বিদ্রোহী প্রার্থীদের দমাতে ফের তৎপর হয়ে উঠেছে - Alokitobarta
আজ : শনিবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিদ্রোহী প্রার্থীদের দমাতে ফের তৎপর হয়ে উঠেছে


আলোকিত বার্তা:চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) স্থগিত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর ঘর গোছানো শুরু করেছে আওয়ামী লীগ।এর অংশ হিসেবে প্রথমেই কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দমাতে ফের তৎপর হয়ে উঠেছে দলটি।প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে না গেলে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।শুক্রবার রাতে দলীয় মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসায় নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির এক সভায় এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে স্থানীয় নেতারা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। সভায় চসিক নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি ও করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়। এতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ইস্যুটি জোরালোভাবে উঠে আসে। তাদের নিষ্ক্রিয় থাকতে বলা হয়েছে। না হলে বহিষ্কারের মতো কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ কেন্দ্রে পাঠানো হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী দমনের নতুন উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।কেননা, নির্বাচন স্থগিত হওয়ার আগেও এ ধরনের একাধিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। তখন এ নিয়ে দফায় দফায় আলাপ-আলোচনা হলেও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনড় অবস্থানের কারণে ব্যর্থ হয়।বিদ্রোহী প্রার্থীদের বেশিরভাগই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থেকে যান। সমঝোতা করতে ব্যর্থ হয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও হাল ছেড়ে দেন একসময়। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে এক ধরনের নমনীয় মনোভাব পোষণ করা হয় তখন। ফলে অনেক ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত মূল প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন বিদ্রোহী প্রার্থী। কয়েকটি ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।জানা গেছে, ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রার্থীর মৃত্যুজনিত কারণে ৪টিতে পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নির্বাচন হবে।বাকি ওয়ার্ডগুলোয় আগের প্রার্থীরাই বহাল থাকবেন। আগে মনোনয়ন প্রত্যাহারের পরও ৩৫টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। একক প্রার্থী ছিলেন ৬টিতে। কোনো কোনো ওয়ার্ডে একাধিক বিদ্রোহী ছিলেন। সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কয়েকটিতেও বিদ্রোহী প্রার্থী থেকে যান। এসব প্রার্থীর আর মনোনয়ন প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। তাই তাদের মাঠের প্রচার-প্রচারণা থেকে নিষ্ক্রিয় করে রাখার কৌশল নিয়েই এগোচ্ছে নগর আওয়ামী লীগ। তবে মেয়র পদে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই।
দলীয় সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে ভাবা হচ্ছে। নানা কারণে তারা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। প্রথমত, বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে অনেক ওয়ার্ডেই মূল প্রার্থীর জয় কঠিন হয়ে উঠতে পারে। ওয়ার্ড পর্যায়ে দ্বিধাবিভক্তি থাকলে তার প্রভাব দলীয় মেয়র প্রার্থীর ক্ষেত্রেও পড়তে পারে। এমনও আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৌশল হিসেবে জামায়াত-বিএনপি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে ভোট দিয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া অন্তর্কোন্দল বাড়ার আশঙ্কা তো রয়েছেই।নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ বলেন, ‘শুক্রবারের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে আসন্ন চসিক নির্বাচন নিয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। কর্মীদের সংগঠিত করে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। প্রয়োজনে কেন্দ্র কমিটিগুলোকে আরও উজ্জীবিত করার তাগিদ দিয়েছেন। কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থী যারা আছে, তাদের ডেকে বুঝিয়ে নিষ্ক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। হানিফ ভাই বলেছেন, এরপরও যারা কথা শুনবে না, তাদের বিরুদ্ধে রেজুলেশন করে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠাবেন। আমরা কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।নোমান আল মাহমুদ জানান, এ পর্যায়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। দল সমর্থিত মূল প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে বিদ্রোহীদের নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে হবে।এর আগেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক ব্যর্থ হয়েছিল। এবার সফল হবে কি না-জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘তখন সময় কম ছিল। এখন এক মাসেরও বেশি সময় আছে। আশা করছি, চসিক নির্বাচন পরিচালনায় দলের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ সংশ্লিষ্টরা বিষয়টির সুরাহা করতে সক্ষম হবেন।চলতি বছরের ২৯ মার্চ চসিক নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিডজনিত পরিস্থিতির কারণে সপ্তাহ খানেক আগে তা স্থগিত করা হয়। নির্বাচন কমিশন স্থগিত নির্বাচনের ভোট ২৭ জানুয়ারি গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছে।

Top