সাবেক এমপি হাবিবসহ ৫০ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা
আলোকিত বার্তা:দেড় যুগ আগে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় ৫০ আসামির সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের তৎকালীন সংসদ-সদস্য বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব এবং বিএনপিকর্মী আরিফুর রহমান ও রিপনকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া কলারোয়া উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের বাচ্চুকে ৯ বছরের কারাদণ্ড এবং বাকি ৪৬ জনকে ২ থেকে ৭ বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম হুমায়ুন কবীর বৃহস্পতিবার সকালে জনাকীর্ণ এজলাসে মামলার রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা ৩৪ জন রায়ের সময় আদালতে ছিলেন। বাকি ১৬ জনকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার কাজ চলে।
দণ্ডিত অন্যরা হলেন- কলারোয়ার সাবেক মেয়র গাজি আক্তারুল ইসলাম, কেড়াগাছির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন, কয়লার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রকিব মোল্লা, যুগিখালির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম, বিএনপি নেতা তামিম আজাদ মেরিন, অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, আবদুস সামাদ, তুলশিডাঙ্গার জাভিদ রায়হান, ট্রলি শহিদুল ও মনিরুল ইসলাম, কলারোয়ার ইয়াসিন আলি, রায়টার মো. ইয়াসিন আলি ও ময়না, কয়লার শেলী, কনক, তুলশিডাঙ্গার টাইগার খোকন, রিপন, তুলশিডাঙ্গার আবদুল মজিদ, তুলশিডাঙ্গার খালেদ মঞ্জুর রোমেল ও রকিব, বহুরার তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, শুভংকরকাটির মাজহারুল ইসলাম, কেড়াগাছির আবদুল মালেক, বাটরার আবদুর রব, শেখ কামরুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, ক্ষেত্রপাড়ার বিদার হোসেন, গাজনার সোহাগ হোসেন, ঝিকরার মাহফুজ মোল্লা, ওফাপুরের মাহফুজুর রহমান, আরিফুর রহমান মঞ্জু, ঝিকরার গোলাম রসুল ও রিংকু, সিংহলালের শাহাবুদ্দিন, বৈদ্যপুরের সিরাজুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, পুটুনির আবদুস সামাদ, গদখালির মফিজুল ইসলাম, হুলহুলিয়ার হাসান আলি, ময়না, দরবাসার জহুরুল ইসলাম, আবদুল মালেক, মাজহারুল হক, নজরুল ইসলাম, ইলিশপুরের আলাউদ্দিন, কয়লার সাহেব আলি ও রামকৃষ্ণপুরের শাহিনুর রহমান। দণ্ডিতরা সবাই বিএনপির নেতাকর্মী।আসামিদের মধ্যে পলাতক আছেন- আব্দুল কাদের বাচ্চু, মফিজুল ইসলাম, আলাউদ্দিন, খালেদ মঞ্জুর রোমেল, আরিফুর রহমান, রিপন, ইয়াছিন আলী, রবিউল ইসলাম, মাজাহারুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, আব্দুর রব, সঞ্জু, নাজমুল হোসেন, জাবিদ রায়হান লাকী, কণক ও মাহাফুজুর রহমান। সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, শাহিন মৃধা এবং সাতক্ষীরার পিপি অ্যাডভোকেট আবদুল লতিফ। আসামি পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট শাহানারা আক্তার বকুল, অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ, অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান পিন্টু, অ্যাডভোকেট তোজাম্মেল হোসেন, অ্যাডভোকেট আবদুস সেলিম প্রমুখ।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এসএম মুনীর সাংবাদিকদের বলেন, সাক্ষীদের বক্তব্যে সব আসামি দোষী প্রমাণিত হয়েছেন। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। আসামিদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর প্রাণে বেঁচে যাওয়া তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার প্রাণনাশে বারবার হামলা হয়। কলারোয়ার ঘটনা ছিল তারই অংশ।আর আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহানারা আক্তার বকুল ও আব্দুল মজিদ বলেন, রায়ে আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। তাই উচ্চ আদালতে যাব। তারা বলেন- মামলার এজাহার, পুলিশের অভিযোগপত্র এবং সাক্ষীদের জবানবন্দির মধ্যে তথ্যগত ব্যাপক গরমিল ও অসংলগ্নতা রয়েছে। সাক্ষীরা কোনোভাবেই আসামিদের দোষী প্রমাণ করতে পারেননি। ঘটনার দিন সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব কলারোয়ায় উপস্থিত ছিলেন- এমন কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি সাক্ষীরা।২০০২ সালের ৩০ আগস্ট এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকে তিনি মাগুরায় ফিরছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে কলারোয়ায় পৌঁছাতেই সড়কে একটি বাস আড় করে দিয়ে তার পথরোধ করা হয়। এরপর শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টায় তার গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। গাড়িবহরে থাকা নেতাকর্মীদের চেষ্টায় শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও তার সফরসঙ্গী অনেকে আহত হন।
এ ঘটনায় কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন ২৭ জনের নামোল্লেখ এবং ৭০ থেকে ৭৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে কলারোয়া থানায় মামলা করেন। প্রথমে থানায় মামলা না নেয়ায় বাদী নালিশি আদালতে যান। পরে মামলাটি খারিজ হয়ে গেলে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর হাইকোর্টের নির্দেশে ফের মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা কলারোয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সফিকুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন। কিন্তু এক আসামি হাইকোর্টে মামলা বাতিলের আবেদন করলে আদালত স্থগিতাদেশ দেন। তাতে মামলার কার্যক্রম ঝুলে থাকে দীর্ঘদিন। হাইকোর্ট গত বছর অক্টোবরে ৩ মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিলে নভেম্বরে ফের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।রায় ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগ আনন্দ মিছিল বের করে। এতে নেতৃত্ব দেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম ও অধ্যক্ষ আবু আহমেদ। তারা রায়কে যুগান্তকারী উল্লেখ করে বলেন, এ রায়ের মধ্যদিয়ে সাতক্ষীরাবাসী কলঙ্কমুক্ত হলো। অপরদিকে রায় প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি। তাদের দাবি, এ রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। রায় ঘিরে সকাল থেকেই আদালত এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।