উদ্ধার হয়নি পাউবো’র বেদখল সাড়ে ১০ একর জমি - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উদ্ধার হয়নি পাউবো’র বেদখল সাড়ে ১০ একর জমি


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :সিলেট, খুলনা ও পটুয়াখালীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কয়েকশ কোটি টাকা দামের জমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। এসব জমির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১০ একর। একটি প্রভাবশালী চক্র জমিগুলো দখল করে স্থাপনাও করেছে। উচ্চ আদালত থেকে রায় পাওয়ার পর পাউবো জমি উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণে তিন জেলা প্রশাসনকে দাপ্তরিক পত্রও দেয়। কিন্তু অদ্যাবধি নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।জানতে চাইলে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড বা সরকারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যে কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে জমি অধিগ্রহণ হতে পারে। সেই জমি যদি অবৈধ দখলে চলে যায় তাহলে জেলা প্রশাসকই তো সরকারের পক্ষে অবস্থান নেবেন। উচ্ছেদ কার্যক্রম কেন এতদিনেও নেওয়া হয়নি সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেব।তিনি বলেন,উচ্ছেদ মামলা করে অধিগ্রহণকৃত জমির নথিপত্র যাচাই সাপেক্ষে সরকারের অনুকূলে আনতে প্রয়োজনে আবারও সংশ্লিষ্ট তিন জেলার জেলা প্রশাসককে তাগিদ দেওয়া হবে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক নুরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘দখলকৃত জমি পুনরুদ্ধারে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসিদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সংরক্ষিত বাঁধের জমি দখলের বিষয়টি সম্পর্কে আমি উচ্ছেদের সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে তাগিদ দিয়েছিলাম। এরপরও জেলা প্রশাসন থেকে উচ্ছেদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও শুনেছি। কিন্তু কেন সেটি থেমে গেছে জানি না।

তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি মানেই তো সরকারি সম্পত্তি। এই জমিকে পৃথক করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কারণ বৈশ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়েই এসব জমি সরকার অধিগ্রহণ করেছে। দেশ এবং এলাকার স্বার্থেই এই জমি যে কোনো সময় সরকারের প্রয়োজন হতে পারে। তাই জেলা প্রশাসনের উচিত হবে পাউবোর অধিগ্রহণকৃত জমি দখলমুক্ত করা। জমি পাউবো’র নামে হলেও এটা রাষ্ট্রীয় সম্পদ।তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় সংরক্ষিত বাঁধের ওপর একটি বরফ কল প্রতিষ্ঠার এক যুগ পর উচ্ছেদের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েও শেষ পর্যন্ত হয়নি। ফিরে আসেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তবে স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রভাবশালীর তদবিরে তারা সেখানে উচ্ছেদ পরিচালনা করতে পরেননি। জমিটির অবস্থান কলাপাড়ার আলীপুরে। উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক জলোচ্ছ্বাসে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এই জমি সংরক্ষণ করে। ১৯৬৩ সালে জমিটি অধিগ্রহণ করা হয়। সর্বশেষ মাঠ জরিপেও জমিটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অথচ এখানকার প্রায় ৩ একর সরকারি জমি সাবরেজিস্ট্রি অফিসে বেচাকেনাও হয়েছে। শুধু তাই নয়, সরকারি এই জমি ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে অ্যাগ্রো ইনডেক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান।২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ‘সরকারি জমি বন্ধক রেখেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ১৪৬ কোটি টাকা ঋণ’, শিরোনামে যুগান্তরে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপরই নড়েচড়ে বসে পনি উন্নয়ন বোর্ড। এরপরই পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে দখলকারী প্রতিষ্ঠানকে নোটিশও করা হয়। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাকে জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাখা হয় জমিটি। দখলকারীরা এতটাই প্রভাবশালী যে, কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড।জানতে চাইলে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি জেলায় যোগদানের পর বিষয়টি প্রথম জানলাম। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সিলেটে সাড়ে ৬ একর : সিলেট শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা আম্বরখানা মৌজায় প্রায় সাড়ে ৬ একর জমি অবৈধ দখলে যাওয়ার দাবিও করেছে পনি উন্নয়ন বোর্ড। এই জমির আনুমানিক মূল্য প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা।

পাউবো’র সংশ্লিষ্ট শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাইকোর্টের আপিল বিভাগ থেকে পাউবো’র পক্ষে রায় ও আদেশ প্রদান সত্ত্বেও আম্বরখানা মৌজায় ৬ একর ৬০ শতক জমি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হয়নি। আম্বরখানা মৌজায় ১৯৬৩-৬৪ সালে ১৫ একর ২ শতক জমি পাউবোর নামে অধিগ্রহণ করা হয়। অধিগ্রহণকৃত এই জমির মধ্যে ৬ একর ৬০ শতক জমি অবমুক্তকরণের আদেশ চেয়ে মোসাম্মৎ বরাতুন্নেছা গং কর্তৃক পাউবো’র বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দায়ের করে। এরপর আপিল পালটা আপিলেও আদেশ পাউবো’র পক্ষে আসে। কিন্তু সিলেট জেলা প্রশাসনের অবহেলার কারণে এই জমির অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না।সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বলেন, ‘এক বছর হয় আমি সিলেটে যোগদান করেছি। তবে পাউবোর কোনো কর্মকর্তা আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করেননি। তবে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

খুলনায় ৫৩ শতক : খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় ৫৩ শতক জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন জগন্নাথ দত্ত নামের আরেক ব্যক্তি। জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় ৩৮নং আরাজি সাজিয়াড়া মৌজায় পাউবো’র অধিগ্রহণকৃত এই জমি দখল করে রেখেছেন তিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে উচ্চ আদালত থেকে রায় পাওয়ার পরও অধিগ্রহণকৃত এই জমি উদ্ধারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। জেলা জজ আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালত পর্যন্ত সবখানেই জগন্নাথ দত্ত মামলা করে হেরেছেন। তারপরও অবৈধভাবে দখলে রাখা জমি থেকে তাকে উচ্ছেদ করা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জনা যায়, ১৯৬৪ সালে (এলএ কেস নং-৫৬/১৯৬৪-৬৫) পজিশন সার্টিফিকেট অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুকূলে অধিগ্রহণকৃত ৫৩ শতক জমি দখল করার তথ্য পায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরপরই জগন্নাথ দত্তকে উচ্ছেদে চূড়ান্ত নোটিশ প্রদান করা হয়। উক্ত উচ্ছেদ নোটিশকে আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণার আদেশ চেয়ে জগন্নাথ দত্ত হাইকোর্ট বিভাগে রিট করে হরেছেন। ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ডুমুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে উচ্চ আদালতের সর্বশেষ আদেশসহ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দাপ্তরিক পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি উচ্ছেদের বিষয়ে মিস কেস নথিও খোলা হয়নি।সরকারি সম্পদ রক্ষায় কেন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন বলেন, ‘গত ডিসেম্বরে খুলনায় যোগদানের পর আমাকে এ বিষয়ে কেউ কোনো কিছু জানায়নি। তবে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়ে উচ্ছেদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।

Top