চলতি অর্থবছরের উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনে নিয়ম-নীতি মানা হচ্ছে না - Alokitobarta
আজ : রবিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চলতি অর্থবছরের উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনে নিয়ম-নীতি মানা হচ্ছে না


আলোকিত বার্তা:চলতি অর্থবছরের উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনে নিয়ম-নীতি মানা হচ্ছে না।এর মধ্যে রয়েছে- মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো(এমটিবিএফ)অনুসরণ না করা,অগ্রাধিকার তালিকার বাইরেও প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি এবং নির্দেশনার অমান্য করে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি। আবার কোনো কোনো প্রকল্পে বাড়ানো হচ্ছে মেয়াদও। শুধু তাই নয়, নিয়মবহির্ভূতভাবে এডিপিতে (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) যুক্ত করা হচ্ছে অনেক প্রকল্প। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।উল্লিখিত অনিয়ম দূর করে শৃঙ্খলা ফেরাতে ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সেই চিঠির সূত্র ধরেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পরিকল্পনা কমিশনকে চিঠি দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম শনিবার বলেন,এমটিবিএফ অর্থ হচ্ছে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের চলতি অর্থবছরের প্রকৃত বরাদ্দ উল্লেখ থাকে। এর সঙ্গে পরবর্তী ২ বছরের জন্য বরাদ্দের প্রাক্কলন দেয়া হয়। যাতে মন্ত্রণালয়গুলো তাদের ব্যয়ের সীমা সম্পর্কে অবহিত হতে পারে এবং সেই অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে। এটি জাতীয় সংসদে অনুমোদন পাওয়া একটি নিয়ম। এমটিবিএফ সিলিং অমান্য করা কোনোভাবেই উচিত নয়। এতে একদিকে যেমন আর্থিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়, অন্যদিকে তেমনি পরিকল্পনা শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ হিসেবে গণ্য হয়। ফলে আর্থিক সংকট দেখা দিতে পারে। শেষ পর্যন্ত অবশ্যিকভাবে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে। নতুন প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে যত দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যায় ততই মঙ্গলজনক। কেননা এতে করে অপ্রয়োজনীয় বা অহেতুক প্রকল্প গ্রহণের প্রবণতাও বন্ধ হয়ে যাবে।বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন পর্যায়েই যদি বিশৃঙ্খলা থাকে তাহলে বাস্তবায়ন থেকে সব পর্যায়েই এ ধারাবাহিকতা থাকবে। কেননা শুরুতেই যদি নিয়ম মানা না হয় সেক্ষেত্রে পরে প্রকল্পের আওতায় দরপত্র কার্যক্রম, ক্রয় কার্যক্রমসহ প্রত্যেক ধাপে ধাপে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে মানসম্মত প্রকল্পা বাস্তবায়ন হবে না। বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়ে মেয়াদ বৃদ্ধি, প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি এবং সেই প্রকল্প থেকে কাক্সিক্ষত সুফল মিলবে কিনা সেটি সংশয়ের মধ্যে পড়বে। তাই শুধু চিঠি চালাচালি করে দায় এড়ালে হবে না। কার্যকর এবং কঠোর উদ্যোগ থাকতে হবে।সূত্র জানায়, উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদনে শৃঙ্খলা ফেরাতে ২১ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সেখানে চারটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হল, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে এমটিবিএফ সিলিং যথাযথ বিবেচনায় নিচ্ছে না। এছাড়া যথাযথ নির্দেশনা থাকার পরেও মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে চলতি অর্থবছরের উচ্চ অগ্রাধিকার তালিকার বাইরেও প্রকল্প প্রস্তাব করা হচ্ছে। সেসব প্রস্তাব আবার প্রক্রিয়াকরণ করছে পরিকল্পনা কমিশনের বিভিন্ন সেক্টরও। এছাড়া কোভিড-১৯ এর কারণে এনইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেসব প্রকল্পের শুধু ১ বছর মেয়াদ বাড়ানোর কথা থাকলেও কিছু কিছু প্রকল্প সংশোধন করে ব্যয়ও বাড়ানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে চলতি অর্থবছরের এডিপিতে ড্রপ প্রকল্প (যেগুলো গত অর্থবছরে শেষ হবে বলে চলতি অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়নি) সংশোধন করে পুনরায় এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের বিভিন্ন সেক্টরে চিঠি দেয় কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ। সেখানে বলা হয়, ‘১৯ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভা এবং ১৩ আগস্ট পরিকল্পনামন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অপর একটি সভার সিদ্ধান্ত মানা হচ্ছে না। দুটি সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে, নতুন প্রকল্প গ্রহণ বা অনুমোদনে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে চলমান প্রকল্পের দায় এবং এমটিবিএফ সিলিং ও প্রক্ষেপণ বিবেচনায় নিতে হবে। এছাড়া কোভিড-১৯ এর কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সমাপ্তর জন্য নির্ধারিত থাকার পরেও ১৪১ প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। তাই এসব প্রকল্প শেষ করার জন্য ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই শুধু ১ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এমটিবিএফ প্রক্ষেপণ বিবেচনায় নিয়ে চলতি অর্থবছরের এডিপিতে অননুমোদিত তালিকার উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ৫৪৬টি প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ করতে হবে। এসব নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।এ প্রসঙ্গে প্রকল্প তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সাবেক সচিব আবুল মনসুর মো.ফয়েজ উল্লাহ বলেন,অবশ্যই এমটিবিএফ মানা উচিত। না হলে আর্থিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে পারে। তাছাড়া কোভিডের কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব একটা আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেখানে উচ্চ অগ্রাধিকার বাদ দিয়ে যেনতেন প্রকল্প প্রস্তাব কোনোভাবেই কাম্য নয়। কেননা এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত মেগা প্রকল্প এবং এডিপিতে উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো। নিয়ম না মানলে এক সময় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের প্রকল্পেই অর্থ সংকট দেখা দিতে পারে। নতুন প্রকল্প অনুমোদনে পরিকল্পনা কমিশনকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। সেই সঙ্গে অর্থ বিভাগও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। কম গুরুত্বের প্রকল্প একনেকে উপস্থাপন করা হলে বিষয়টি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সামনে তিনি তুলে ধরতে পারে। সেই সঙ্গে বর্তমান আর্থিক সামর্থ্যরে বিষয়টিও উপস্থাপন করতে পারে। তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।

Top