স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ - Alokitobarta
আজ : রবিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ


আলোকিত বার্তা:শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে বাংলাদেশ। গত ১২ বছরের সরকার পরিচালনায় নিরন্তর পরিশ্রম এবং পরিকল্পনার ফসল হচ্ছে আজকের অর্জন। এ উত্তরণকে ঐতিহাসিক গর্বের বিষয় বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এর কৃতিত্ব এ দেশের আপামর জনসাধারণের। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এ মাইলফলক অর্জন করেছি। এ অর্জন দেশের নতুন প্রজন্মকে উৎসর্গ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এ উত্তরণ এমন এক সময়ে ঘটল, যখন আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। আমরা মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বিকালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে জাতিসংঘের সুপারিশ লাভ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি এ সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন। জাতির পিতার ছোট মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গণভবনে উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন।২২-২৬ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে এলডিসি স্ট্যাটাস পর্যালোচনা করে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণের সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সূচক পর্যালোচনা করা হয়। বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণে সব ধরনের সূচকের অগ্রগতি হয়েছে। এদিন প্রধানমন্ত্রীর হাতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র তুলে দেন অর্থমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা- এ তিনটি সূচকের ভিত্তিতে জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের তিনটি মানদণ্ডই খুব ভালোভাবে পূরণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর অনুষ্ঠিত ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ পুনরায় সব মানদণ্ড অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে পূরণের মাধ্যমে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করল।তিনি বলেন, জাতিসংঘের পর্যালোচনায় ২০১৯ সালে মাথাপিছু আয়ের মানদণ্ড নির্ধারিত ছিল ১ হাজার ২২২ মার্কিন ডলার।ওই বছর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৮২৭ ডলার। আর বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার।অর্থাৎ মানদণ্ডের প্রায় ১ দশমিক ৭ গুণ।মানবসম্পদ সূচকে নির্ধারিত মানদণ্ড ৬৬-এর বিপরীতে বাংলাদেশের অর্জন ৭৫ দশমিক ৪। অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচকে উত্তরণের জন্য মানদণ্ড নির্ধারিত ছিল ৩২ বা তার কম। কিন্তু ওই সময়ে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২৭।সামনে এগিয়ে যাওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে কি কি করণীয় সে ব্যাপারেও আমাদের চিন্তা-ভাবনা আছে। আমরা পদক্ষেপও নিচ্ছি। আমরা কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াব। আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলব। আমাদের উন্নয়নের কাজ নিজেদের বাজেট থেকে করব, সে ব্যাপারে যথেষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। কাজেই বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবেই, কেউ ঠেকাতে পারবে না। আমি ক্ষেত্রটা তৈরি করে দিয়ে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমি আরও তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। আমাদের যেটা আছে, সেটা প্রথম ডোজ দেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ শুরু করব, সঙ্গে সঙ্গেই যেন আবার টিকা আমাদের হাতে এসে যায়, একটা মানুষও যাতে এ টিকা থেকে বাদ না যায়, তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। যেসব কোম্পানি টিকা তৈরি করেছে, তাদের অনুমতি নিয়ে দেশেই টিকা উৎপাদনের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোনো দেশ যদি উৎপাদন করতে না পারে, প্রয়োজনে আমাদের দেশ উৎপাদন করতে পারবে। আমি আমাদের বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিকে ইতোমধ্যে বলেছি যে, কারা কারা এটা করতে পারবে? তার জন্য প্রস্তুত থাকা এবং এখানে সিড আনা যায় কিনা সেটাও আমরা দেখছি।বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৯৪০ জনকে প্রথম ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টিকা দেওয়া হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করা, হাত ধোয়া এবং পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।টিকা গ্রহীতার তালিকায় যেমন সাধারণ মানুষ রয়েছেন, তেমনি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শেখ রেহানা টিকা নিয়েছেন।শেখ হাসিনা বলেন, আমি অবশ্যই টিকা নেব। তবে দেশের মানুষকে আগে দিতে হবে। আমার ৭৫ বছর বয়স। আজ আছি, কাল নেই। একটা টার্গেট করা আছে। সে পরিমাণ যখন দেওয়া হবে, তখন যদি টিকা থাকে, তাহলে তখন টিকা নেব।বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সফলতার পেছনে কোনো ম্যাজিক লুকিয়ে আছে কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কোনো ম্যাজিকের কিছু নয়। যখন যেভাবে বলেছি, সবাই মেনে চলেছে। