উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিন - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিন


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবং বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে যে নির্বাচন হবে এই বছরের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, সেই নির্বাচনেও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী জনগণের ওয়াদা চাইলে জনতা উচ্চকণ্ঠে দুই হাত তুলে সমর্থন ব্যক্ত করেন।মঙ্গলবার বিকালে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন হেলিপ্যাড মাঠে বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগ এ সমাবেশের আয়োজন করে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কোনো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। মা, বাবা, ভাই-সব হারিয়েছি। আমি নিঃস্ব, রিক্ত।এদেশের মানুষকে আমার বাবা ভালোবেসেছিলেন, তিনি তার জীবন দিয়ে গেছেন। জীবন দিয়ে গেছেন আমার মা, আমার ভাইয়েরা। আজ আমি আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য।আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন যখন ক্ষমতায় আসে, দেশের মানুষের কল্যাণ হয়। মানুষ খেয়ে-পরে ভালো থাকে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। ১৪ বছরে আজকের বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে উন্নয়নের রোল মডেল। এই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।তিনি বলেন, এই মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রামসহ কিশোরগঞ্জের প্রতিটি সিটে গত নির্বাচনে এবং পরপর এই তিন নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। তাই আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।এই বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক নৌকা, সেই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আজ কিশোরগঞ্জ আর অবহেলিত নেই।উন্নত একটি জেলায় উন্নীত হয়েছে, প্রতিটি উপজেলা উন্নত হচ্ছে এবং নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই এ দেশের মানুষ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি।মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জের উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জই সব সময় রাষ্ট্রের প্রধান হয়ে সারা বাংলাদেশ পরিচালনা করছে।মঞ্চে উপস্থিত রাষ্ট্রপতির ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ-সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিককে দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গত নির্বাচনে রাষ্ট্রপতির ছেলেকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন।

আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আগামী দিনেও একমাত্র নৌকা মার্কা সরকারে এলে আপনাদের উন্নতি হবে, দেশের উন্নতি হবে। এই হাওড় অঞ্চলের উন্নয়নে যে সার্বিক কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন করছি, সেগুলো বাস্তবায়িত হবে। তিনি বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। তাই আপনাদের পাশে আমরা সব সময় আছি।আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে অন্য সরকারগুলোর কাজের তুলনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ওইসব সরকার লুটপাট, অর্থ পাচার, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা করে আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায়।মানুষের ওপর অত্যাচার আর মানুষকে শোষণ করা ছাড়া আর কিছু তারা দিতে পারেনি, পারবেও না। সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরশাসক বিএনপি গঠন করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) জনগণকে নির্যাতন ও লুটপাট ছাড়া কিছুই দিতে পারে না। কেননা যাদের হাতে এই দলটি সৃষ্টি, তারা কখনো জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় যায় না, ক্ষমতা দখল করে।যে ক্ষমতা দখলকে উচ্চ আদালতও অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তাই যখনই এরা ক্ষমতায় এসেছে, এ দেশের মানুষের সম্পদ লুট করেছে। বিদেশে পাচার করে এখন আরাম-আয়েশে দিন কাটায়।মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল হকের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক বাবু সমীর কুমার বৈষ্ণবের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এমএ আফজাল প্রমুখ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ সেনানিবাস উদ্বোধন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অবাধ পানিপ্রবাহ ও নিরাপদ মৎস্য উৎপাদনের জন্য হাওড়াঞ্চলের প্রতিটি সড়ক এলিভেটেড করা হবে। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ সেনানিবাস উদ্বোধনকালে একথা বলেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যেই জমি ভরাট না করে হাওড়, বিল ও জলাভূমি এলাকার প্রতিটি রাস্তা এলিভেটেড করার নির্দেশনা দিয়েছি। বর্ষা মৌসুমে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ও মাছের চলাচল যেন বাধাগ্রস্ত না হয় এবং নৌকাসহ মানুষের যোগাযোগব্যবস্থা যেন ব্যাহত না হয়, সেজন্য সব সড়ক এলিভেটেড করা হবে।হাওড় এলাকাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে এই সেনানিবাসটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও শক্তিশালী করা হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর থেকে এ এলাকায় বারংবার নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছেন। এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের পাশে থেকে এবং তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে তিনি (আবদুল হামিদ) তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।’ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এই এলাকার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি এখানে একটি সেনানিবাস স্থাপনের ইচ্ছা করেন।সরকারপ্রধান আরও বলেন, তার ইচ্ছা অনুযায়ী আমরা এই সেনানিবাস স্থাপন করেছি। আবদুল হামিদ ডেপুটি লিডার, ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার এবং শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির মতো পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি যে পদেই ছিলেন, সেখানেই অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। এমনকি তিনি তার টানা দ্বিতীয় মেয়াদেও সফলভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই আমরা তার নামে সেনানিবাসের নামকরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে যাতে মন্দার ঢেউ দেশে আঘাত করতে না পারে। আমাদের সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে, আমাদের কঠোরতা বজায় রাখতে হবে এবং আমাদের সম্পদ সংরক্ষণ করতে হবে।তিনি বলেন, সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন, রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং বরিশালে ৭ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করেছে।সরকার গত ৪ বছরে বিভিন্ন ফরমেশনের অধীনে ৩টি ব্রিগেড ও ৫৮টি ছোট-বড় ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা একই সময়ে অ্যাডহক হিসাবে ২৭টি ছোট-বড় ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছে এবং ৯টি সংস্থাকে পুনর্গঠিত করেছে।গত বছর তিনি মাওয়া-জাজিরায় শেখ রাসেল সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে রাজবাড়ী ও ত্রিশালে দুটি নতুন সেনানিবাসের কাজ চলছে। সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে তারা কঠোর পরিশ্রম করছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক বাহিনী এ পর্যন্ত স্টেট অব দ্য আর্ট এয়ারক্রাফট, হেলিকপ্টার, টাইগার এমএলআরএস, শোরাদ মিসাইল, চতুর্থ প্রজন্মের ট্যাংক, এপিসি, মিসাইল ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় করেছে। আর অত্যাধুনিক আইটি যন্ত্রপাতি এবং আধুনিক যানবাহন সংগ্রহ করা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী সিএমএইচ প্রসঙ্গে বলেন, এ প্রতিষ্ঠানটি আধুনিক চিকিৎসাসামগ্রী দিয়ে সাজানো হয়েছে। এছাড়া সব পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য মেস ও এসএম ব্যারাক নির্মাণের পাশাপাশি তাদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।তাদের বেতন-ভাতা ও রেশনের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাঙালিদের খাদ্যাভ্যাস বিবেচনা করে রুটির বদলে আমি তাদের জন্য দুই বেলা ভাত ও মাছ-মাংসের ব্যবস্থা করেছি।প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে পতাকা উত্তোলন করেন, বেলুন উড়িয়ে দেন এবং তিনি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন ও সালাম গ্রহণ করেন। তিনি সেখানে একটি গাছের চারা রোপণ করেন এবং পরিদর্শক বইয়েও স্বাক্ষর করেন।এ সময় সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। এছাড়া সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রী, সংসদ-সদস্য এবং সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Top