সরকারের অতি উৎসাহ নিয়ে সন্দেহ বিএনপির - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সরকারের অতি উৎসাহ নিয়ে সন্দেহ বিএনপির


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :দীর্ঘদিন ধরে গুলশানের বাসায় অনেকটা নিভৃতে সময় কাটাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। অসুস্থতার কারণে দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে অনেকটাই নিষ্ক্রিয়।কিন্তু হঠাৎ করেই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় খালেদা জিয়া। তার রাজনীতি করা না করা নিয়ে সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এর সূত্রপাত। তাদের এমন অতি উৎসাহকে সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি।তবে খালেদা জিয়াকে নিয়ে কোনো বিতর্কে জড়াতে চান না তারা। দলটির নেতারা মনে করেন, হঠাৎ করে চেয়ারপারসনের রাজনীতির বিষয়টি সামনে আনার পেছনে সরকারের কোনো কৌশল রয়েছে। এ নিয়ে তাদের মনোভাব জানার চেষ্টা করছে দলটি।জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, চেয়ারপারসনকে নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্য কোনো কৌশল হতে পারে। তারা কী বলল সেটা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই।

তিনি বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) তো রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দেননি। তিনি আমাদের দলের চেয়ারপারসন এবং গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। মিথ্যা মামলায় কারাগারে যাওয়ার কারণে তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চেয়ারপারসন রাজনীতি করতে পারবেন কি পারবেন না সেটা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই।মাসখানেক আগে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, ‘খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না মর্মে মুচলেকা দিয়ে শাস্তি স্থগিত করিয়েছেন।১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় নবনিযুক্ত সহকারী জজদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন ‘অসুস্থতার গ্রাউন্ডে দুটি শর্তে তাকে (খালেদা জিয়া) মুক্ত করা হয়েছে। তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না বা রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকতে হবে, এ রকম শর্ত সেটার (খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে করা আবেদন) মধ্যে ছিল না।’সরকারের মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্য নিয়ে সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সবশেষ বৈঠকে আলোচনা হয়। এতে অনির্ধারিত আলোচনায় স্থায়ী কমিটির কয়েক সদস্য জানান, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন জোরালো হচ্ছে। নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। সরকারও পালটা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছে। কিন্তু হঠাৎ করে ক্ষমতাসীনরা চেয়ারপারসনের রাজনীতির বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে। এটাকে একটা নতুন ইস্যু বানানোর চেষ্টা চলছে। তাই এ নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিতর্কে না জড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, প্রাথমিকভাবে এসব বক্তব্যের পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। এর মাধ্যমে সরকার রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছে। সরকার খালেদা জিয়াকে রাজনীতি করতে বাধা দিচ্ছে না-ক্ষমতাসীনরা এমনটা বলতে পারবেন। তা ছাড়া খালেদা জিয়ার প্রতি নেতাকর্মীদের যথেষ্ট আবেগ রয়েছে। সেটা কাজে লাগিয়ে বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে আনার চেষ্টা করতে পারে সরকার।খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার পর বিএনপিকে ফাঁদে ফেলা হতে পারে। দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে অনড় থাকলে খালেদা জিয়াকে ফের কারাগারে পাঠানো হতে পারে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিলে তখন সরকার দেখাতে পারে যে শর্তে সাজা স্থগিতের আবেদন করা হয়েছিল তা লঙ্ঘিত হয়েছে। তিনি এখন আর অসুস্থ নন। ফলে তার শাস্তি স্থগিত রাখারও যুক্তি নেই। আর যদি বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে ছাড় দেয় বা অনড় না থাকে, তখন শর্তের বিষয়টি শিথিলও করতে পারে। আবার এর পেছনে বিদেশিদের চাপ থাকতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, একজন রাজনীতিবিদ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাজনীতি করে থাকেন। খালেদা জিয়া তো আমাদের দলের চেয়ারপারসন। বর্তমানে দল চলছে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর চেয়ারপারসন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না সেটা ভবিষ্যৎই বলে দেবে। তার রাজনীতি করা না করা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যে কোনো প্যাঁচ থাকতে পারে। এসব কথার কোনো উত্তর দেওয়ার আদৌ প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।বিএনপির দুজন নীতিনির্ধারক বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন কখনো রাজনীতি থেকে অবসর বা সাময়িক নিষ্ক্রিয় থাকার কোনো ঘোষণা দেননি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে মাঠের রাজনীতিতে অংশ নিতে পারছেন না। এমনকি দলীয় কর্মকাণ্ড থেকেও বিরত আছেন। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সব খোঁজখবরই রাখছেন তিনি।সম্প্রতি দলের এক ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই নেতাবলেন, কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাসায় ফেরার পর আমি নিয়মিতই তার সঙ্গে দেখা করছি। আগে রাজনীতির বিষয়ে তেমন একটা কথা হতো না। কিন্তু এবার প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন।বিএনপির ভাইচ চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আমার মনে হয় সরকার চাপে পড়ে এসব কথা বলছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফরে এসে কিছু কথা বলে গেছে। এরপর বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে। আবার অনেকে মনে করছেন এর পেছনে সরকারের কোনো ফাঁদ রয়েছে।জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাকে ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল মুক্তি দেয় সরকার। তখন দেশে করোনাভাইরাস মহামারি চলছিল। খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন না এবং দেশে থেকে বাসায় চিকিৎসা নেবেন-এ দুই শর্তে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ছয় মাস পরপর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।

Top