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করায় এটা হয়েছে। এটা বাংলাদেশের মানুষের সম্মিলিত ম্যাজিক।প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, করোনা বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছিল। জনগণের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ যে, আমরা যখন যেভাবে বলেছি, সবাই তা মেনে চলেছে। আমরা বিশেষ করে অর্থনীতির ক্ষেত্রে সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়েছি। মানুষের যেন কষ্ট না হয় সেটা দেখেছি। আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছি। সব শ্রেণির মানুষ সহায়তা পেয়েছে। যখন গবেষণা চলছে, তখনই আমরা আগাম অর্থ দিয়ে করোনার টিকা কেনার ব্যবস্থা নিয়েছি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ যখন গড়ে তুলেছি, তখন ডিজিটাল নিরাপত্তা দেয়াও আমাদের দায়িত্ব। কেউ যেন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে না জড়াতে পারে, সেজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা অপরিহার্য।তিনি আরও বলেন, ‘সমালোচনা যারা করছে, তারা সবকিছু কি অনুধাবন করছে? আজকের এ দিনে আমি অন্য কিছু বলতে চাই না। শুধু এটুকুই বলব, কারও মৃত্যুই কাম্য নয়। তবে সেটাকে উদ্দেশ্য করে অশান্তিও কাম্য নয়। অসুস্থ হয়ে মারা গেলে কী করার আছে?’আলজাজিরা নামের একটি চ্যানেলের নিউজে দেশ সম্পর্কে অপপ্রচারের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কোনো প্রতিক্রিয়াও নেই। কিছু বলারও নেই। একটা চ্যানেল কি বলছে না বলছে। দেশের মানুষ বিচার করবে, কতটুকু বানোয়াট, কী উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, সেটা দেশের মানুষ জানে। আমার চিন্তার কিছু নেই। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কোনো চ্যানেল কি বলল, সেটা শুনে চলা আমার রাজনীতি নয়, দেশের মানুষের জন্য কাজ করাই আমার রাজনীতি। যারা বলবে বলতে থাকবে, এটা তাদের কাজ। জনগণের জন্য কাজ করা আমাদের কাজ।প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা এসব বলে তারা ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার গোটা পরিবারকে হত্যা করেছে। ছোট শিশুকে হত্যা করেছে। আমি সন্তান হিসাবে যখন সরকারে এলাম, তখন বাবা-মায়ের হত্যার বিচার করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি, মানবতাবিরোধীদের বিচার করেছি। অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার করেছি।মুজিববর্ষে সবার জন্য ঘর দেওয়ার কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে দেশের সব গৃহহীনকে ঘর দেওয়ার কর্মসূচির আওতায় ৮ লাখ ৯২ হাজার দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭০ হাজার ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। আরও ৫০ হাজার গৃহ নির্মাণের কার্যক্রম চলমান। ১৯৯৬ থেকে এ পর্যন্ত ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৬ পরিবারকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।নারীর ক্ষমতায়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের নারীরা আজ স্বাবলম্বী। জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে সপ্তম।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, পরবর্তী নির্বাচন তো ২০২৪ সালে। তখন সিদ্ধান্ত নেব কী করব। তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বাংলাদেশ গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করবে। এ অর্জনকে ধরে রাখাটাই চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জগুলো কিভাবে মোকাবিলা করতে পারি, আমরা সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আমরা মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছি। ওই সময় আমার ১৯৭১ সালের কথা মনে হয়েছে, যখন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বহু বাংলাদেশিকে আশ্রয় নিতে হয়েছিল ভারতে। ওই সময় আমার ছোট বোন রেহানাও বলেছিল, ‘তুমি ১৬ কোটি মানুষের খাওয়ার ব্যবস্থা কর, ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে খাওয়াতে পারবে না?’ তাই আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। তাদের প্রত্যাবাসনে কাজ চলছে।প্রধানমন্ত্রীকে আ.লীগ-যুবলীগের ধন্যবাদ : বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। শনিবার সন্ধ্যায় সংগঠনের পক্ষে সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি এক বিবৃতিতে এ ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান। তারা বলেন, বাংলাদেশের জন্য এ উত্তরণ এক ঐতিহাসিক ঘটনা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের এক অনবদ্য অর্জন।

যুবলীগের আনন্দ মিছিল : বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আনন্দ মিছিল করেছে আওয়ামী যুবলীগ। যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের নির্দেশে শনিবার সন্ধ্যায় মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে যুবলীগের দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। এ সময় আওয়ামী যুবলীগের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

Top