পৌরসভায় মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী - Alokitobarta
আজ : রবিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পৌরসভায় মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী


আলোকিত বার্তা:পিরোজপুর সদর, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা ও নারায়ণগঞ্জের তারাব-এ চার পৌরসভায় মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে এসব স্থানে বিএনপির একজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। বাকি তিনজনের মনোনয়নপত্রে তথ্য গরমিলের কারনে প্রার্থিতা বাতিল হয়।এ ঘটনাকে ‘রহস্যজনক’ আখ্যা দিয়ে স্থানীয় নেতারা কেন্দ্রের কাছে চিঠি দিয়েছেন। এতে ওই চার প্রার্থীর বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ করেছেন তারা। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তদন্ত করছে বিএনপি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।এ চার পৌরসভার তৃণমূল নেতারা জানান, কেউ কেউ দলীয় মনোনয়নে নির্বাচনে অংশ নেয় আবার শেষ মুহূর্তে ভোট থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করেন। অনেকেই আছে মনোনয়নপত্র বাতিল হলে তার বিরুদ্ধে আপিলও করে না। এসব চলতে পারে না। ‘হামলা-মামলার ভয়ভীতি প্রদর্শন’ এগুলোকে তারা অজুহাত হিসেবে দাঁড় করায়। প্রতিটি নির্বাচনেই বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হাতে নির্যাতন, হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন। এটা নতুন কিছু নয়। তাই বলে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে থাকবে না। আসলে তারা ক্ষমতাসীন দলের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ধানের শীষের মনোনয়ন নিয়েছেন। পরে মনোনয়নপত্রে ইচ্ছে করে ভুল তথ্য দিয়েছে যেন বাতিল হয়ে যায়। তৃণমূলের নেতারা মনে করেন, এর সঙ্গে তাদের ব্যাপারে যারা সুপারিশ করেছেন সেই নেতারাও জড়িত। এটি পূর্ব পরিকল্পনা করেই হয়েছে। অবশ্য প্রার্থীরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক জানান, এ চার পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে বলে একটি অজুহাত দাঁড় করানো হয়েছে। কিন্তু সব জেনেশুনেই তো এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে। তাহলে এমন প্রার্থীকেই পৌর ও জেলার নেতারা সুপারিশ করতেন যারা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে নির্বাচনে অংশ নিতেন। প্রতিটি পৌরসভায় দলের তো একাধিক প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নেই যা তৃণমূল নেতাদের কাছে খারাপ বার্তা গেছে। এতে দলের ক্ষতি হয়েছে। তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,এ চার প্রার্থীর বিষয়টি কেন্দ্র খতিয়ে দেখবে। যেভাবে সারা দেশে নির্বাচন হচ্ছে, তাতে জনগণের মতামত প্রকাশিত হয় না। দেশে এখন গণতন্ত্র নেই, কথা বলার অধিকার নেই। বর্তমান অযোগ্য নির্বাচন কমিশনের কারণে নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলেছে। যে কারণে আপিলের প্রতিও অনাগ্রহ প্রার্থীদেরতিনি বলেন, তারপরও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতান্ত্রিক যে সুযোগ বা স্পেস তা ব্যবহার করতে চাই। আমরা দেশে গণতন্ত্র চাই, দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারাবো পৌরসভা নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন পান জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন। তিনি ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের সমর্থককে নিজের সমর্থক হিসেবে দেখিয়ে নির্বাচন কমিশন বরাবর মনোনয়ন দাখিল করেন বলে অভিযোগ উঠে। একই সমর্থনকারী দুই মেয়র প্রার্থীর হওয়ায় নাসির উদ্দীনের মনোনয়ন বাতিল হয়।এ ঘটনার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। এ নিয়ে নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারাবো পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান ভূঁইয়া।অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাসির উদ্দীনবলেন, এসব মিথ্যা ও বানোয়াট। একই ব্যক্তি দুই প্রার্থীর সমর্থনকারী কিভাবে হন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিলবর বিএনপির একজন কর্মী। তিনি আমার কাগজে স্বাক্ষর করেছেন। যারা ক্ষমতায় আছেন তারা আমার কাগজ ইউএনও অফিস থেকে সংগ্রহ করেন। এবং তা ফটোকপি করে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করার জন্য কর্মচারীর নামে দিয়েছে। পরে যাচাই-বাছাই না করেই দুই প্রার্থীর সমর্থনকারী একই নাম পাওয়া গেছে মর্মে বাতিল করা হয়। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিলও করেছিলাম। আপিলের রায় এখনও ঝুলে আছে।পিরোজপুর সদর পৌরসভায়ও বিনা প্রদ্বিন্দ্বিতায় মেয়র হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এ পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী ছিলেন জেলার যুগ্ম সম্পাদক শেখ শহীদুল্লাহ। হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। তার বিরুদ্ধেও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় নেতারা।জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সভাপতি গাজী নুরুজ্জামান বাবুলবলেন, আঁতাতের অভিযোগ সত্য নয়। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আমাদের প্রার্থী যেন শেষ পর্যন্ত থাকে। এমনকি তাকে অনলাইনে আপিলের জন্যও বলেছিলাম, সে করেনি। যা কেন্দ্রকেও আমরা রেজুলেশন আকারে জানিয়েছিলাম।শেখ শহীদুল্লাহ বলেন, আপিল করতে পারিনি কারণ আমাকে বাসায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। আমার পরিবারের ওপর হুমকি ছিল। আমার বিরুদ্ধে যাদি অর্থিক লেনেদেনের কোনো অভিযোগ খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে দল থেকে বহিষ্কার করা হোক।সিরাজগঞ্জের কাজীপুর পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী পৌর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আল আমিন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। তার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ।জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চুবলেন, দলের প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন, অথচ আমাকেও জানায়নি। পরে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নেতাদের আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন প্রত্যাহার করা হলো। তারা আমাকে জানান, ‘আল আমিনের ওপর চাপ রয়েছে, ওর বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেবে।’ যদিও আমরা আওয়ামী লীগকে দোষ দেই। কিন্তু বিএনপির প্রার্থী কারা হচ্ছে তাও তো দেখতে হবে।
আল আমিনবলেন, আর্থিক লেনেদেনে বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছি।একই অভিযোগ পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী আবদুল কাদেরের বিরুদ্ধে। মনোনয়নপত্রে তথ্য গরমিলের কারণে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়। কারও সঙ্গে আঁতাত কিংবা টাকার লেনদেনের অভিযোগ সঠিক নয় বলে যুগান্তরের কাছে দাবি করেছেন ভাঙ্গুরা থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবদুল কাদের।

Top