প্রশাসনে এক ধরনের বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন সিনিয়র কর্মকর্তারা - Alokitobarta
আজ : রবিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রশাসনে এক ধরনের বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন সিনিয়র কর্মকর্তারা


আলোকিত বার্তা:জুনিয়রের অধীনে চাকরি করতে গিয়ে প্রশাসনে এক ধরনের বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন সিনিয়র কর্মকর্তারা। বিশেষ করে জুনিয়র ব্যাচের সচিবের অধীনে কাজ করা তাদের জন্য খুবই পীড়াদায়ক।যদিও একই অবস্থা বিপরীত মেরুতেও। অর্থাৎ কোনো সচিবও চান না, তার অধীনে কোনো সিনিয়র ব্যাচের কর্মকর্তা চাকরি করেন। তবে বেশ কিছুদিন থেকে প্রশাসনে এমন বৈরী অবস্থার ফলে কিছুটা হলেও কাজের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যুগান্তরকে এমনটি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।বর্তমানে প্রশাসনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব পদে কর্মরত আছেন ৭৯ কর্মকর্তা। এর মধ্যে দফতর/সংস্থার কয়েকটি শীর্ষ পদও রয়েছে। যাদের বেশিরভাগ ’৮৬, ৯ম ও ১০ম ব্যাচের কর্মকর্তা। ’৮৪ ও ’৮৫ ব্যাচের সচিব আছেন মাত্র কয়েকজন।তাছাড়া বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী নতুন করে সচিবের যেসব পদ শূন্য হচ্ছে সেখানে ’৮৪, ’৮৫ ও ’৮৬ ব্যাচের কাউকে আর সচিব করা হচ্ছে না। বর্তমানে অতিরিক্ত পদে কর্মরত আছেন ৪৭৪ জন। এর মধ্যে সিনিয়র ব্যাচ হিসেবে ’৮৪ ব্যাচের ৯জন, ’৮৫ ব্যাচের ৫২ জন এবং ’৮৬ ব্যাচের রয়েছেন ১০৩ জন। এ তিনটি ব্যাচ মিলে অতিরিক্ত সচিবের সংখ্যা ১৬৪ জন।

এরফলে প্রশাসনে ৯ম ও ১০ম ব্যাচ থেকে সচিব নিয়োগের সংখ্যা বাড়ছে। সূত্রমতে সচিবের ফিটলিস্ট অনুযায়ী এখন ৯ম ব্যাচ থেকে সচিব নিয়োগের লাগামেও শিগগির টান পড়বে।এখন যদি নবম ব্যাচ থেকে ২-১ জন নিয়োগ দেয়ার পর তাদের দরজাও বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে সেখানেও অতিরিক্ত সচিব থেকে যাবেন ৩৪ জন। সেক্ষেত্রে সংখ্যাটি বেড়ে ২শ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। যদিও এ তালিকার অনেকেই অবসরে যাবেন চলতি বছরের মধ্যে।এদিকে বছরের শেষদিকে সচিব পদে ১১তম ব্যাচ থেকে নিয়োগের সম্ভাবনা প্রবল। এ ব্যাচের নিয়োগ শুরু হলে তখন ১০ম ব্যাচ থেকে নিয়োগের সংখ্যা কমে আসবে। এটিই প্রশাসনিক নিয়মের স্বাভাবিক স্রোতধারা।এক সময় সিনিয়ররা বিদায় নেবেন, যেখানে স্থলাভিষিক্ত হবেন নিকটতম জুনিয়ররা। কিন্তু সম্প্রতি পর্দার আড়ালে বড় ধরনের একটি সংকটও তৈরি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, কারণ যাইহোক ’৮৪, ’৮৫ ও ’৮৬ ব্যাচ থেকে সচিব নিয়োগ বন্ধ থাকায় এ তিনটি ব্যাচে এখনো দেড় শতাধিক অতিরিক্ত সচিব রয়ে গেছে। মূলত এ ব্যাচগুলো অনেক বড় পরিসরে নিয়োগ দেয়ায় বেশিরভাগ কর্মকর্তাকে সচিব হিসাবে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি।যদিও ব্যাচগুলোর অনেকে মনে করেন, তাদের চেয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন কেউ কেউ সচিব হতে পারলেও তাদের অতিরিক্ত সচিব থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে। অবশ্য কারও কারও ভাগ্যে গ্রেড-১ এর সান্ত্বনা পুরস্কারও মিলেছে।

প্রশাসনের জটিল এ সমীকরণে অনেকে হয়তো এতেই খুশি থাকতে চান। কিন্তু এসব ব্যাচের এখনো যারা অতিরিক্ত সচিব ছাড়া কিছুই হতে পারেননি, অথচ চাকরি করতে হচ্ছে জুনিয়র ব্যাচের সচিবের অধীনে; তারা রয়েছেন বড় বিড়ম্বনায়।কেউ কেউ কাজ করছেন ব্যাচমেট সচিবের অধীনে। সেখানে কমবেশি মনোবেদনা থাকলেও হয়তো বিচক্ষণ ব্যাচমেটের সুবাদে তারা এ রকম মানিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু যাদের একেবারে জুনিয়র ব্যাচের অধীনে কাজ করতে হচ্ছে তাদের মানসিক কষ্টটা একটু বেশি।কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনের শীর্ষ পদ সচিব। চাকরিতে প্রবেশের পর সবারই প্রত্যাশা ও স্বপ্ন ঘুরপাক খায় ওই পদটিকে ঘিরে। এর মধ্যে যারা অপেক্ষাকৃত সৎ, দক্ষ ও যোগ্য তারা সচিব হওয়ার ব্যাপারে অনেকটা আশাবাদী হয়ে ওঠেন। কিন্তু ঘাটে ঘাটে পদোন্নতি বঞ্চনার ধকল কাউকে আগেই কাবু করে ফেলে। কেউ আবার অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলেও সচিবের ট্রেন নির্ঘাৎ মিস করে ফেলেন। ফিটলিস্টের সময় কোনো একটা তকমা লেগে তিনি লাইনচ্যুত হন।মূলত এখানেই তাদের কষ্ট। তারা বলতে চান, সচিব পদে নিয়োগের জন্য ফিটলিস্ট অবশ্যই ভালো একটি উদ্যোগ। সেজন্য যারা এটি বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকেন তাদের বিচক্ষণতা ও ন্যায়পরায়ণতা বড় একটি মৌলিক বিষয়। এখানে কোনো ব্যত্যয় হলে প্রতিকার পাওয়ার বিকল্প থাকে না।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, একটি ব্যাচের সবাইকে যেমন পদোন্নতি দেয়া সম্ভব হয় না, তেমিন সচিব করাও যায় না।তাছাড়া বর্তমানে ডিসি ফিটলিস্টের মতো সচিব নিয়োগেও ফিটলিস্ট করা হয়। ফলে যারা ফিটলিস্টের বাইরে আছেন তাদের অতিরিক্ত সচিব থেকেই বিদায় নিতে হবে।এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যথাসম্ভব স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে নীতি ও বিধিবিধান মেনে কাজ করে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও কোথাও যদি জুনিয়রের অধীনে সিনিয়র ব্যাচের কর্মকর্তার পদায়ন হয়ে থাকে সেটি কঠিন বাস্তবতা ছাড়া ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে করা হয়নি।

Top