নির্বাচন সামনে রেখে বিপরীত মেরুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি - Alokitobarta
আজ : বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
দেশের আবহাওয়ায় বিরাজ করছে মরুভূমির তাপ,বৃষ্টির বাতাস সরে গেছে চীনের দিকে আকাশে বুলেট-বারুদের ধোঁয়া,ঘুম থেকে উঠলেই সাইরেনের শব্দ তড়িঘড়ি ও জোরপূর্বক ব্যাংক একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতে অব্যাহত দায়মুক্তির নতুন মুখোশ গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর সঠিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে না,জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকের উন্নতি হয়নি দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান না দেখালে তা শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসাবেই গণ্য করা হবে শহর, বন্দর, গ্রাম-সব জায়গায় গ্রীষ্মের রুদ্ররোদ গ্যাসের মূল্য ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে,বেড়েছে বিদ্যুতের মূল্যও প্রতিটি ধাপেই ভোটের দিন পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে-এমন আশঙ্কা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীর ‘স্বজন’ নিয়ে জটিলতা আওয়ামী লীগে

নির্বাচন সামনে রেখে বিপরীত মেরুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিপরীত মেরুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে অনড় অবস্থানে দুদল।সংকট নিরসনে আপাতত সংলাপ বা সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এমন পরিস্থিতিতেও সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, আগামী নির্বাচন হবে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ। প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রত্যাশাও সেরকম। কিন্তু দুই দলের মুখোমুখি অবস্থানে কিভাবে সেটা সম্ভব এমন প্রশ্নই সব শ্রেণিপেশার মানুষের।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ছাড়া আগামী নির্বাচন কোনোভাবেই অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে না। সব দল এতে অংশও নেবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। এ সংকট নিরসনে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।তাদের মতে, ভোটের এখনো অনেক সময় বাকি। তাই কোনো দলই এই মুহূর্তে সমঝোতার ইঙ্গিত দেবে না। সমঝোতা হওয়ার মতো যথেষ্ট সময় রয়েছে।নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে অনড় অবস্থানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বর্তমান সংবিধানের আলোকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কখনো ফিরে আসবে না।অন্যদিকে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন নেতারা।

সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন করছে। তাদের এ দাবি পাত্তাই দিচ্ছে না সরকার। উলটো বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় পালটা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।এমন পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের তৎপরতাও বাড়ছে। প্রভাবশালী বেশ কয়েকটি দেশ নির্বাচন প্রক্রিয়ার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তারা নিয়মিত বৈঠকও করছেন। প্রায় সব দেশই আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার প্রত্যাশা করছে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সরকার কিছুটা চাপে রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।এদিকে সবশেষ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের উপদেষ্টা পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলে। পরে গণমাধ্যমের কয়েকজন সম্পাদকের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। এ সময় শোলে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আর তা না হলে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করতে থাকবে। বাংলাদেশে শক্তিশালী গণতন্ত্র না থাকলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সীমিত হতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি। তবে সরকার তাদের অবস্থানে অনড়।বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অন্তর্ভুক্ত সাতটি দেশের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি কূটনীতিকদের জানান, আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ীই হবে।রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সমঝোতা হওয়ার মতো এখনো অনেক সময় বাকি। কাজেই এত তাড়াতাড়ি বলা যাবে না যে সংকট কিভাবে সমাধান হবে। আরও সময় লাগবে। আমাদের দেখতে হবে কোন পথে কী এগোয়। এ সরকারকে সংকটের একটা সমাধান করতে হবে। না হলে নির্বাচন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃত হবে না। সেটা না হলে দেশের ভেতরে এবং বাইরে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হবে।

সমঝোতার প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, নির্বাচনের এখনো ১০ মাস বাকি। এত আগে কোনো রাজনৈতিক দল কী বলবে আমরা হাত নামিয়ে দিয়েছি বা হাত তুলে দিছি। তবে সরকারকেই সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ আপাতত দৃষ্টিতে মনে হয় তারা চাপে রয়েছে। বিরোধী দল চাপে নেই।জানতে চাইলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, রাজনৈতিক সংকটের সমাধান মোটেও স্পষ্ট নয়। প্রধান দুদল যদি তাদের বর্তমান অবস্থায় অনড় থাকে তাহলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ। প্রধান দুদলকেই ছাড় দিতে হবে। না হলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।তিনি বলেন, সমঝোতা কখনো একপক্ষের উদ্যোগে হয় না। একপক্ষ সমঝোতা চাচ্ছে কিন্তু অন্যপক্ষ চায় না-তাহলেও সমাধান হবে না। উভয়পক্ষকেই আস্তে আস্তে ছাড় দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একটু নমনীয় হতে হবে। এর ফলে সমঝোতার একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। তবে অতীতে আমাদের সমঝোতার ইতিহাস নেই বললেই চলে। বিদেশিরা কয়েকবার চেষ্টা করেও সফল হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে এই মুহূর্তে সমঝোতার বিষয়ে আমি আশাবাদী নই। তবে আশা করব পরিস্থিতি বদলাবে। সমঝোতা হওয়ার মতো যথেষ্ট সময় রয়েছে।শাহদীন মালিক বলেন, দেশের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো এবার সমঝোতায় আসবে বলে আমরা আশা করি। কারণ পৃথিবীর কোথাও গণতন্ত্র ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন স্থায়ী হয়নি। গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন কোনো দেশেই হয়নি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও এমনটা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্বাচন কি সুষ্ঠু হয়েছে?দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে প্রশাসনসহ সবকিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এরা যদি দলীয় এবং পক্ষপাতদুষ্ট হয় তাহলে কি করে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে তা বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সৃষ্টির মধ্য দিয়ে আমাদের দেশে একটা রাজনৈতিক সমঝোতা হয়েছিল। কিন্তু সেটা বাতিল করার পরই শুরু হয় রাজনৈতিক সংকট। সেই সংকট থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারছি না।আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হলে আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সমঝোতা। রাজনৈতিক দলগুলোকেই এ উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে আগে এগিয়ে আসতে হবে। তবে বর্তমানে দুই দলের অবস্থান থেকে মনে হচ্ছে সহজেই সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে নির্বাচনের আরও অনেকটা সময় আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা থাকলে তা সমাধান সম্ভব।আশা করি তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।

Top
%d bloggers like this: