বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও এক্সপোজার ভিজিট করবেন ১২৬ কর্মকর্তা
আলোকিত বার্তা:জীব প্রযুক্তির আলু ও কাজুবাদাম-কফির চাষসহ প্রক্রিয়াকরণ শিখতে এবার বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও এক্সপোজার ভিজিট করবেন ১২৬ কর্মকর্তা।এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এ হিসাবে প্রত্যেক কর্মকর্তার পেছনে ব্যয় হবে ৭ লাখ টাকার ওপরে। তবে এক্সপোজার ভিজিট দেশের ভেতরেও হতে পারে বলে জনা গেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের পৃথক দুই প্রকল্পে এসব কর্মকর্তার বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও এক্সপোজার ভিজিটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এগুলো হলো-‘জীব প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষিবীজ উন্নয়ন ও বর্ধিতকরণ’ এবং ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প’।এ দুটি বাস্তবায়নে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ২৮৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই প্রক্রিয়াকরণ শেষ করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, সুনিদিষ্টভাবে এ প্রকল্পটির বিষয়ে এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।তবে সার্বিকভাবে বলা যায়, কৃষির প্রকল্পে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। কৃষির ক্ষেত্রে বিদেশ সফর অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আম বলেন আর ড্রাগন ফলসহ নানা দেশি ও বিদেশি ফল বলেন, এগুলো চাষে অনেক সফলতা এসেছে। আমাদের কর্মকর্তা যারা বিদেশে গেছেন সেখান থেকে চারা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। এখন সফলভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে। সুতরাং আমরা বলতে পারি এসব ব্যয় বিলাসী নয়। অপ্রয়েজনীয় হলে আমরা এমন ব্যয় প্রস্তাব করতাম না।
সূত্র জানায়, ‘জীব প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষিবীজ উন্নয়ন ও বর্ধিতকরণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭২ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় ৯ জন কর্মকর্তার বৈদেশিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৮ লাখ ১৮ হাজার টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে প্রত্যেক কর্মকর্তার পেছনে ব্যয় হবে প্রায় ৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। আগামী একনেকে অনুমোদন পেলে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)।বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এ ধরনের ব্যয় অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। কেননা আলু চাষ এমন কী প্রযুক্তিগত বিষয় যা দেশে থেকে জানা সম্ভব নয়। এজন্য আবার বিদেশে যেতে হবে প্রশিক্ষণ নিতে। পরিকল্পনা কমিশনকে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।এ প্রসঙ্গে বিএডিসি’র পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান ফেরদৌস রহমান বলেন, মূলত টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে এসব বীজ উৎপাদন করা হবে। যেগুলো ভাইরাসমুক্ত থাকবে। অনেক উন্নত মানের বীজ হবে এগুলো। এ প্রযুক্তি থেকে উৎপাদিত আলু আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারব। তাই প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনে যারা বিদেশে যাবেন তারা সবাই বিজ্ঞানী যাবেন। তাদের জ্ঞান কাজে লাগবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বৈদেশিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে বলেই রাখা হয়েছে।প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিদ্যমান তিনটি টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরিতে ২০২৪ সালের মধ্যে আলুর ২০ লাখ অনুচারা উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের বীজ আলুর চাহিদা পূরণ করে আমদানিনির্ভরতা হ্রাস ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা। উদ্যান জাতীয় ফসলের ৫০ হাজার অনুচারা উৎপাদন করে বিএডিসির বিদ্যমান উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্র ও এগ্রোসার্ভিস সেন্টারে সরবরাহ করা হবে। সিড হেলথ ও মলিকুলার ল্যাবরেটরিতে বীজের রোগব্যাধি শনাক্তকরণ ও বিএডিসির বিভিন্ন ফসলের কৌশলসম্পদ বিশ্লেষণ, বিশুদ্ধকরণ, উন্নয়ন ও জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীব প্রযুক্তি, টিসু কালচার, ফসল উৎপাদনের কৌশল ইত্যাদি বিষয়ে সর্বাধুনিক এবং সর্বশেষ প্রযুক্তির বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের ৩০০ জন কর্মকর্তা ও ৫ হাজার ৩১০ জন কৃষককে জ্ঞান উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
এদিকে ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই)। এ প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও এক্সপোজার ভিজিটের ব্যবস্থা রাখা হয়ছে ১১৬ জন কর্মকর্তার। এজন্য ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ডিএই অংশে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও এক্সপোজার ভিজিট করবেন ১২ ব্যাচে মোট ১০৬ জন। এর মধ্যে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ নেবেন ৭ ব্যাচে ৫৬ জন এবং এক্সপোজার ভিজিট করবেন পাঁচ ব্যাচে ৫০ জন। এসব সফরে ব্যয় হবে ৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এছাড়া বিএআরআইর অংশে ১০ জন কর্মকর্তার বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য রাখা হয়েছে এক কোটি ২২ লাখ টাকা। প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে-কাজুবাদামের দুই হাজার ২৫০টি প্রদর্শনী, কফি প্রদর্শনী পাঁচ হাজার ২৫০টি এবং কৃষক প্রশিক্ষণ ৪৯ হাজার ৫০০ জন।এছাড়া ৪৮০ জন কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, এক্সপোজার ভিজিট, ২০টি উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ, এক হাজার ৩৫০ সেট কৃষক গ্রুপকে কফি প্রসেসিং যন্ত্রপাতি সরবরাহ, রাঙামাটিতে কাপ্তাই হর্টিকালচার সেন্টারের একটি অফিস ভবন, ৫০০টি পার্বত্য অঞ্চলে সেচ সুবিধা দেওয়ার জন্য সোলার ইরিগেশন সেটআপ, কাজুবাদামের উচ্চফলনশীল নতুন দুটি জাত উদ্ভাবন এবং ২৫ হাজার জার্মপ্লাজম সংগ্রহসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাকির হোসেন আকন্দ যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের প্রকল্পে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।কেননা ‘থাইল্যান্ড কাজুবাদাম উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করছে। আমরা যদি সেখানে গিয়ে চারা রোপণ থেকে শুরু করে বাদাম উৎপাদন এবং তা সংগ্রহের পর প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিতে পারি তাহলে দেশে কাজুবাদাম ও কফি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।সেজন্যই কিছু বিদেশ সফর রাখা হয়েছে। এখন তো পাহাড়ি অঞ্চলে কাজুবাদাম ও কফি চাষ হচ্ছে। কিন্তু প্রক্রিয়াকরণ না জানায় সেগুলো কাঁচা অবস্থায়ই রপ্তানি করা হচ্ছে। এতে কম লাভ হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক্সপোজার ভিজিট বিদেশে নাও হতে পারে। এগুলো দেশেও হতে পারে।