ইংরেজি মাধ্যমে সেশন ফি আদায় অবৈধ
আলোকিত বার্তা:দেশের সব ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে ওঠার সময় পুনরায় ভর্তি ও সেশন ফি’র নামে পুনঃভর্তি ফি, সেশন ফি বা একাডেমিক ফি বা অন্য কোনো নামে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অর্থ আদায় (প্লে-গ্রুপ থেকে ‘এ’ লেভেল পর্যন্ত) সংক্রান্ত বিধিমালা বেআইনি ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।তবে, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে দেশের স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসসহ সব জাতীয় দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের নির্দেশনার বিষয়টি স্থগিত করেননি আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের আদেশের কথা সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল পক্ষের আইনজীবী আনিসুল ইসলাম।এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোর লিভ টু আপিল গ্রহণ করে রোববার (৩ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।
আদালতে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আনিসুল হাসান।এর আগে ২০১৭ সালের ২৫ মে হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন রায় ঘোষণা করেছিলেন।সে সময় দেশের সব ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে ওঠার সময় পুনরায় ভর্তি ও সেশন ফি’র নামে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অর্থ আদায় বেআইনি ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন আদালত। আজ ওই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানির পর আপিল বিভাগ তা স্থগিত করেন।২০১৭ সালের ২৫ মে দেশের সব ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের শিক্ষার্থীদের সেশন চার্জ বাতিল করে ৩ মাসের মধ্যে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এছাড়া বাংলা ভাষা ও দেশীয় সংস্কৃতি চর্চার ওপর জোর দিতেও নির্দেশ দেন আদালত। রায়ে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসসহ সব জাতীয় দিবস যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালনের নির্দেশও দেয়া হয়। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সব ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে সার্কুলার পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়।
এছাড়া আদালত রায়ে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দেন।
রায়ের নির্দেশনাগুলো হলো- বেসরকারি স্কুল নিবন্ধন অধ্যাদেশ ১৯৬২ অনুসারে স্কুলগুলোতে অভিভাবকসহ শিক্ষক প্রতিনিধি নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করতে হবে। শিক্ষক ও স্টাফ নিয়োগের ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাচাই বাছাই করে নিয়োগ দিতে হবে। পেছনের দরজা দিয়ে কাউকে নিয়োগ দেয়া যাবে না। এতে মালিকপক্ষের কোনো প্রাধান্য থাকবে না।এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে ওঠার সময় কোনো প্রকার পুনঃভর্তি ফি ও সেশন চার্জ নেয়া যাবে না। কোনো ধরনের ফি বাড়াতে হলে অভিভাবকদের মতামত নিয়ে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।ম্যানেজিং কমিটি ভর্তি ফি, টিউশন ফি নির্ধারণ করবে। নির্ধারিত ভর্তি ফি কেন নেওয়া হচ্ছে তাও অভিভাবকদের জানাবে। মাসিক টিউশন ফি বাড়াতে হলে অভিভাবকদের মতামত নিতে হবে। ফি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কমিটিতে যিনি অভিভাবক প্রতিনিধি থাকবেন, তার মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। তার মতামত উপেক্ষা করতে হলে, যুক্তিসংগত কারণ দেখাতে হবে।
রায়ে বলা হয়, ব্যবস্থাপনা কমিটিই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দেবে। শিক্ষক যে বিষয়ের ওপর ডিগ্রি অর্জন করেছেন, সে বিষয় পড়াবেন। সব প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।জাতীয় দিবসসমূহ যথাযথ মর্যাদায় পালনের পাশাপাশি দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী রবীন্দ্র-নজরুল, বঙ্গবন্ধুসহ স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারীদের জীবনী নিয়ে অনুষ্ঠান করতে হবে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা বিষয়ে পড়া, লেখা ও বলায় বিশেষ গুরুত্ব দিতেও নির্দেশ দেন আদালত।পরে হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে গ্রীনডেল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল কর্তৃপক্ষ। ওই আপিলের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন আদালত।মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জাভেদ ফারুক শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, পুনঃভর্তি ফি ও সেশন চার্জ বিষয়ে শিক্ষা বিধিমালা গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
রিটে শিক্ষা সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদফতরের মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিফতরের মহাপরিচালক ও দেশের সকল ইংরেজি মাধ্যম স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিবাদী করা হয়।এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত একই বছরের ২৩ এপ্রিল ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্লে গ্রুপ থেকে ‘এ’ লেভেল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, পুনঃভর্তি ফি ও সেশন চার্জ বিষয়ে কেন শিক্ষা বিধিমালা গঠন করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, পুনঃভর্তি ফি ও সেশন চার্জ গ্রহণের ক্ষেত্রে বিবাদীদের মনিটরিং সেল গঠনের কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়।বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) শিক্ষা পরিসংখ্যান ২০১৬ অনুযায়ী, দেশে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে মোট ১৫০টি। এগুলোতে ১ লাখ ৯৩ হাজার ২৭৪ জন শিক্ষার্থী পড়ছে। তবে বাস্তবে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরও বেশি হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেতন ও বিভিন্ন ধরনের ফি নিয়ে নানা অভিযোগ আছে।