বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতিবিহীন কোনো টিকা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার
আলোকিত বার্তা:বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা কোম্পানি কোভিড-১৯ টিকা তৈরি করলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতিবিহীন কোনো টিকা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।বুধবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভায় সভাপতিত্ব করেন।করানা মহামারীতে সারা বিশ্ব যখন বেহালা দশা তখন শুরুতে বিনা খরচে টিকা পাওয়া যাবে না ধরে নিয়ে তা কেনার জন্য ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার।মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান,দেশে সবাইকে না পারলেও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।বিশ্বে গত ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় মহামারী ডেকে এনেছে নতুন করোনাভাইরাস। এতে ১০ লাখের বেশি মানুষ ইতোমধ্যে মারা গেছে। বাংলাদেশেও মৃত্যুর সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে।এই রোগের কোনো ওষুধ এখনো আবিষ্কৃত না হওয়ায় টিকার দিকেই চেয়ে আছে বিশ্ববাসী। রাশিয়া ও চীন ইতোমধ্যে টিকা তৈরি করে তার প্রয়োগও শুরু করেছে। আরো কয়েকটি দেশের টিকাও রয়েছে চূড়ান্ত পর্যায়ে। তবে এর কোনোটা এখনো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি।বুধবারের বৈঠকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বা টিকা সংগ্রহের বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ মন্ত্রিসভাকে জানায়।মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম বিশ্বে টিকা তৈরির অগ্রগতি এবং টিকা পেতে বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন।তিনি বলেন, ভ্যাকসিনের জন্য বিভিন্ন দেশে উঠেপড়ে লেগেছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে ৪৬টি ভ্যাকসিনের, আর প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে ৯১টি ভ্যাকসিনের।যারা টিকা তৈরি করছে, শুরু থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে জানিয়েই মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আমাদের একটা বেইজলাইন হলো ডব্লিউএইচও যেটাকে রিকগনাইজ না করবে, সেটাকে আমরা একসেপ্ট করব না।
তিনি বলন, ‘এটাকে বেজলাইন ধরে আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ডিপার্টমেন্টগুলো এবং আমাদের ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানি পার্সোনালি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এখানে প্রোডাকশনের জন্য।স্বাস্থ্য বিভাগ পদক্ষেপের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত ৪ জুন যুক্তরাজ্যের উদ্যোগে লন্ডনে ‘গ্লোবাল ভ্যাকসিন সামিট-২০২০’অনুষ্ঠিত হয়, এই সামিটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও বার্তা প্রেরণ করেন, বিশেষ করে গ্যাভির (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমুনাইজেশন) পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন পাওয়ার যোগ্য দেশ হিসেবে ঘোষণার যে আবেদন জানানো হয়, তা গ্রহণ করা হয়েছে।চীনের বেসরকারি কোম্পানি সিনোভ্যাকের টিকার বিষয়ে তিনি বলেন,সরকারের কাছে আইসিডিডিআরবি আবেদন জানানোর পর তা অনুমোদন করা হয়েছে। এখানে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের একটা ট্রায়ালের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে।বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হলে টিকা কম দামে পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে বলে জানান তিনি।ভারতের টিকার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,আরেকটি হচ্ছে ভারতের বায়োটেক, সেটা তারা আমাদের এখানে ট্রায়াল করার আগ্রহ দেখিয়েছে।এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও ভ্যাকসিন কার্যক্রম এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ৩৬ জনের প্রশিক্ষণের প্রস্তাব করেছে। অনলাইনে অরিয়েন্টেশন ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।ফ্রান্স ও বেলজিয়ামভিত্তিক সানোফি অ্যান্ড জিএসকে উদ্ভাবিত টিকা উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের দুটি ওষুধ কোম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানান তিনি।মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, টিকা কখন কবে বাজারে আসবে, সেটা সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কোম্পানি বলতে পারছে না।আমি যে তালিকাটা দেখলাম, ২০২১ সালের এপ্রিল-মে-জুনের আগে মার্কেটে আসবে বলে তারা নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। যদি এর আগে সাকসেসফুল হয়ে যায়, তবে ইনশাল্লাহ সবার সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ আছে।” যোগ করেন তিনি।করোনাভাইরাস টিকা পেলেও তা দেশে সবাই বিনামূল্যে পাচ্ছেন না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন,ভ্যাকসিনের প্রাইসটা তো এখনো ফিক্সড যায়নি।সব কিছু দেখা যাক।তবে গরিব মানুষদের বিনামূল্যে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান খন্দকার আনোয়রুল।