তদন্ত কর্মকর্তাদের ওপর আমলাদের নিয়ন্ত্রণ কাম্য নয়
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফল হতে হলে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) যথার্থই স্বাধীন ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনে দুদক আইনে আনতে হবে সংশোধনী।প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের বদলি, পদোন্নতি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা থাকা দরকার কমিশনের নিজের হাতে। অথচ সম্প্রতি এক অফিস আদেশের মাধ্যমে এর উলটোটিই করা হয়েছে। ১৮ ডিসেম্বর (স্মারক নং ৪৬৫৩৩) জারি করা এ অফিস আদেশবলে একক সিদ্ধান্তে দুদকের তদন্ত ও অনুসন্ধান কর্মকর্তাদের বদলি করা যাবে, যা আগে ছিল কমিশনের হাতে।এ আদেশের মাধ্যমে কমিশনের উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের বদলির ক্ষমতা সচিবের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দুদকের তদন্ত ও অনুসন্ধান কর্মকর্তাদের ওপর আমলাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বস্তুত এর মাধ্যমে দুদকের ক্ষমতা খর্ব হয়েছে বলে মনে করি আমরা। প্রশ্ন হলো, হঠাৎ কেন এ সিদ্ধান্ত?এ আদেশ উদ্দেশ্যমূলক কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ, প্রশাসন ও আমলাতন্ত্রের মধ্যে দুর্নীতির প্রবণতা বেশি। সেক্ষেত্রে তাদের রক্ষা করতেই এ আদেশ জারি করা হয়েছে কি না, এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ইতঃপূর্বে এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারার জন্য দায়ী উচ্চমহলের তদবির এবং আমলা ও প্রভাবশালীদের অযাচিত হস্তক্ষেপ। এ প্রেক্ষাপটে উল্লিখিত অফিস আদেশ জারির বিষয়টি উদ্বেগজনক।আমরা জানি, দুদকের এক সাবেক চেয়ারম্যান নিজেই এ কমিশনকে ‘দন্তহীন বাঘ’ বলেছিলেন। বস্তুত অতীতে দুদকের কর্মকাণ্ড দেখে এ কমিশনকে কাগুজে বাঘই মনে হয়েছে। আমরা দেখেছি-হলমার্ক, ডেসটিনির মতো প্রতারণার ঘটনায় দুদকের কঠোর হুঁশিয়ারির পরপরই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে অপরাধীরা আত্মগোপনে চলে গেছেন।আমরা দুদককে নখদন্তযুক্ত হিংস্র কিংবা নখদন্তহীন কাগুজে বাঘ-এ দুইয়ের কোনোটির রূপেই দেখতে চাই না। আমরা চাই, দুদক একটি মর্যাদাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসাবে, দুর্নীতি দমনে সুষ্ঠু ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করুক।
দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারকেও সত্যিকারের সদিচ্ছার প্রমাণ রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে দুদককে শক্তিশালী করার ব্যাপারে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। দুদক যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।দুর্নীতি দেশের অন্যতম বড় সমস্যা। এমন সরকারি প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করা কঠিন, যেখানে দুর্নীতির চর্চা হয় না। প্রায় প্রতিদিনই দুর্নীতির কোনো না কোনো খবর প্রকাশিত হয় সংবাদমাধ্যমে। দুর্নীতির এসব খবরের কিছু আবার বড় আকারের অভিযোগ।ব্যাংক সেক্টরের হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির খবর জেনেছে দেশবাসী। প্রকল্পের কেনাকাটাসহ বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি সর্বজনবিদিত। নিয়োগ-বাণিজ্যও এখন ওপেন-সিক্রেট বলা যায়। কাজেই দুর্নীতি রোধে দুদককে পর্যাপ্ত ক্ষমতাসম্পন্ন করার বিকল্প নেই।দুদককে যথার্থই একটি স্বাধীন এবং দুর্নীতি দমনে কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা জরুরি। এ কথা মাথায় রেখে উল্লিখিত অফিস আদেশটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে, এটাই কাম্য।