দেশে মাধ্যমিক স্তরে অন্তত সোয়া ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে - Alokitobarta
আজ : বৃহস্পতিবার, ২০শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশে মাধ্যমিক স্তরে অন্তত সোয়া ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :করোনা মহামারির মধ্যে দেশে মাধ্যমিক স্তরে অন্তত সোয়া ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৫ শতাংশই ছাত্রী। বাকিরা ছাত্র। ছাত্রীদের অন্তত ১০ শতাংশের বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে। আর পরিবারের সঙ্গে আয়-রোজগারে ভিড়ে গেছে ১৬ শতাংশের বেশি।মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সাম্প্রতিক এক স্কুল পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির পরিবীক্ষণ ও মূল্যয়ন উইং এ প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। তাতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ফিরিয়ে আনতে উপবৃত্তি কার্যক্রম জোরদারসহ চার দফা সুপারিশ করা হয়েছে।ওই উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক আমির হোসেন খান এ প্রসঙ্গে রোববার বলেন, ‘ভর্তি আর বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পার্থক্যের ভিত্তিতে উল্লিখিত সংখ্যা বের করা হয়েছে। আবার তথ্যদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও অর্ধেকের মতো। সেই হিসাবে বলা যায়, লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়া বা ঝরে পড়ার এই হার প্রকৃত নয়। সব প্রতিষ্ঠানের চিত্র পাওয়া গেলে এটি বাড়তে বা কমতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ফিরিয়ে আনার সুপারিশও আমরা করেছি।’

দেশে বর্তমানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২০ হাজার ২৯৪টি। এর মধ্যে মাউশি ১১ হাজার ৬৭৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে স্বনির্ধারিত পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করে। প্রদত্ত তথ্য পরবর্তী সময়ে যাচাই করা হয়নি। এসব প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ৬৬ লাখ ৪৯ হাজার ৫৩৮ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা দেয় ৬১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৮৩ জন। এই হিসাবে ৪ লাখ ৮১ হাজার ৫৫ জন লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে, যার হার ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। এদের মধ্যে ছাত্রী ২ লাখ ৬৫ হাজার ৬১৩ জন, যা ৫৫ দশমিক ২১ শতাংশ। বাকি ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৪২ জন ছাত্র। অন্যদিকে বার্ষিক পরীক্ষায় যে ৬১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৮৩ জন অংশ নেয়, তাদের মধ্যে ছাত্র ২৮ লাখ ৫ হাজার ৭৯১ জন, ছাত্রী ৩৩ লাখ ৬২ হাজার ৬৯২ জন।বিভাগওয়ারি হিসাবে দেখা যায়, সংখ্যার হিসাবে সবচেয়ে বেশি ঝরে পড়েছে ঢাকা বিভাগে, ৭৪ হাজার ৪৮৬ জন। এর পরেই রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ, ৭৪ হাজার ২৬৩ জন। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৬৫ হাজার ২১৩, চট্টগ্রামে ৫৮ হাজার ৯১৩, রংপুরে ৫৫ হাজার ৫৭, কুমিল্লায় ৫২ হাজার ৪০, খুলনায় ৫১ হাজার ১৫ এবং বরিশালে ২১ হাজার ৪৯৯ জন ঝরে পড়েছে। তবে শিক্ষার্থী আর পরীক্ষায় অনুপস্থিতির বিবেচনায় শতাংশের দৃষ্টিকোণ থেকে বেশি ঝরে পড়েছে ময়মনসিংহে, যা ৮.৯৩ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম বরিশালে ৬.৬২ শতাংশ।মাউশি একই সঙ্গে লেখাপড়ার বাইরে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীদের গন্তব্যও বের করার চেষ্টা করেছে। মোটা দাগে তিনটি খাতে তথ্য নেয়। এগুলো হচ্ছে-বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম ও অন্যান্য। দেখা যায়, মোট অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর মধ্যে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে ৯.৮৬ শতাংশ। আর শিশুশ্রমে ভিড়ে গেছে ১৬.১৫ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবে বিয়ে আর শিশুশ্রম হচ্ছে যথাক্রমে ৪৭ হাজার ৪১৪ ও ৭৭ হাজার ৭০৬ জন। ৩৫৫৯৩৫ জন অন্যান্য কারণে লেখাপড়া ছেড়েছে। অন্যদিকে বিভাগভিত্তিক হিসাবে বাল্যবিবাহের কারণে অনুপস্থিতির হার সবচেয়ে বেশি রাজশাহী অঞ্চলে, ১৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম সিলেট অঞ্চলে, ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে শিশুশ্রমে যুক্ত শিক্ষার্থীও রাজশাহী অঞ্চলে বেশি, যা ১৮.৮০ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন চট্টগ্রামে ১২.৬৮ শতাংশ।মাউশি ২০২০ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বের করে আনে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, উল্লিখিত ১১ হাজার ৬৭৯ বিদ্যালয়ে ওই বছর শিক্ষার্থী ছিল ৬৫ লাখ ৫৬ হাজার ৫৩৬ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র সংখ্যা ২৯ লাখ ৬২ হাজার ৪৫ জন আর ছাত্রী ৩৫ লাখ ৯৪ হাজার ৪৯১ জন। যেহেতু ২০২১ সালে ৬৬ লাখ ৪৯ হাজার ৫৩৮ পাওয়া যায়, সেই হিসাবে বলা যায়, অতিমারির মধ্যেও শিক্ষার্থী ভর্তি বেড়েছিল ৯৩ হাজার ২ জন।

মাউশি পরিচালক অধ্যাপক মো. আমির হোসেন খান বলেন, ‘ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীর তথ্য তুলে এনেছি আমরা। এখন এদেরকে আমরা ঝরে পড়েছে বলব কি না, তা আরও যাচাই ও অনুসন্ধানের প্রয়োজন আছে। কেননা উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনেকে আবার ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে। কেউ আবার কারিগরি শিক্ষায়ও চলে যেতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, বাল্যবিবাহ আর শিশুশ্রমে ভিড়ে যাওয়ার যে তথ্য এসেছে সেটি শিক্ষকরা নিশ্চিত করেছেন তাদের জানা তথ্য থেকে। বাকি ৭৪ শতাংশের মধ্যেও যে এই দুই গ্রুপের (বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম) শিক্ষার্থী নেই, তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কেননা তাদের তথ্য শিক্ষকরা জানেন না।

সুপারিশ : প্রতিবেদনে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, যেসব ছাত্রী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে, তাদের উপবৃত্তির মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা দিয়ে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। উপবৃত্তির অর্থ ও পরিমাণ বাড়িয়ে শিশুশ্রমে যুক্ত হওয়া ছাত্রদেরও এই প্যাকেজের আওতায় আনা যেতে পারে। ক্লাসে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে নতুন করে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। সরকারের সঙ্গে নিজ নিজ এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সচ্ছল ব্যক্তিরা এগিয়ে আসতে পারেন।

Top