ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতার ঘোষণা
আলোকিত বার্তা:জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সংগ্রাম বা যুদ্ধটা যে স্বাধীনতার যুদ্ধ হবে, সেই কথাটা কিন্তু বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণেই স্পষ্ট বলে গেছেন। কাজেই সাতই মার্চের ভাষণই প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতার ঘোষণা। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) একটা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার সব নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। কারণ একটা গেরিলা যুদ্ধ হবে এবং সেই গেরিলা যুদ্ধ হতে হলে কী কী করতে হবে, সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলা থেকে শুরু করে, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে বলেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু।
রোববার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ২০২১’ উদযাপন উপলক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি বলেন, বাঙালি জাতি আজকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ইনশাআল্লাহ, জাতির পিতার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা আমরা পূরণ করব। বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। সেই মুক্তির পথে আমরা অনেক দূরে এগিয়ে গেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটা নিষিদ্ধ ছিল- এ ভাষণ বাজানো যাবে না। অলিখিত একটা নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। কিন্তু ইতিহাসকে এত সহজে মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে কখনো দাবিয়ে রাখা যায় না। আর বাঙালিকে দাবায়ে রাখা যায় না, এটা তো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই বলে গেছেন তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে। তাই দাবায়ে রাখতে পারে নাই। আজকে সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ বিশ্ব স্বীকৃতি যেমন পেয়েছে, তেমনি জাতিসংঘের প্রতিটি ভাষায় এই ভাষণটা অনুবাদ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের প্রতিটি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের এই ভাষণের অনুবাদ প্রচার করা হচ্ছে। ইউনেস্কো সেই পদক্ষেপটা নিয়েছে। প্যারিসের যিনি আমাদের রাষ্ট্রদূত তিনি আমাদের এটা জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি জাতির জন্য বঙ্গবন্ধু শুধু রণকৌশলেই দিয়ে যাননি, তিনি নিজের জীবনটাকেও উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। তিনি বলতেন, যা কিছু হোক দেশ স্বাধীন হবেই। শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা হিসাবে নয়, যুদ্ধের রণকৌশলে তার এই ঐতিহাসিক বক্তৃতা কত যে কার্যকর এবং তার প্রতিটি পদক্ষেপ যে কত বাস্তবমুখী সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট বাঙালির জীবনে একটা কালো অধ্যায় হিসাবে এসেছে। কারণ যারা পরাজিত হয়েছিল তারা বসে ছিল না। তারা সর্বক্ষণ ষড়যন্ত্রেই ব্যস্ত ছিল। তাই একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে জাতির পিতা দেশকে যখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই সময় ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটল। যেখানে পাকিস্তানি শাসকরা বঙ্গবন্ধুকে বারবার হত্যার চেষ্টা করেছে। ফাঁসির আদেশ দেওয়া সত্ত্বেও ফাঁসি দিতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বাঙালির জন্য জাতির পিতা নিজের জীবনটাকেও উৎসর্গ করেছেন, যে বাঙালির জন্য সারাজীবনের সব স্বাদ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছিলেন। দিনের পর দিন কারাগারের অন্তরালে নির্যাতন ভোগ করেছেন। যে বাঙালিকে আত্মপরিচয়ের সুযোগ দিয়ে গেছেন। একটা রাষ্ট্র দিয়ে গেছেন। একটা জাতি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন- কী দুর্ভাগ্য যে তাদের (বাঙালি) হাতেই বঙ্গবন্ধুকে জীবন দিতে হলো। শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই নন, গোটা পরিবারকে হত্যা করা হলো। আমরা দুই বোন বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে ছিলাম।
দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞতা জানাই এই কারণে যে, ১৯৮০ সাল থেকেই যে সংগ্রাম, তারই সাফল্য আমরা পেয়েছি। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে আমরা দেখে যেতে পারলাম যে, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আজ বিশ্ব স্বীকৃতি পেয়েছে এবং বাংলাদেশের মানুষও আজকে এটা শুনতে পাচ্ছে, জানতে পারছে, চর্চা করতে পারছে আর আগ্রহ বাড়ছে। এর অন্তর্নিহিত অর্থ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। এখানেই তো সব থেকে বড় সাফল্য।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটাও জানতেন, যেই মুহূর্তে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাটা বাস্তবে অফিসিয়ালভাবে দেবেন-সেই মুহূর্তে হয়তো তিনি বেঁচে নাও থাকতে পারেন। সেজন্য এই ঐতিহাসিক ভাষণের ভেতরেই কিন্তু তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাটা দিয়ে গেলেন। তিনি বলে গেলেন যে, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই ঘোষণার পর থেকে পূর্ববঙ্গ কীভাবে চলবে জাতির পিতা সেই নির্দেশনাও দিয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন. ৭ মার্চ কোনো লিখিত ভাষণ ছিল না। জাতির পিতা তার জীবনের সব সংগ্রামের যেই অভিজ্ঞতা এবং তার বাঙালি জাতিকে নিয়ে যেই লক্ষ্য, সেই লক্ষ্য স্থির করেই কিন্তু তিনি এই ভাষণটা দিয়েছিলেন। আর এই পরামর্শটা আমার মাই (বঙ্গমাতা) দিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার সংগ্রাম বা যুদ্ধটা যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হবে, সেই কথাটা কিন্তু বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে স্পষ্ট বলে গেছেন। কাজেই ৭ মার্চই তো প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা। এরপর ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের বাড়ি থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে নির্দেশনা দিতেন, সেই নির্দেশনায়ই দেশ চলত। সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তখন ওই বত্রিশ নম্বরে। আর এই ভাষণটা বঙ্গবন্ধু যখন দিতে যান, আমি এ কথা বহুবার বলেছি, আবারও বলছি। এ ভাষণ কিন্তু কোনো লিখিত ভাষণ নয়। জাতির পিতা তার জীবনে সব সংগ্রামের যে অভিজ্ঞতা এবং তার যে বাঙালি জাতিকে নিয়ে লক্ষ্য, সেই লক্ষ্য স্থির করেই কিন্তু তিনি এই ভাষণটি দিয়েছিলেন। আর এই পরামর্শটাই আমার মা দিয়েছিলেন। এই ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু যা যা নির্দেশনা দিয়েছেন, ঠিক সেই নির্দেশনাই এ দেশের মানুষ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে, এনেছে মহার্ঘ স্বাধীনতা।
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটি প্রদর্শন করা হয়। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবি কামাল আবু নাসের চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বদরুল আরেফীন।