স্ত্রী হত্যা মামলায় দণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর উপস্থিতি প্রমাণের ওপর জোর দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্ত্রী হত্যা মামলায় দণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর উপস্থিতি প্রমাণের ওপর জোর দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :স্ত্রী হত্যা মামলায় দণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর উপস্থিতি প্রমাণের ওপর জোর দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, সাক্ষ্য আইনের ১০৬ ধারা অনুযায়ী ঋণাত্মক দায় নীতি (ঘটনার সময় স্বামীর উপস্থিতি) প্রযোজ্য হয়, তাহলে মামলার আসামিকেই প্রমাণ করতে হবে যে সেখানে হত্যাকাণ্ড ঘটেনি।আর যদি হত্যাকাণ্ড ঘটেও থাকে তাহলে সেটা যৌতুকের দাবিতে হয়নি। তবে এই ঋণাত্মক দায় নীতিমালা প্রযোজ্য হওয়ার আগে দুটি প্রাথমিক বিষয় রাষ্ট্রপক্ষকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে উঠে প্রমাণ করতে হবে। এর একটি হলো- মামলার ভিকটিম (স্ত্রী) আসামির হেফাজতে ছিল এবং ঘটনার সময় আসামি ও ভিকটিম একত্রে ছিল।যশোরে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত স্বামী আবদুল্লাহ ওরফে তিতুমীরকে খালাস দিয়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। রায়ে বলা হয়েছে, স্ত্রী হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষকে প্রমাণ করতে হবে যে অপরাধ সংঘটনের সময় স্বামীর হেফাজতে ছিল স্ত্রী এবং তিনিই তার স্ত্রীকে হত্যা করেছেন। ৬ ফেব্রুয়ারি দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১০ সালে যশোরের কোতোয়ালি থানার সালমা খাতুনের সঙ্গে বিয়ে হয় আবদুল্লাহ ওরফে তিতুমীর ওরফে তিতুর। দেড় বছরের সংসার জীবনের সমাপ্তি হয় ২০১২ সালের ৯ জুলাই। ওইদিন রাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে অগ্নিদগ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয় সালমার। স্বামীর বিরুদ্ধে ভিকটিমের বাবার করা মামলায় অভিযোগ করা হয়, যৌতুক হিসেবে মোটরসাইকেল না দেওয়ায় সালমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসরোধ করে কেরোসিনজাতীয় পদার্থ গায়ে ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তিতুমীরকে মৃত্যুদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করে ট্রাইব্যুনাল।এ মামলার ডেথ রেফারেন্স খারিজ ও আসামির আপিল গ্রহণ করে হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, মামলার ভিকটিম সালমা তার স্বামী তিতুমীরের হেফাজতে ছিল এবং ঘটনার দিন ও রাতে বা ঘটনার সময় তারা একত্রে ছিল এটা রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। যেহেতু আসামির ন্যূনতম উপস্থিতি প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছেন সেহেতু এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, সাক্ষ্য আইনের ১০৬ ধারা অনুযায়ী এবং আমাদের উচ্চ আদালত কর্তৃক গৃহীত এবং বিভিন্ন সময়ে প্রণীত ঋণাত্মক দায়মূলক নির্দেশনা এই মামলার আসামির ওপর কোনোভাবেই বর্তায় না।রায়ে বিচারিক আদালতের ফাঁসির রায় বাতিল করে দণ্ডিত তিতুমীরকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।

Top