। আর নির্বাচন কাকে নিয়ে করবে? নির্বাচন করলে ওদের নেতা কে? কাকে প্রধানমন্ত্রী করবে? কাকে দিয়ে মন্ত্রিসভা করবে? সে কারণে তারা ইলেকশন চায় না। ইলেকশন বন্ধ করে দিয়ে তারা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,তাদের চেয়ারপারসন তো দুর্নীতির দায়ে জেলে। আমার বাবা-মাসহ ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তো এই জিয়া পরিবারই দায়ী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে তারা জড়িত তাও স্পষ্ট। অনেকবার আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। তবু অসুস্থতা বিবেচনায় আমি তাকে (খালেদা জিয়া) বাসায় থাকতে দিলাম। একটা কুলাঙ্গার ছেলে তৈরি করে দিয়ে গেছে জিয়াউর রহমান। ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও মানি লন্ডারিং মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার এফবিআই এসে সাক্ষী দিয়ে গেছে, তার সাজা হয়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, আজকের বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস তাদের সেই বীভৎস চেহারা আবার প্রকাশ পেয়েছে। এটা তারা ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালেও ঘটিয়েছিল। ২০০১ সালেও আমরা তাদের চেহারা দেখেছি। এরা দেশের ক্ষমতায় যখন ছিল তখন আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে, জেলে পুরেছে। তত্ত্বাবধায়কের আমলে মুচলেকা (তারেক রহমান) দিয়ে চলে যায়। এখন নাকি ওখানে বসে জুয়া খেলে আর পাউন্ড ইনকাম করে। আর ওখান থেকে জ্বালাও-পোড়াও করার নির্দেশ দেয়। বিএনপিতে আর কোনো নেতা নেই? যারা অন্তত লেখাপড়া সব দিক থেকে ভালো। ওই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে তারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছে। ২৮ অক্টোবরের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, এক নিরীহ পুলিশ সদস্যকে কিভাবে মেরেছে? মাথার হেলমেটটা পর্যন্ত খুলে নিয়ে কোপাল। এরা কি মানুষ? এদের মধ্যে কি মনুষ্যত্ব আছে? এরা কিসের রাজনীতি করে? কার জন্য রাজনীতি করে?আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নমিনেশন সেটা তো আমরা দেব। আর আমি বসে থাকি না। প্রতি ৬ মাস পরপর আমার একটা হিসাব থাকে। কেউ যদি মনে করে, এখন তো ওরা নেই আমরা দাঁড়ালে জিতেই যাব-আর একটা সিট না পেলে কী হবে। বাকি সিট তো পাবে, সরকার গঠন করবে। এই চিন্তা যেন কারও মাথায় না থাকে। কারণ এ চিন্তা কিন্তু সর্বনাশ ডেকে আনবে। যে সিদ্ধান্ত দেব তা মানতে হবে।দ্রব্যমূল্য নিয়ে নানাভাবে চক্রান্ত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব কিছুর উৎপাদন বেড়েছে তাহলে কিসের অভাব হবে? এগুলোর পেছনে কারা আছে? মজুত করে রেখে দেবে কিন্তু বাজারে আনবে না। না এনে দাম বাড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবে। এটাই তারা করে যাচ্ছে। এ ধরনের মজুত করে যারা জনগণের পকেট কাটার চেষ্টা করে তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে। উৎপাদন এতটুকু কমেনি। সবকিছুর উৎপাদন বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে আমরা কিনে আনছি। কিন্তু সেটা মানুষের কাছে পৌঁছাবে না কেন?

শেখ হাসিনা বলেন, প্যালেস্টাইনে আজ কী হচ্ছে। হাসপাতালে বোমা মেরেছে। আর এখানেও দেখলাম, এই বিএনপি-জামায়াত পুলিশ হাসপাতালে আগুন দেয়, অ্যাম্বুলেন্স পোড়ায়। ভাঙচুর করে। তারা কোথা থেকে কী শিক্ষা পাচ্ছে? সেটাই আমাদের প্রশ্ন। ফিলিস্তিনে জনগণের ওপর যখন অত্যাচারে আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু এদের (বিএনপি) মুখে একটাও কথা নেই। তারা কি একটা প্রতিবাদ করেছে? করেনি। তাহলে কাদের তাঁবেদারি করে? কাদের পদলেহন করে লাফালাফি করে সেটাই প্রশ্ন? তিনি বলেন, স্বাধীনতার সময়ে অনেক দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণই অস্ত্র হাতে তুলে স্বাধীন করেছিল। বাংলাদেশের জনগণই সব ক্ষমতা রাখে।আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন-দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, শাজাহান খান, শহিদ জাতীয় নেতা তাজউদ্দিন আহমদের কন্যা সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সিমিন হোসেন রিমি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, শহিদ জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা সৈয়দা জাকিয়া নূর এমপি, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী। সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম। সভার শুরুতে জাতির পিতাসহ শহিদ জাতীয় চার নেতার স্মরণে ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।

Top