১০ ডিসেম্বরই সমাবেশ করতে চায় বিএনপি
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : আর মাত্র একদিন পর শনিবার বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ। কিন্তু গণসমাবেশের স্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি।এরই মধ্যে বুধবার নয়াপল্টনে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষে একজন নিহত হন। সমাবেশ সফলে দায়িত্বপ্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের করা হয় আটক।এমন পরিস্থিতিতে গণসমাবেশ করবে কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার রাতে জরুরি বৈঠকে বসেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সূত্র জানায়, বৈঠকে শনিবার ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ নিয়ে আলোচনা হয়।শত বাধা এলেও ঢাকায় গণসমাবেশ হবে বলে নেতারা একমত পোষণ করেন। এ সময় নেতারা বলেন, এ গণসমাবেশ বিএনপির এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচি যে কোনো মূল্যে সফল করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়। ওই সূত্রটি আরও জানায়, নয়াপল্টনে হামলা, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও গণসমাবেশসহ সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ২০ দলীয় জোটের শরিক ও সমমনা দলগুলোর মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এ ব্যাপারে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সবার সঙ্গে পরামর্শের পর আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। সমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপি ও পুলিশ মুখোমুখি অবস্থানে। বিকল্প ভেন্যু না দিলে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণসমাবেশ করার বিষয়ে এখনো অনড় বিএনপি।অপরদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বা এর মতো কোনো খোলা মাঠে সমাবেশ করতে হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সেক্ষেত্রে ইজতেমা মাঠ ও পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলার মাঠের প্রস্তাবও দিয়েছে পুলিশ।এদিকে স্থান নিয়ে বিএনপির প্রতিনিধি হিসাবে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকেও আটক করা হয়েছে।সমাবেশে যোগ দিতে বিভাগীয় জেলার নেতাকর্মীরা নানা বাধার মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির দাবি, রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে, এমনকি কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বের হওয়ার পর পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।যেখানে তারা তল্লাশি চালাচ্ছে। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গণসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার যদি পছন্দ অনুযায়ী বিকল্প ভেন্যু না দেয় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ হবে।তিনি বলেন, বিএনপি সড়কে সমাবেশ করলে জনদুর্ভোগ হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক ২০ বছর ধরে বন্ধ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কও বন্ধ। এতে কী জনদুর্ভোগ হয় না?
মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর আতঙ্কে রয়েছে। আমাদের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে।গ্রেফতার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। আমরা নয়াপল্টনে সমাবেশের কথা বলেছি। এখন বিকল্প প্রস্তাব দিতে হলে সরকারকে দিতে হবে।সরকারকে গ্রহণযোগ্য বিকল্প প্রস্তাব দিতে হবে। নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি পুলিশ না দিলে কি হবে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পুলিশ পুলিশের কাজ করবে, আমরা আমাদের কাজ করব।নয়াপল্টনেই সমাবেশ করব। তবে আমরা চাই, পুলিশ যেন দলীয় ভূমিকা পালন না করে।মির্জা আব্বাস আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সমাবেশের সময় গুলিস্তান অফিসের সামনের সড়ক বন্ধ থাকে। কয়েকদিন আগেও বাড্ডা ও উত্তরার হাউজ বিল্ডিংয়ে সড়কে সমাবেশ করেছে।আওয়ামী লীগ সমাবেশ করলে রাজধানীর পুলিশ তখন জনগণের চলাচলের জন্য রাস্তার ম্যাপ দিয়ে দেয়। আমাদের সমাবেশেও পুলিশ সেরকম ম্যাপ দিয়ে দেবে।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমাদের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। গণসমাবেশ ঘিরে একটি রিকশার টায়ার বার্স্ট হলেও দায় সরকারের।
অন্যদিকে বুধবার সন্ধ্যায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে বিএনপির গণসমাবেশের নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপিকে গণসমাবেশের অনুমতি দেওয়া যাবে না।এই নির্দেশ অমান্য করলে বিএনপির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, পল্টনের সামনে ১০ লাখ লোকের জায়গা হবে না। সর্বোচ্চ এক লাখ লোক দাঁড়াতে পারবে।বাকি ৯ লাখ লোক ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ছড়িয়ে পড়বে। যাতে কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না বিএনপির। এতে করে জনদুর্ভোগ ও জননিরাপত্তা বিবেচনায় তাদের পল্টনে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না।বিএনপিকে উদ্দেশে করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আপনারা যে কোনো খোলা মাঠে যেতে পারেন বা অন্য কোনো প্রস্তাব দিতে পারেন।অন্য প্রস্তাব হিসাবে তাদের বলা হয়েছে ইজতেমা মাঠ আছে, সেখানে ১০ লাখ লোক জমায়েত করতে পারবেন। পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলার মাঠ আছে, সেখানে যেতে পারেন।
দুই কারণে বিএনপিকে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানান ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, প্রথম কারণ পল্টনে এত লোকের জায়গা হবে না।তারপরও যদি তারা সেখানে সমাবেশ করে তবে বাকি ৯ লাখ লোক ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাবে। যার ওপর বিএনপির কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না এবং পুলিশেরও কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।একই সঙ্গে এই ১০ লাখ লোক ঢাকার সব রাস্তা দখল করলে ঢাকাবাসীর জন্য একটা চরম দুর্ভোগের বিষয় হবে। তিনি আরও বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনা করে তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়া হয়।পরে মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে আগ্রহী নয়। তারা পল্টন বা তার আশপাশে কোনো রাস্তায় করতে আগ্রহী।এ প্রসঙ্গে আমাদের ডিএমপির সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বা এর মতো কোনো খোলা মাঠে সমাবেশ করতে হবে। আমরা জনদুর্ভোগ এবং জননিরাপত্তার বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।দপ্তর সম্পাদকের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে প্রিন্স : বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সকে দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বুধবার রাতে এই অফিসসংক্রান্ত আদেশ প্রদান করে চিঠি দিয়েছেন।সেখানে বলা হয়, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যিনি দপ্তরের দায়িত্বে ছিলেন, তাকে পুলিশ গ্রেফতার করায় তার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন এমরান সালেহ প্রিন্স।